গিনি উপসাগরে জলদস্যুতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের নতুন রেজোলিউশন গ্রহণ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি গিনি উপসাগরকে ঘিরে একটি নতুন সিকিউরিটি রেজোলিউশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে। এর অর্থ হলো গিনি উপসাগরের জলদস্যুতা নিয়ে সংস্থাটির উদ্বেগ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বরং তারা নতুন করে সেখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। গিনি উপসাগর নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ সর্বশেষ রেজোলিউশন গৃহীত হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে।

নতুন রেজোলিউশনে নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, গিনি উপসাগরে জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতি প্রতিরোধের জন্য এর উপকূলীয় দেশগুলোকেই প্রথমিক দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগও নিতে হবে তাদের।

এই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতি তাদের দেশীয় আইনে জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতিকে শস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে উপকূলীয় দেশগুলোর আইনি কাঠামোতে যেসব উল্লেখযোগ্য অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, সেগুলোও দূর করতে বলা হয়েছে রেজোলিউশনে।

এই রেজোলিউশনের কো-স্পন্সর ছিল ঘানা ও নরওয়ে। ঘানা দুই বছরের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হয়েছে, যার মেয়াদ শুরু হয়েছে গত জানুয়ারিতে। গিনি উপসাগরের নিরাপত্তা বিধান দেশটির অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক বিষয়।

গত এক দশকে গিনি উপসাগর ছিল জলদস্যুতার প্রধান হটস্পট। গত বছর স্টেবল সিজ কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই অঞ্চলে জলদস্যুরা অপহরণ, চুরির মতো অপকর্মের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ আয় করে। বিশেষ করে নাইজার ডেল্টায় জলদস্যুতার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

অবশ্য আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত এক বছরে গিনি উপসাগরে জলদস্যুতা অনেকটাই কমেছে। এই উপসাগরীয় দেশগুলো জলদস্যুতা-প্রতিরোধী উদ্যোগে মোটা অংকের বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। স্টেবল সিজের হিসাব অনুযায়ী, এই বিনিয়োগের মোট বার্ষিক পরিমাণ নৌ-সামরিক খাতে প্রায় ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং অসামরিক খাতে প্রায় ২৫ কোটি ডলার।

আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত এক বছরে গিনি উপসাগরে জলদস্যুতা অনেকটাই কমেছে

জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) সমুদ্রবিষয়ক বিশেষায়িত ডিপার্টমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) সর্বশেষ প্রান্তিকীয় প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সারা বিশ্বে মোট ৩৭টি জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে, আগের বছরের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৩৮।

আলোচ্য সময়ে মোট জলদস্যুতার ৪১ শতাংশই ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে সিঙ্গাপুর প্রণালীতে। অন্যদিকে গিনি উপসাগরে জলদস্যুতার মাত্র সাতটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, যা মোট ঘটনার ১৯ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে এই হার ছিল ৪৩ শতাংশ।

চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা দেয়, গিনি উপসাগরে তাদের কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ আরও দুই বছর মোতায়েন রাখা হবে। কো-অর্ডিনেটেড মেরিটাইম প্রেজেন্সেস (সিএমপি) পাইলট প্রোগ্রামের অধীনে দেশগুলো গত দুই বছর ধরে গিনি উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রেখেছিল। এই প্রকল্পের ফলাফল পর্যালোচনার পর ইইউ মনে করছে, উপসাগরটিতে তাদের উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে এখনও। এই কারণেই জোটটি সিএমপি প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছরের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকার জলসীমায় চার মাস টহল দেবে ডেনমার্কের যুদ্ধজাহাজ। এরপর সাড়ে সাত মাস টহল দেবে স্পেন। এছাড়া ক্রমান্বয়ে ফ্রান্স ১১ মাস, ইতালি আট মাস ও পর্তুগালের যুদ্ধজাহাজ সাড়ে তিনমাস টহল পরিচালনা করবে সেখানে। এর মাধ্যমে আগামী দুই বছর গিনি উসাগরে অন্তত একটি যুদ্ধজাহাজ দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে ইইউ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here