রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্বে লাগাম টানতে পারেনি প্রাইস ক্যাপ

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। মস্কোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। রাশিয়ার আর্থিক, জ্বালানি ও রপ্তানি খাতে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি সেই প্রচেষ্টারই অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্বে লাগাম টানতে ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ ডলারের ‘অয়েল প্রাইস ক্যাপ’ আরোপ করে জি৭ দেশগুলো।

তবে পশ্চিমাদের এই বাধায় রাশিয়ার কোনো লোকসান হয়নি। বরং খুবই সাধারণ একটি কৌশল খাটিয়ে তারা জি৭-এর বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি করছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এমনটা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শিপিং ফি বাড়ানোর মাধ্যমে গত তিন মাসে কেবল ভারতে তেল রপ্তানি করেই প্রায় ১২০ কোটি ডলার অতিরিক্ত কামিয়েছে রুশ সরবরাহকারীরা।

রাশিয়া তো চাইলে জি৭-এর অয়েল প্রাইস ক্যাপ নাও মানতে পারে। জোটের বাইরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করলেই তো হয়। কিন্তু বাস্তব পেক্ষাপট তেমন সরল নয়। এই প্রাইস ক্যাপ আরোপ করা হয়েছে মূলত জি৭-ভিত্তিক বীমা প্রতিষ্ঠান, ব্রোকার ও অন্যান্য সেবাদাতাদের লক্ষ্য করে। অর্থাৎ প্রাইস ক্যাপের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে রাশিয়ার অথবা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ও শিপিং কোম্পানিগুলো। আর বিশ্বে নৌবীমার সিংহভাগ সেবা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রাইস ক্যাপ মানতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির জ্বালানি রপ্তানি নিষিদ্ধ না করেই পরোক্ষভাবে তাদের আয় কমাতে চেয়েছিল পশ্চিমা সরকারগুলো।

কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, রুশ রপ্তানিকারকরা কৌশলে তাদের তেল বিক্রিবাবদ নিট আয় ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের বেশি রাখতে সমর্থ হয়েছে। কেবল বাড়তি শিপিং ও হ্যান্ডলিং চার্জ আরোপ করেই এই সাফল্য দেখিয়েছে তারা। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে রাশিয়ার বাল্টিক বন্দরগুলো দিয়ে মোট যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হয়েছে, তার সিংহভাগ পরিবহন করেছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ট্যাংকার কোম্পানিগুলো। তারা অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের ফলে তিন মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে ভারতের মোট যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তাতে ব্যারেলপ্রতি নিট মূল্য পড়ে যায় প্রায় ৬৮ ডলার, যা প্রাইস ক্যাপে বেঁধে দেওয়া ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের চেয়ে ঢের বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here