উচ্চ করহারের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে কম আগ্রহী। তাই প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এই করহার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃপক্ষ (বেজা)।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি এই প্রস্তাব দিয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিডার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, বাংলাদেশে কর্পোরেট করের সাথে অগ্রিম কর, উৎসে করসহ অন্যান্য কর যুক্ত থাকায় সব মিলিয়ে গড়ে এই হার দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু বৈশ্বিক কর্পোরেট করহার গড়ে ২১ থেকে ২৪ শতাংশ। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ২৪, ভিয়েতনামে ২০ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ শতাংশ। যে কোনো দেশে বিদেশিরা বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট দেশে করহার বিবেচনা করে বিনিয়োগ করেন। তাই বিদেশি বিনিয়োগ টানতে পার্শবর্তী এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশেও কর্পোরেট করহার কমানো দরকার।
তিনি বলেন, বর্তমানে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদেশি পরিচালকেরা দেশে অবস্থান করুক বা না করুক তাদেরকে টিআইএন এবং পিআই ভিসা দাখিল করতে হয়। টিআইএন নেওয়ার জন্য কাজের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বিডা গাইডলাইন অনুযায়ী শুধু বাংলাদেশে অবস্থান করে কাজ করলেই বিদেশি পরিচালকদের কাজের অনুমতি নিতে হয়। তাই বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান না করা পরিচালকদের টিআইএন এবং পিআই ভিসা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রহিত করা প্রয়োজন।
অ্যামজন, ফেসবুক ও গুগলের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াকে কর্পোরেট করের আওতায় আনার প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি বলেন,লভ্যাংশ আয়ের ওপর অগ্রিম কর কোম্পানির জন্য ২০ থেকে ১০ শতাংশ ও ব্যক্তির জন্য ১০ থেকে ৫ শতাংশ কমানো এবং টেলিকম সেক্টরের মোট প্রাপ্তির ওপর ন্যূনতম টার্নওভার কর কমানো দরকার।
বেজার বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী সদস্য আলী আহসানও বিড়ি, সিগারেটসহ কয়েকটি খাত ছাড়া অন্যান্য খাতে কর্পোরেট কর কমানোর সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, কর্পোরেট করহার কমালে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন। এছাড়া এসএমই খাতে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারকে কর অব্যাহতি দেওয়া দরকার বলেও মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, আগাম কর একবার দিলে পুনরায় ফেরত বা সমন্বয় করা হয়। এতে ব্যাংক সুদ, তারল্য সংকটসহ ব্যবসা পরিচালনায় জটিলতা বাড়ে। তাই শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা উপকরণের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা দরকার।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে আয়-রোজগার করবে, এটা ঠিক নয়। তারা আসবে পর্যটক হিসেবে। এখানে এসে তারা খরচ করবে। আয়ের চিন্তা করবে কেন? তাদেরকে কাজের অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
কর্পোরেট করের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর এত বেশি ও দীর্ঘসময় ধরে ছাড় দেওয়া আছে যে, অনেক সময় ওই কোম্পানির কার্যক্রমই শেষ হয়ে যায়। তারপরও করের বোঝা যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
অনুষ্ঠানে বেপজা ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন করহার ও আমদানি শুল্ক হ্রাস করাসহ বেশি কিছু প্রস্তাব জানায়।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, উত্তরা, মোংলা ও ইশ্বরদী ইপিজেডের বিনিয়োগকারীদের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় প্রাইম মুভার আমদানির সুযোগ দেওয়া দরকার।