সমুদ্রযাত্রায় কনটেইনারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন যন্ত্র

সমুদ্র যাত্রায় জাহাজ থেকে কনটেইনার হারিয়ে যাওয়া রোধ করতে স্যামসাং হেভি ইন্ডাট্রিজ (এসএইচআই) নতুন একটি যন্ত্র তৈরি করেছে। সহজে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রটি জাহাজের ধারণক্ষমতাকে অপরিবর্তিত রেখে কনটেইনার হারানোর হার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে সক্ষম বলে দাবী করছে স্যামসাং। ‘স্পেশাল স্ট্রাকচার অ্যান্টি-কনটেইনার লস’ নামক যন্ত্রটি বর্তমানে পেটেন্টভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহন করা হয়।মূলত বৈরী আবহাওয়া এবং ‘প্যারামেট্রিক রোলিং’-এর কারণে সমুদ্রযাত্রার সময় জাহাজ থেকে কনটেইনার পানিতে পড়ে যায়। সাগরের ঢেউয়ের কারণে স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়ে জাহাজ একদিক থেকে অন্যদিকে কাত হওয়াকেই রোলিং বলে। ভুল উপায়ে জাহাজে কনটেইনার মজুদ করায় প্যারামেট্রিক রোলিংয়ের কারণে প্রতি বছর শত শত কনটেইনার সাগর গর্ভে হারিয়ে যায়।

ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রায় ছয় হাজার, ২০২০ সালে প্রায় চার হাজার এবং ২০২১ সালে দুই হাজারের অধিক কনটেইনার সাগরে তলিয়ে গেছে। তবে ২০২২ সালে কনটেইনার হারানোর প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পায়। গত বছর সাগর গর্ভে মাত্র ৬৬১টি কনটেইনার হারিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কনটেইনার হারানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা শিপিং ইন্ডাস্ট্রিই নড়ে চড়ে বসেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয়ের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা করছে শিপিং কোম্পানিগুলো। তবে জটিল এই সমস্যার সহজ একটি সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে স্যামসাং।

বিশাল আকারের পণ্যবাহী জাহাজগুলোয় র‍্যাক এবং ল্যাশিং ব্রিজের সাহায্যে ভারী কনটেইনারগুলো একটার ওপর আরেকটা স্তুপ করে রাখা হয়। স্যামসাংয়ের স্পেশাল স্ট্রাকচার অ্যান্টি-কনটেইনার লস যন্ত্রটি ল্যাশিং ব্রিজের সাথে জুড়ে দিলে তীব্র ঝাঁকুনিতেও ভারী কনটেইনারগুলো তেমন একটা নড়বে না। নতুন এই যন্ত্রটি ঝড়ো আবহাওয়া ও প্যারামেট্রিক রোলিংয়ের সময়ও কনটেইনারের নড়াচড়া অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সক্ষম।

স্যামসাং জানায়, স্পেশাল স্ট্রাকচার অ্যান্টি-কনটেইনার লস যন্ত্রটি এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চারটি ক্লাসিফিকেশন সংস্থার (ডিএনভি, এবিসি, এলআর ও কেআর) সনদ লাভ করেছে। যন্ত্রটির জন্য কোরিয়ার বাইরে দশটিরও বেশি পেটেন্ট আবেদন করেছে স্যামসাং।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনটেইনার শিপিং কোম্পানিগুলোর আগ্রহে পরিণত হওয়া যন্ত্রটি এখন চূড়ান্ত সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই কার্যক্ষম জাহাজগুলো যেন যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারে বর্তমানে সেদিকে গুরুত্বারোপ করছে স্যামসাং। যন্ত্রটিকে সহজে ল্যাশিং ব্রিজে প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে এর আকার ও ওজন কমিয়ে আনা হচ্ছে।  

যন্ত্রটির প্রটোটাইপ কাঠামোটি বর্তমানে পুসান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। স্পেশাল স্ট্রাকচার অ্যান্টি-কনটেইনার লসের সক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সেখানে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে বছরখানেকের ভেতর পণ্যটির বিপণন শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী স্যামসাং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here