কানহুজি আংরে ছিলেন ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে মারাঠা নৌবাহিনীর একজন অ্যাডমিরাল ও তৎকালীন কোলাবা রাজ্যের শাসক। ১৬৬৯ সালের আগস্টে তার জন্ম। কানহুজি স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ভিন্ন এক কারণে। তিনি ইউরোপীয় বণিক জাহাজে হামলা চালিয়ে নাবিকদের আটকে রাখতেন। ইউরোপীয়রা এসব নাবিককে মুক্ত করতে মোটা অংকের অর্থ পরিশোধ করত। ইউরোপীয়দের কাছে এটি ছিল নাবিকদের মুক্তিপণ বাবদ কর। আর কোলাবার দরিদ্র জনগণের কাছে এই অর্থ ছিল জাকাত।
আরব সাগররের পূর্ব উপকূল দিয়ে চলাচলকারী ব্রিটিশ, ওলন্দাজ ও পর্তুগিজ জাহাজগুলো প্রায়ই কানহুজির হামলার শিকার হতো। পর্তুগিজ ও ব্রিটিশরা অবশ্য এই প্রাইভেটিয়ারিং কার্যক্রম বন্ধের অনেক চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে সফল হয়নি। কানহুজি তার মৃত্যু পর্যন্ত ইউরোপীয় বণিক জাহাজগুলোর কাছ থেকে এই জাকাত আদায় করে গেছেন। একদিকে একের পর এক ইউরোপীয় জাহাজকে আক্রমণ, অন্যদিকে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের হাতে বন্দি না হওয়া-এই দুই সাফল্যের কারণে অনেক ইতিহাসবিদ কানহুজিকে ভারতের সমুদ্র ইতিহাসে সবচেয়ে দক্ষ অ্যাডমিরাল হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কানহুজির একটি বড় কৌশল ছিল, তিনি খোদ ইউরোপীয় কিছু সেনাকে তার বাহিনীতে কাজে লাগিয়েছিলেন। বিশেষ করে বিভিন্ন অভিযানে ব্যর্থতার কারণে ইউরোপীয় শাসকরা যাদের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করেছিল, কানহুজি তাদেরই দলে ভিড়িয়েছিলেন। এমনই একজন ছিলেন ম্যানুয়েল ডি কাস্ত্রো। কানহুজির নিয়ন্ত্রণে থাকা খান্দেরি দ্বীপ দখলে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এই পর্তুগিজ সেনাকে শাস্তি দিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরে কাস্ত্রো কানহুজির দলে যোগ দেন।
কানহুজি তার দলে এক জামাইকান জলদস্যুকেও কাজ দিয়েছিলেন। এমনকি তাকে চিফ গানারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দিয়েছিলেন। ১৭২৯ সালের ৪ জুলাই মারা যান কানহুজি।