কনটেইনারবাহী জাহাজে অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ছে

গত এক দশকে কনটেইনারবাহী জাহাজে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিলের (ডব্লিউএসসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বীমাকারী প্রতিষ্ঠান টিটি ক্লাবের হিসাব অনুযায়ী, শিপিং খাতে প্রতি ৬০ দিনে একটি করে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সমুদ্র পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ এবং সরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তা সত্তে¡ও কার্গোতে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের সময় পণ্যের মালিক শিপিং কোম্পানির কাছে তথ্য গোপন করায়, ভুল তথ্য প্রদান, ভুল লেবেল লাগানো এবং সঠিক নিয়মে পণ্য কনটেইনারজাত না করায় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

জার্মান বহুজাগতিক আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা আলিয়াঞ্জ কমার্শিয়ালের ‘২০২৩ আলিয়াঞ্জ সেফটি অ্যান্ড শিপিং রিভিউ’ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ৬৪টি কনটেইনারবাহী জাহাজে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। বছরওয়ারি হিসেবে ২০২২ সালে সমুদ্রে অগ্নি দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আঞ্চলিক জলসীমায় পানামার পতাকাবাহী একটি এমএসসি কনটেইনার জাহাজে আগুন লেগে একজন আহত হন।

ডবিøউএসসির মতে, সামুদ্রিক পরিবেশের সুরক্ষা, কার্গো, জাহাজ ও জাহাজে থাকা ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

ডবিøউএসসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট জন বাটলার বলেন, কার্গোর নিরাপত্তা জোরদার করতে গোটা শিপিং খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করলে জাহাজের ক্রুদের পাশাপাশি বন্দর, টার্মিনাল এবং স্থলপথে পণ্য পরিবহনের সাথে যুক্ত সকল কর্মীর জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষও ঝুঁকির আওতামুক্ত থাকবে। বিপজ্জনক চালান ঠেকাতে পারলে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতা ও নির্ভরতার সাথে পণ্য আনা-নেওয়া করবে এবং এর ফলে পণ্যের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত থাকবে।

পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্ক্রিনিং প্রসেস এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করে। ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলোর মতো করে একটি কার্গো স্ক্রিনিং ও অনুসন্ধান প্রক্রিয়া তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে ডবিøউএসসি, যা শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ব্যবহার করতে পারবে।

ডবিøউএসসির স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ ‘কার্গো সেফটি প্রোগ্রাম’ ডিজিটাল সলিউশনের ওপর নির্ভর করে কাজ করবে। প্রোগ্রামটি একটি সার্বজনীন স্ক্রিনিং টুল, ভেরিফায়েড শিপার ডাটাবেস এবং কনটেইনার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদিত ডাটাবেসের ভিত্তিতে শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে।

বিপজ্জনক কার্গোসহ কনটেইনারগুলো সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভুক্ত হবার আগেই এর ভয়াবহতা শনাক্তকরণ এবং সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডবিøউএসসি। ডবিøউএসসির প্রোগ্রামটি মূলত বুকিং তথ্য যাচাই বাঁছাই করে কার্গোর ঝুঁকি নিরুপণ করবে এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বুকিংগুলোকে চিহ্নিত করে সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান চালানোর পরামর্শ প্রদান করবে।

উল্লেখ্য, তৃতীয় একটি স্বতন্ত্র পক্ষ ডবিøউএসটির হয়ে ডিজিটাল টুল তৈরি এবং কার্গো সেফটি প্রোগাম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here