অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেবে চীন। খবর নিক্কেই এশিয়া।
বিদ্যুতচালিত গাড়ির নির্মাণে ব্যবহৃত নিকেলের মতো খনিজের বড় উৎস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। চীনের বিকাশমান ইভি শিল্পের জন্য উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোয় বিআরআইয়ের অধীনে বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে সেটা ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারে নেমে আসে। মে ব্যাংক সিঙ্গাপুরের জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিনিয়োগ ৭২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো গুওনান মা জানান, আগামী পাঁচ বছরে বিআরআই বিনিয়োগ কমে যাবে। কার্বন নিঃসরণ মুক্ত করার পথে রূপান্তর ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সহযোগী অধ্যাপক উ আলফ্রেড মুলুয়ান জানান, পশ্চিমের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বিনিয়োগ বাড়াবে।
মালাক্কা প্রণালি ও দক্ষিণ চীন সাগরের সমুদ্র পথের অবস্থানের কারণে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এ পথ দিয়ে চীনের পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিবহন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান টানাপড়েনের মধ্যে এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়েছে। যে কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের কাছে কৌশলগত স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক কিম লেং জানান, একই সময়ে কাঁচামাল সুরক্ষিত করার পাশাপাশি সরবরাহ চেইন এবং বৈদেশিক অংশীদারত্ব জোরদার করার জন্য চীনের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রকল্প অব্যাহত থাকবে। উ আলফ্রেড মুলুয়ান সতর্ক করে দিয়ে জানান, মূলধন নিয়ন্ত্রণের কারণে বেসরকারি চীনা কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে তহবিল পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এ অঞ্চলে চীনা অর্থনীতির ধীরগতির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কুয়ালালামপুরভিত্তিক সোসিও-ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লি হেং গুই জানান, চীনের মন্দাভাব বিশ্ব অর্থনীতি, পণ্য ও জ্বালানি তেলের বাজারের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য একটি ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর আগে চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। তারা বিদেশে প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করছিল, যা আন্তর্জাতিক পর্যটন খাতে মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ।
অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে চীন। দেশটির অর্থনীতির গতি ধীর হওয়ায় আসিয়ান অঞ্চলে প্রকল্পগুলোয় ঋণ পরিশোধের শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা আগামীতে আরো চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতি শক্তিশালী রয়েছে। ভূরাজনৈতিক স্বার্থ ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সম্পদ ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে এ অঞ্চল।