মেঘালয় ও আসামের পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে ভারতের ট্রায়াল জাহাজ

ভারতীয় পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ এমভি রিশাদ রায়হান

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক চালান নিয়ে প্রথমবারের মতো মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে একটি জাহাজ। সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি রিশাদ রায়হান নামে সেই জাহাজটি বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে নোঙর করে।

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে চার বছর আগে করা চুক্তির প্রথম চালানটি এসেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। দুই বছর পর সোমবার মোংলা বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহারের ট্রায়াল রান হিসেবে ‘সেভেন সিস্টার্সের’ তথা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুটি রাজ্যের জন্য পণ্য এল দুই কনটেইনারে করে। একটি মোংলা-তামাবিল (সিলেট) সড়কপথ ব্যবহার করে যাবে মেঘালয় রাজ্যে। অন্যটি মোংলা-বিবিরবাজার (কুমিল্লা) সড়কপথ দিয়ে আসামে যাবে।

‘এগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ শীর্ষক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এমভি রিশাদ রায়হান নামে জাহাজটি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার নিয়ে আসে। এর একটিতে ইলেকট্রোস্টিল কাস্টিংস লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজে ছিল ১৬ দশমিক ৩৮০ টন লোহার পাইপ। আরেকটি কনটেইনারের ২৪৯ প্যাকেজে প্লাস্টিক তৈরির উপকরণ ৮ দশমিক ৫ টন প্রিফোম ছিল।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নৌযানটি থেকে কনটেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের কাজ শুরু হয়েছে। পরে সেগুলো সরাসরি টার্মিনাল ট্রাক্টরে ওঠানো হয়। এরপর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেই পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়কপথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। ফলে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গত মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়। এর পরই পরীক্ষামূলক চার কনটেইনারের একটি চালান কলকাতার শ্যামপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ২০২০ সালের ২১ জুলাই। চালানটি পরে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরায় নেয়া হয়, যাতে ছিল রড ও মসুর ডাল।

ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের চারদিনের মাথায় ওই বছরের ২৫ জুলাই ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের একটি চালান পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মোট ৪৫ কনটেইনারের ভারতীয় পণ্যের চালানটি চীনের নিংবো, ভিয়েতনামের হো চি মিন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর হয়ে ওই বন্দরে পৌঁছে। বন্দরে এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজে স্থানান্তর করে তা নেওয়া হয় কলকাতায়। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীসহ নানা জটিলতায় চুক্তির আওতায় আর কোনো ট্রায়াল রান হয়নি। মোংলা বন্দর ব্যবহারবিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে ভারত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here