পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়-বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অনন্য অর্জনের তালিকায় দেদীপ্যমান এক নাম। ২৫ জুন মহাসমারোহে আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই দিনটি। বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলোর পশ্চাদপসরণে ভীত না হয়ে নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সাহসী ঘোষণা দিয়েছিলেন যিনি, সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই যাত্রা করল বাংলাদেশিদের গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো এই সেতু।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা নদী নিজেই। প্রমত্ত পদ্মাকে বলা হয় ‘মাইটি রিভার’। আমাজনের পর সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয় এই নদীতে। ভরা বর্ষায় এই নদীতে স্রোতের গতি থাকে প্রতি সেকেন্ডে ৪ থেকে সাড়ে ৪ মিটার। এর গতিপ্রকৃতিও নিত্যপরিবর্তনশীল। যে নদীর মতিগতি বোঝা কঠিন, সেই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ দুঃসাহসেরই নামান্তর। একসময় অসম্ভব মনে হলেও সেটাই আজ বাস্তবতা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই পরম সত্য-পদ্মা সেতু কেবল ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার। এ সেতু আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। সেতুর ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সকল ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও এটি চালু করাটা যেন বাংলাদেশিদের জন্য নতুন এক বিজয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিজয়ের কৃতিত্ব সবাইকে দিয়েছেন।
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সেখানে নতুন শিল্প-কারখানা হবে, বিদ্যমান শিল্প খাতগুলোর সম্প্রসারণ হবে, গতিশীল হবে পর্যটন খাত, কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং এ খাতের পণ্যের নতুন বাজার তৈরি হবে। এছাড়া পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এবং কম খরচে সহজে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রপ্তানি পণ্য এখন চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা সম্ভব হবে; যা রপ্তানি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মৌলিক এসব বিষয় নিশ্চিত হলে আঞ্চলিক উন্নয়নসাম্য প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
এই সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে সম্প্রসারণ হবে, তাতে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপিতে অবদান বাড়লে স্বাভাবিকভাবে তা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর আশীর্বাদে দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়বে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। তাই বলা যায়, পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতুর আদ্যোপান্ত রয়েছে এবারের প্রধান রচনায়।
ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বেসরকারি আইসিডি বিএম কনটেইনার ডিপোতে। ৪ জুন রাতে ডিপোটিতে আগুন লেগে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন সদস্যসহ ৫০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত রির্পোট অনুযায়ী টার্মিনালের নিরাপত্তা বাড়ানো হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এই দুর্ঘটনায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম-চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবেÑসেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।