বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় আমাদের তৈরি থাকতে হবে যেকোনো অবস্থায়

২০২০ সাল থেকে এক অনিশ্চয়তা ভর করেছিল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। শুধু অর্থনীতিই নয়, কোভিড-১৯ এলোমেলো করে দিয়েছিল আমাদের পুরো জীবন ব্যবস্থাকেই। মহামারিকালীন সেই অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিরূপ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠায় অনুকরণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। এই অর্থনৈতিক গতিশীলতায় চট্টগ্রাম বন্দর ছিল সারথির ভ‚মিকায়। ইতোমধ্যে সারা বিশ^ও সামলে উঠছিল অর্থনৈতিক সংকট। কিন্তু তার মাঝেই আবার নতুন করে সংকটের মুখে পড়েছে বৈশি^ক অর্থনীতি। এবার সংকটের পেছনে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সারা বিশে^র জন্যই নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও জ¦ালানি সরবরাহ খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পটপরিবর্তনকারী প্রেক্ষাপট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ^ায়নের যুগে যুদ্ধের প্রভাবকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের গÐিতে আবদ্ধ রাখা খুবই কঠিন। যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন খাতে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা বিশ^। অর্থনৈতিক বিশ^ায়নের কারণে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যে সংকটে পড়েছে, তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশের ওপরও। টালমাটাল হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর মধ্যে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। পাশাপাশি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর বিপদ বাড়িয়েছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সৃষ্ট সরবরাহ সংকট। ফলে এরই মধ্যে কিছু দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের ওপর মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিশ^ব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই মন্দায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশের মতো উঠতি বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি। একদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে গেছে, অন্যদিকে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্যাস, সার ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যও বেড়ে গেছে। অর্থনীতিতে এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পথে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বৈশি^ক সংকট আমাদের টেকসই উন্নয়নের পথে গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী তাই দ্ব›দ্ব-সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সংকট উত্তরণের আহŸান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরও এই সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি বছরে প্রথম ৭ মাসে গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার-টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল ক্রেন ও কনটেইনার মুভারসহ বন্দরে যুক্ত হয়েছে ১৬টি হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি এবং ডিসেম্বর নাগাদ আরও ১৯টি যন্ত্রপাতি যুক্ত হবে। আমদানি পণ্যে শতভাগ অনলাইন ডেলিভারি চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি পোশাক রপ্তানি রুট চালু হয়েছে। এতে রপ্তানি ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছেন, আমাদের তৈরি থাকতে হবে যেকোনো অবস্থায়। সম্মিলিতভাবেই আমরা মোকাবিলা করব বর্তমান সংকট। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে প্রধান রচনায়।

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিচ্ছে ইস্পাত শিল্প। বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের আর্থিকমূল্য ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিশ^ব্যাপী আমাদের দেশকে স্ক্র্যাপ জাহাজের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য এবং প্রায় ৪০ লাখ টন আমদানি নিয়ে বিশে^র বৃহত্তম ভোক্তাদের মধ্যে একটি হিসেবে জায়গা করে দিয়েছে। দেশের ইস্পাত গলানোর সক্ষমতা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ টনে গিয়ে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু অতিমারির ধাক্কা সামলানোর পর সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট এই খাতটির জন্য পুনরায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে ইস্পাত খাতের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হোটেল র‌্যাডিসন বøু বে ভিউতে আয়োজিত হয় তৃতীয় ইস্পাত সম্মেলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, অস্ট্রিয়া, তাইওয়ান, চীন ও জাপানসহ ২৯টি দেশের খাতসংশ্লিষ্টরা এই সম্মেলনে অংশ নেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে ‘সম্মেলন ও উদ্যোগ’ বিভাগে।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম-চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবেÑসেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

জাফর আলম

সম্পাদক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here