শ্রমিক অসন্তোষে থমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম

নিয়োগ চুক্তিসংক্রান্ত ইস্যুতে ডক শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। যার ফলে বন্দরগুলোয় অপেক্ষমান কনটেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মেরিটাইম বিশ্লেষক মেরিনট্রাফিকের তথ্যমতে, ওকল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে মোট ৮৬ হাজার ৩৮১টি কনটেইনার আটকা পড়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্যমান প্রায় ৫২০ কোটি ডলার।

৫ জুন থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে ওকল্যান্ড বন্দরে অপেক্ষারত কনটেইনারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে বন্দরটিতে ২৫ হাজার ২৬৬টি কনটেইনার অপেক্ষারত অবস্থায় থাকলেও সপ্তাহান্তে সেই সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৫৩টিতে দাঁড়িয়েছে। মেরিনট্রাফিকের একজন মুখপাত্র জানান, একই সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরের অপক্ষোরত কনটেইনারের গড় সংখ্যা ২১ হাজার ২৯৭ টিইইউ থেকে বেড়ে ৫১ হাজার ২২৮ টিইইউতে পৌঁছেছে ।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের ২৯টি বন্দরে কর্মরত ২ হাজার ২০০ ডক শ্রমিকের নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জুলাই শেষ হয়। গত বছর ১০ মে অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে থেকে পরবর্তী চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লংশোর অ্যান্ড ওয়ারহাউজ ইউনিয়ন (আইএলডব্লিউইউ) এবং বন্দরগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা প্যাসিফিক মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ)। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত আলোচনা বেশ ইতিবাচকভাবে আগালেও ২০২২ সালের শেষ দিকে আলোচনার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়।

কোভিড পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্টের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পায়। কাজের গতি বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বেশ বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখে বন্দরগুলো। বিশাল সেই আয় থেকে শ্রমিকদের জন্য লভ্যাংশ দাবি করে আইএলডব্লিউইউ। এছাড়াও প্রায় এক বছর চুক্তি-বহির্ভূকভাবে কাজ করায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ দেখা দেয়। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ডক শ্রমিকেরা।

চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ৬ ও ৭ এপ্রিল আইএলডব্লিউইউ লোকাল ১৩ শ্রমিকদের কাজ করা থেকে বিরত রাখে। যার ফলে লস অ্যাঞ্জেলস এবং লং বিচ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস, লং বিচ, ওকল্যান্ড, টাকোমা ও সিয়াটল বন্দরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় ২ জুন পশ্চিম উপকূলের বেশ কয়েকটি বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

আলোচনার অগ্রগতি

শ্রমিক অসন্তোষ জটিল আকার ধারণ করায় ক্ষতির মুখে পড়েছে মার্কিন সাপ্লাই চেইন। এমতাবস্থায় সরকারের সহায়তা কামনা করেছে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স। সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তারা জানায়, বন্দর কার্যক্রম বন্ধ থাকলে মার্কিন অর্থনীতিকে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচের ধাক্কা সামলাতে হয়। পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউর মধ্যে আলোচনা ত্বরান্বিত করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে একজন ‘স্বতন্ত্র মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে চেম্বার।

ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী জুলি সুকে দুই পক্ষের চুক্তিসংক্রান্ত আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। জুলি সুয়ের মধ্যস্থতায় ছয় বছর মেয়াদি নতুন একটি অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মত হয়েছে পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউ। এক যৌথ বিবৃতিতে পিএমএ প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাকেনা ও আইএলডব্লিউইউ প্রেসিডেন্ট উইলি অ্যাডামস জানান, বন্দর সচল রাখার জন্য আইএলডব্লিউইউ কর্মীবাহিনীর প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি প্রদান করে-এমন একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। তারা আরও জানান, বন্দর কার্যক্রম সচল রাখাই বর্তমানে তাদের মূল লক্ষ্য।

উভয় পক্ষের কেউই অস্থায়ী চুক্তিবিষয়ক কোনো তথ্য এখনই প্রকাশ করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে আইএলডব্লিউইউ জানিয়েছে, ইউনিয়নের সবার ভোট প্রদান শেষে চুক্তি চূড়ান্ত হতে অন্তত মাস খানেক সময় লেগে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here