বন্দর ও মেরিটাইম অংশীজনদের ডেটা বিনিময়

অনড় কোনো তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিজ্ঞতার মুখে আমাদের কতটা পড়তে হয়? ধরুন একটা ছাপা কাগজ, যাতে লিপিবদ্ধ আছে কোনো বন্দরে জাহাজের আগমন ও ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময়। কিংবা ধরুন বার্থিংয়ের জন্য সংরক্ষিত তালিকা। এসব তথ্যসংবলিত কাগজটি যতক্ষণে ছাপা হচ্ছে, ততক্ষণে হয়তো তথ্যগুলো আর নতুন থাকছে না।

ডিজিটাল উদ্ভাবন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিসরে গৃহীত হচ্ছে। রিয়েল-টাইম ডেটায় এই প্রবেশ আরো কিছু অন্বেষণের সুযোগ এনে দিচ্ছে, যা কার্যক্রমের প্রথাগত ধরনকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। আগামী দিনের কোম্পানির সাফল্য তাই কেবল স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে নিহিত নেই। প্রথাগত ভূমিকা ও পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মধ্যেও এর সাফল্য লুকিয়ে আছে।

ডিজিটাল ডেটা প্রবাহে ক্রমবর্ধমান প্রবেশগম্যতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শিল্পের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সবকিছুই এখন স্মার্ট হওয়ার দাবি করছে যেমন স্মার্ট শিপ, স্মার্ট পোর্ট, স্মার্ট কোম্পানি ইত্যাদি। বিভিন্ন পক্ষ এখন স্থানীয় ও হরিজোন্টাল তথ্য বিনিময় (কোনো প্রতিষ্ঠানের সমপর্যায়ের কর্মী, বিভাগ ও ইউনিটের মধ্যে একই তথ্য বিনিময়) কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় সামিল হচ্ছে, যাতে করে তারা তথ্য সম্পর্কে হালনাগাদ থাকার সুযোগ পায়। অনেকে এটা করলেও সেটা কি স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজেদের সক্ষম করে তোলার প্রয়োজনে, অথবা মেরিটাইম পরিবহন সেবায় সত্যিকারের সহযোগিতার ভিত্তিতে, সেই প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।

বলা যায়, মেরিটাইম পরিবহন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সেবা প্রদান সম্ভব হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না অংশগ্রহণকারীরা অর্জন ও সমস্যা, ধারণা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ এবং গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রণীত তাদের পরিকল্পনার একক পদ্ধতি তৈরি না করছে। এটা করতে হলে এ খাতের অংশীজনদের সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের কাজটা রপ্ত করতে হবে।

মেরিটাইম শিল্পের প্রকৃতি

মেরিটাইম শিল্পকে প্রায় সময়ই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ইকোসিস্টেমে আছে বহু অংশগ্রহণকারী, যাদের বেশির ভাগই একে অন্যের প্রতিযোগী। একই সাথে সুনির্দিষ্ট কিছু বাজার বা বাণিজ্যের জন্য তারা বিভিন্ন জোটেরও শরিক। এভিয়েশন শিল্পে বিভিন্ন পক্ষ সহযোগিতার যে পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, মেরিটাইম শিল্পে সে ধরনের একক কোনো কর্তৃপক্ষের অভাব রয়েছে। এটাই এই শিল্পের বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য বিনিময়কে আবশ্যক করে তোলে, যাতে ডিজিটাল সেবা থেকে উৎসারিত মূল্যের পুরোটা অর্জন করা যায়।

এছাড়া আধুনিক, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য মেরিটাইম সরবরাহ ব্যবস্থা সন্তোষজনকভাবে পরিচালনার জন্য যেটা দরকার হয় তা হলো সক্রিয় অংশীজনদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার স্বীকৃতি দেওয়া। নিজেদের পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে প্রত্যেকেই তাদের অগ্রগতি ও সমস্যার কথাগুলো যাতে একে অপরের সাথে বিনিময় করতে পারে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে যেটা হয়ে আসছে তা হলো তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও পরিকল্পনা জটিলতার কারণে অনেক অপারেটরই ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ নীতিতে চলছে, আদতে যা অদক্ষ ও অনির্ভরযোগ্য। সেই সাথে ব্যয়সাশ্রয়ীও নয়।

মেরিটাইম খাতে স্থাপিত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থার দিকে তাকালেও একই চিত্র দেখা যায়। ব্যবস্থাটি যারা সরবরাহ করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর কোনো ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত নয় অনেকে। এর ফলে খণ্ডিত ও বাস্তবতাবিবর্জিত অবস্থাগত ধারণার ভিত্তিতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তাতে করে অপারেটররা সম্পদের খুব কমই কাজে লাগাতে পারছে। অনেক সময় সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে।

সঠিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবস্থাগত ধারণার গুরুত্ব

স্বয়ংসম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমের অংশীজনরা প্রাপ্ত অবস্থাগত ধারণার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জোগান দেওয়া ডেটার বাইরেও অপারেটরদের কাছ থেকে আরো তথ্য ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। অবস্থাগত ধারণা এমন একটি বিষয়, তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের চাহিদা পূরণের জন্য যা অত্যাবশক। মেরিটাইম শিল্পকে প্রতিনিয়ত যেহেতু নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হচ্ছে, তাই অন্যদের সেবা দিতে অবকাঠামো ও সম্পদ কখন আলাদা করে রাখতে হবে সে-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করাটা জরুরি। এটা হতে হবে যতটা সম্ভব সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে, নতুন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ হয়।

তবে বাস্তবতা হলো অনেক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থাতেই জাহাজের আগমন-নির্গমন সময় অথবা ঠিক কোন সময়ে কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে সে সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করা হয় না। এটা নির্বিঘ্ন পোর্ট কল প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। মোটকথা, অপারেটর তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে বিভিন্ন উৎস থেকে যেসব ডেটা ব্যবহার করছে, সময়মতো কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করা সবচেয়ে জরুরি।

মেরিটাইম খাতে কানেক্টেড ডিভাইস যেমন স্মার্ট কনটেইনার এখন দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে অতিরিক্ত ও সম্পূরক ডেটা উৎসে প্রবেশগম্যতাও আগামীতে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সমহারে বাড়ছে।

পরিস্থিতিটা কেবল বন্দরে জাহাজের সঠিক সময়ে আগমন বা নির্গমন অথবা কোনো আবদ্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রিত জলপথ-সংক্রান্ত হতে পারে। তবে সামগ্রিক যে প্রয়োজন তার ভিত্তি বিভিন্ন গ্রাহকের চাহিদামাফিক সমন্বিত ও সন্তোষজনক সেবা প্রদান করা। উদাহরণ হিসেবে পোর্ট কলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন একই সময়ে একই স্থানে একই সেবার চাহিদা তৈরি হয়।

যখন এককভাবে কোনো ঘটনা সম্পর্কে আগাম ধারণা করা হয় তখন প্রাক্কলিত সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে কিছু সম্ভাবনা থেকে যায়, যেগুলো ভাবনার মধ্যেই আসেনি। অনেক অপারেটরই তাই আগাম ধারণার সঠিকতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এবং ঘটনাগুলো যখন সামনে আসছে, সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বদলে নেওয়ার ঠিক বিপরীত এটা। এর মধ্য দিয়ে সত্যিকারের মূল্য তৈরির জন্য যেটা পূর্বশর্ত তা হলো মানদ- এবং প্রবেশগম্যতার একক পদ্ধতি।

শেষ কথা

সহযোগিতামূলক একটি ব্যবস্থার মধ্যে থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যেই ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, মেরিটাইম শিল্পে বিশেষ কোন ঘটনাটি ঠিক কখন ঘটবে, সে সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করাটা সত্যিই কঠিন। প্রাথমিক পরিকল্পনা যেহেতু স্থির নয়, তাই পরিকল্পনা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা প্রয়োজন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন বিগ ডেটা অ্যানালিটিকস ও মেশিন লার্নিং পদ্ধতির প্রয়োগে ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ধরনের বাধা উতরে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখানেও অমীমাংসিত একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আর তা হচ্ছে এর মাধ্যমে মেরিটাইম শিল্পের অংশীজনরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে সমর্থ হবে কিনা। মেরিটাইম পরিবহনের বিভিন্ন গ্রাহক যেমন কার্গো মালিক ও সহায়ক অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমকে এ ধরনের উদ্যোগ কাক্সিক্ষত নির্ভরতার নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা সে নিয়েও সংশয় আছে। এ কারণেই ডেটা বিনিময়ের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করাটা জরুরি, যাতে করে এ শিল্প-সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো নতুন তথ্যের সাথে পরিচিত হলে একই পরিবেশের মধ্যে থেকে কমিউনিটির অন্যদের সাথে যেন তা বিনিময় করতে পারে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রাক্কলিত ডেটা সামনে আনা, তাতে প্রবেশ করা ও তাকে ব্যবহার করার সম্ভাবনা যে প্রক্রিয়াটিকে চালিত করছে, বিষয়টি তেমন নয়। ডিজিটাল সম্ভাবনার এই নতুন ময়দানে নামতে চাইলে যেটা প্রয়োজন তা হলো পদ্ধতিগুলো হালনাগাদ করে নেওয়ার পাশাপাশি মেরিটাইম শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here