করোনায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে আরও সমন্বয় বাড়াতে হবে

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনা রোধে ২৬ মার্চ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটিসহ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে সাপ্লাই চেইন তথা বন্দরগুলোকে সচল রাখার বিকল্প নেই। বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। তাই একে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন, যার স্লোগান হলো, ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস’। সুতরাং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে সামান্যতম নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা পুরো দেশের অর্থনীতির ওপরই বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও আতঙ্কের ভয়াল থাবা মেলে দেওয়া কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেও ২৪ ঘণ্টা সচল থেকেছে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা ও সরবরাহের কাজ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আরও বেশ কিছু দিন করোনা স্বরূপে বিস্তৃতি ঘটাতে থাকবে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বন্দর চালু রাখলেই হবে না, এর পুরো সুফল পেতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে আরও সমন্বয় বাড়াতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে হতে হবে একে অপরের সহায়ক। তাহলেই এই করোনা সংকটেও সম্ভব বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে দেশের অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত রাখা।

করোনার লকডাউনে বন্দর চালু থাকলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সর্তক থেকেছে বন্দর। কর্মীদের জন্য সাবান, পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে বন্দরের কর্মকর্তা এবং ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম প্রস্তুত করা হয়, যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন পোর্ট হেলথ অফিসার। জাহাজ থেকে হাসপাতালে দ্রুত রোগী স্থানান্তরের জন্য বন্দরের অ্যাম্বুলেন্স শিপ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর ইমিগ্রেশন ডেস্কে পোর্ট হেলথ অফিসারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছে। গত বছরের ১ জুলাই বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিশেষায়িত কোভিড ইউনিট চালু হয়। ১৩ জন ডাক্তার, ৩৬ জন নার্সসহ মোট ১৫৯ জন চিকিৎসাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এখানে। এ ছাড়াও বছর ধরে করোনা সংক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা বিধি-নিষেধ পালন করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর। অতিমারির দিনগুলো কেমন করে কাটাল বন্দর তার আদ্যোপান্ত রয়েছে এবারের প্রধান রচনায়।

মানুষের অকারণ হস্তক্ষেপে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিশ্বের শেষ বুনো এলাকা অ্যান্টার্কটিকা। ১২টা দেশের সরকার একত্রিত হয়ে সেই ৬০ বছর আগে একটা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার পোশাকি নাম অ্যান্টার্কটিকা ট্রিটি। এর মাধ্যমে এই মহাদেশকে যুদ্ধ, অস্ত্র ও পরমাণু বর্জ্য থেকে মুক্ত রাখতে একমত হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। অ্যান্টার্কটিকা চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এই অঞ্চল কোনো একক দেশের নেতৃত্বে থাকবে না। বরং সব দেশের বিজ্ঞানীরা মিলেমিশে সেখানে গবেষণা করবেন। কিন্তু তারপর সাগর-মহাসাগরে বয়ে গিয়েছে বহু জল। যুগ বদলেছে, বাণিজ্যের বিশ্বয়ন হয়েছে। বাদ যায়নি অ্যান্টার্কটিকাও। বর্তমানে সাউদার্ন ওশেনের কেবল ৫ শতাংশ এলাকা মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া হিসেবে বিবেচিত। জীববৈচ্যিত্রে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অ্যান্টার্কটিকা তাই অনেকটাই অরক্ষিত। বিশেষ করে রুক্ষ মহাদেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক পেনিনসুলার বায়োডাইভার্সিটি অত্যন্ত হুমকির মুখে আছে। বাণিজ্যিক ক্রিল ফিশিং, পর্যটন, গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বিলুপ্ত হতে বসেছে মেরিন ইকোলজির সূতিকাগার। অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে রয়েছে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এদেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here