কানাডায় প্রচুর সরিষা উৎপাদন হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করে। এ অবস্থায় কানাডা থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস। তিনি মনে করেন, তার দেশের স্বাস্থ্যসম্মত সরিষার ভোজ্যতেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে পারে। তবে আমদানির পাশাপাশি বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভোজ্যতেলের কারখানা স্থাপন করতে হাইকমিশনারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সচিবালয়ে বুধবার (১১ মে) হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কানাডা বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার। উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিপুল সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। কানাডা বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের কারখানা স্থাপন করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশেও রপ্তানি করতে পারবে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বেশ কয়েকটির কাজ শেষ পর্যায়ে। বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কানাডা লাভবান হবে।
কানাডায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় ১০৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ কানাডা থেকে আমদানি করেছে প্রায় ৪৩ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্য আরো বাড়ানো সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়। এগুলো রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের কৃষিপণ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গবেষণার কাজে কানাডা সহায়তা করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।
এ সময় কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। কানাডায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কানাডার সরিষা তেল বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এ তেল আমদানি করতে পারে। এ বিষয়ে কানাডা সরকার সবধরনের সহযোগিতা দেবে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের প্রশংসা করে কানাডার হাইকমিশনার বলেন, ব্যবসায়ীরা দুই দেশের মধ্যে সফর করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।
এ সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বিষয়টি তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত ও আধুনিক পদ্ধতিতে পোশাক তৈরি ও রপ্তানি করছে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল বিশ্বের ১৫৭টি ফ্যাক্টরিকে লিড গ্রিন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেট দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১০টির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এখন নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছে। শ্রম আইন সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
বৈঠককালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) নুসরাত জাবীন বানুসহ হাইকমিশন ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।