সি মাইন

সি মাইন বা নেভাল মাইন হলো এক ধরনের সেলফ-কনটেইনড এক্সপ্লোসিভ, যা পানিতে স্থাপন করা হয় ভাসমান জাহাজ ডুবোজাহাজকে ধ্বংস করার জন্য। এক্ষেত্রে টার্গেট জাহাজের ওপর কোনো ধরনের ডেপথ চার্জ করা হয় না। বরং মাইনকে জাহাজ চলাচলের গতিপথে স্থাপন করে রাখা হয়। টার্গেট জাহাজ সেই মাইনের সঙ্গে ধাক্কা লাগালে সেটি বিস্ফোরণ হয়ে জাহাজের ক্ষতি সাধন করে।

রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক-দুই ধরনের কৌশলের অংশ হিসেবেই সি মাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রক্ষণাত্মক কৌশলে নিজেদের জাহাজগুলোর চলাচলের জন্য একটি সেফ প্যাসেজ তৈরি করার লক্ষ্যে মাইন স্থাপন করা হয়। আর আক্রমণাত্মক কৌশলে শত্রুপক্ষের জাহাজের ক্ষতি সাধন কিংবা তাদের জাহাজ যেন হারবারে প্রবেশ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সি মাইন ব্যবহার করা হয়।

সি মাইন স্থাপনের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে তাদের মাইন জোনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে বিশ্বে এখনো অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সি মাইন স্থাপনের বিষয়ে আগে থেকে কোনো তথ্য জানা যায় না। কারণ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা অনেক দেশ সেই তথ্য প্রকাশ করে না।

সাম্প্রতিক সময়ে সি মাইনের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। ইউক্রেনের বন্দর থেকে নোঙর ছিঁড়ে শত শত সি মাইন কৃষ্ণ সাগরে ভেসে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এসব মাইন অপসারণের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে সি মাইন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সচল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী চ্যানেল মাইনমুক্ত করার জরুরি পদক্ষেপ নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ১ মার্চ প্রথম রাষ্ট্রীয় বিদেশ সফরে মস্কো গিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু। তার আহ্বানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সোভিয়েত সরকার। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দুই বছরের অভিযানে কর্ণফুলী চ্যানেল ও বহির্নোঙরের এক হাজার বর্গমাইল এলাকা মাইনমুক্ত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here