শিপিং খাতে নিঃসরণ কমাতে দুটি বিল প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রে

মার্কিন বন্দরে চলাচলকারী ও অবস্থানরত জাহাজ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে দুটি পৃথক আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির আইনসভা কংগ্রেসের দুই কক্ষে এ বিষয়ে দুটি পৃথক বিল প্রস্তাব করেছেন আইনপ্রণেতারা।

মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের প্রস্তাবিত বিল দুটি অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ ‘ফুয়েলইইউ’-এর আদলের। এখানেও কার্বনভিত্তিক জ্বালানির ওপর কর আরোপ ও কার্বনের ব্যবহার সীমিতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা বিল দুটি উপস্থাপনের বিশেষ এক উপলক্ষ্যও পেয়ে গেছেন। ৮ জুন জাতিসংঘের উদ্যোগে উদযাপিত হলো ওয়ার্ল্ড ওশান ডে। এই দিবসকে সামনে রেখেই ‘ক্লিন শিপিং অ্যাক্ট অব ২০২৩’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম পলিউশন অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি অ্যাক্ট’ শীর্ষক বিল দুটি কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন তারা।

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে মোট যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসৃত হয়, তার প্রায় তিন শতাংশের জন্য দায়ী সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজগুলো। দেশ ও শিল্পখাতকে একই কাতারে রাখলে আন্তর্জাতিক শিপিং খাত সর্বোচ্চ নিঃসরণকারীর তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে থাকত।

বিল দুটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রোডস আইল্যান্ডের সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউজ বলেন, আমাদের সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব ঠেকাতে হবে। তাই নৌপরিবহনে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে, সমুদ্র দূষণের জন্য দায়ী অপরিচ্ছন্ন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এবং বন্দরের আশপাশের এলাকার মানুষদের বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন আইন দুটি প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিয়ার সাথে মিলিতভাবে বিল দুটি উত্থাপন করেন হোয়াইটহাউজ ।

জ্বালানির ক্ষেত্রে কার্বন ইনটেনসিটি স্ট্যান্ডার্ডস নির্ধারণ করে শিপিং খাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে ক্লিন শিপিং অ্যাক্ট অব ২০২৩ উত্থাপন করেছেন সিনেটর প্যাডিয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রবার্ট গ্রেসিয়াসহ আরও অনেকেই বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিলটি আইনে পরিণত হলে এটি ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ইইউর মতো করে এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিকে (ইপিএ) নির্দেশনা প্রদান করবে। সেই সঙ্গে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে কার্বন ইনটেনসিটি স্ট্যান্ডার্ডস আরও কঠোর করবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জানুয়ায়ি থেকে কার্বন নিঃসরণ ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালের জানুয়ারি থেকে ৪৫ শতাংশ, ২০৩৫ সালে ৮০ শতাংশ ও ২০৪০ সালে শতভাগ কমবে। ২০৩০ সাল নাগাদ বন্দরের অভ্যন্তরের জাহাজ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজনীয়তা কতখানি, আইনটি সেটা নির্ধারণ করে দেবে।

অন্যদিকে, সিনেটর হোয়াইটহাউজের প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম পলিউশন অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি অ্যাক্টে দশ হাজার গ্রস টনের বেশি ওজনের জাহাজ মার্কিন বন্দরগুলোয় কার্গো অফলোডিংয়ের কাজ করলে সেটার ওপর দূষণ বা পলিউশন ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইনবাউন্ড ট্রিপে জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নির্গত প্রতি টন কার্বনের জন্য ১৫০ ডলার, প্রতি পাউন্ড নাইট্রোজেন অক্সাইডের জন্য ৬ দশমিক ৩০ ডলার, প্রতি পাউন্ড সালফার ডাই অক্সাইডের জন্য ১৮ ডলার এবং প্রতি পাউন্ড পার্টিকেল পলিউশনের (পিএম ২.৫) জন্য ৩৮ দশমিক ৯০ ডলার দূষণ ফি আরোপের কথা বলা হয়েছে।

আইনপ্রণেতাদের মতে, আগামী দশ বছরে আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি ডলারের দূষণ ফি আদায় করা যাবে। বিপুল এই তহবিল ব্যবহার করে সমুদ্র শিল্পকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করা সম্ভব মনে করেন তারা।

Facebook Notice for EU! You need to login to view and post FB Comments!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here