স্বয়ংচালিত জাহাজের সুরক্ষায় সোলাসে নতুন কোড যুক্ত করবে আইএমও

প্রযুক্তির আশীর্বাদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতে। আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানে। এবার এমনই একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।

সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর সুরক্ষার জন্য চালু রয়েছে সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি (সোলাস) কনভেনশন। তবে এখন পর্যন্ত কেবল মানুষ কর্তৃক পরিচালিত জাহাজগুলোর ক্ষেত্রেই এই কনভেনশনের ধারাগুলো প্রযোজ্য। হাল আমলের স্বয়ংচালিত জাহাজের নিরাপত্তায় কোন চর্চা অনুসরণ করতে হবে, তার উল্লেখ নেই সোলাসে। এই ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে আইএমওর মেরিন সেফটি কমিটি (এমএসসি) সোলাসে নতুন একটি কোড অব অপারেশন যুক্ত করতে যাচ্ছে, যা স্বয়ংচালিত জাহাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

মানুষ কর্তৃক পরিচালিত জাহাজ ও স্বয়ংচালিত জাহাজের নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তা এক নয়। বিদ্যমান সোলাস মানুষ কর্তৃক পরিচালত জাহাজগুলোর বিশেষভাবে প্রবর্তিত। এতে স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং, সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং ফর সিফেয়ারার্সের (এসটিসিডব্লিউ) মতো বিশেষায়িত বিষয় অন্তর্ভুক্ত। সময়ের চাহিদা মাথায় রেখে এবার এতে স্বয়ংচালিত জাহাজগুলোর জন্য ‘মেরিটাইম অটোনমাস সারফেস শিপ (এমএএসএস)’ শীর্ষক নতুন একটি কোড যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে এমএসসি। ২০২৫ সালের শুরুর দিকেই কোডটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে আইএমওর।

অবশ্য এই কোড বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ হচ্ছে না। ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ডিএনভি জানিয়েছে, নতুন এই কোডের রূপরেখা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতাকে খুব বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। বরং জাহাজ পরিচালনায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহারে কী কী ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেই বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আইএমওর বিভিন্ন কমিটি এরই মধ্যে একটি নীতিগত বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে যে, স্বয়ংচালিত প্রতিটি সারফেস ভেসেলে অবশ্যই একজন মাস্টার থাকতে হবে, যিনি জাহাজ পরিচালনাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। জাহাজে যতই আধুনিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক না কেন, এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। মেরিটাইম সেফটি কমিটি যে নতুন কোডের পরিকল্পনা করছে, সেখানেও এই বিষয়টিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি বিবেচনা করা হয় সোলাসকে। অবশ্য বর্তমানে যে কনভেনশন অনুসরণ করা হয়, তা এসেছে কয়েক দফায় সংস্কার, সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে। সোলাসের আদিতম সংস্করণ গৃহীত হয়েছিল ১৯১৪ সালে; টাইটানিক দুর্ঘটনার পর। এরপর ১৯২৯, ১৯৪৮, ১৯৬০ ও ১৯৭৪ সালে সোলাসের আরও চারটি সংস্করণ গৃহীত হয়।

১৯৭৪ সালের সংস্করণটি পরবর্তীতে আরও সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আজকের রূপ পেয়েছে। এ কারণে বর্তমানে জাহাজের সুরক্ষাবিষয়ক যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন কার্যকর রয়েছে, সেটিকে সোলাস, ১৯৭৪ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here