জাহাজের হাল

জাহাজ, নৌকা, ফ্লাইং বোট বা অন্য জলযানের যে অংশটি জলরোধী করে নির্মাণ করা হয়, সেটিকে বলা হয় হাল (ইংরেজি শব্দ)। আভিধানিক অর্থে এটি জাহাজের স্থূলভাগ বা কাঠামো বা নৌশরীর। আর সাধারণ অর্থে হাল হলো জাহাজ বা নৌকার সেই অংশ, যার ওপর ভর দিয়ে এটি পানিতে ভাসে।

একটি হালের ওপরের দিকটা খোলাও থাকতে পারে, আবার আংশিক অথবা সম্পূর্ণ আবরিতও থাকতে পারে। আবরিত অংশকে বলা হয় ডেক, যার ওপর একটি ডেকহাউস ও অন্যান্য কাঠামো থাকে। যে লাইন বরাবর একটি জলযানের হাল পানির সংস্পর্শে থাকে, তাকে ওয়াটারলাইন বলা হয়।

জাহাজের উপযোগিতাভেদে হালের ধরন বিভিন্ন হয়ে থাকে। এর কাঠামো কেমন হবে, তা নির্ভর করে নকশাগত প্রয়োজনীয়তার ওপর। স্কাউ বার্জের হালের আকৃতি এক ধরনের, আবার মাল্টিহাল রেসিং সেইলবোটের কাঠামো আরেক ধরনের। এই আকৃতি ও কাঠামো নির্ধারণ করা হয় বেশকিছু বিষয় মাথায় রেখে।

একটি জাহাজ কী পরিমাণ পণ্য পরিবহন করবে, হালের কাঠামো কীরূপ হলে জাহাজটি ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারবে, জাহাজ নির্মাণের পেছনে কী পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এর গতি কেমন হবে, এটি যে রুটে চলাচল করবে, সেখানকার পানির গতিপ্রকৃতি কেমন, জাহাজটি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা-এসব বিবেচনা করা হয় হালের নকশা করার সময়। যেমন একটি আইসব্রেকারের হালের সামনের অংশটি হয় ‘রাউন্ডেড বাও’ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, অন্যদিকে একটি ল্যান্ডিং ক্রাফটে থাকে ফ্ল্যাট বটম হাল। আবার বাল্কহেডের হাল নির্মাণ করা হয় পানিরোধী ডেক যুক্ত করে। সমুদ্রবাণিজ্যের ইতিহাস বেশ পুরনো। স্বাভাবিকভাবে জাহাজ নির্মাণের ঐতিহ্যও বহু বছরের। অনেক আগে থেকেই নৌবাণিজ্যের প্রয়োজনে কাঠের জাহাজ নির্মাণ হয়ে আসছে। তবে শুরুর দিকে এসব নৌযানের কাঠামো নিখুঁত ছিল না। সবার আগে নিপুণভাবে হাল নির্মাণ করেছিল মিশরীয়রা। সেই ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা শিখে গিয়েছিল কীভাবে একাধিক কাঠের তক্তা পরস্পর যুক্ত করে জাহাজের হাল তৈরি করতে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here