উচ্চাভিলাষী বন্দর বিনিয়োগ জিবুতির অর্থনীতির জন্য শ্বেতহস্তী হতে পারে: আইএমএফ

সমুদ্রবন্দর ও বন্দর-সম্পর্কিত অবকাঠামোর ওপর ভর করে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় নামতে চাইছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতি। তবে তাদের এই উচ্চাশা ভবিষ্যতে হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সংস্থাটি বলছে, ‘আফ্রিকার সিঙ্গাপুর’ হয়ে ওঠার জন্য বন্দর অবকাঠামোর পেছনে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করছে জিবুতি। কিন্তু এই বাবল তাদের জন্য শ্বেতহস্তী হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত এই বিনিয়োগ তাদের অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। বলা যায়, বর্তমানে জিবুতির অর্থনীতি অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছে।

আইএমএফ জানিয়েছে, এই বিপুল বিনিয়োগের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জিবুতির অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে বটে। কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কর রাজস্ব আয়ের দিক থেকে এই বিনিয়োগ তাদের খুব বেশি সুফল এনে দেয়নি।

এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে আইএমএফ। প্রথমত, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে সরবরাহ শৃঙ্খলে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার আঁচ লেগেছে জিবুতির বন্দর কার্যক্রমেও। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী এথিওপিয়ার সঙ্গে চলমান বিরোধের কারণে দেশটি থেকে চাহিদা কমে গেছে। এই দুই প্রভাবকের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় জিবুতির বন্দর কার্যক্রমে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।

স্থলবেষ্টিত এথিওপিয়া জিবুতির বন্দরগুলোর বড় গ্রাহক। এথিওপিয়ার মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯৫ শতাংশই সম্পন্ন হয় জিবুতির বন্দরগুলো দিয়ে। আর এ থেকে প্রতি বছর ১৫০ কোটি ডলারের বেশি পোর্ট ফি আদায় করে জিবুতি। সুতরাং এথিওপিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি তাদের বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য বড় এক ধাক্কাই বটে।

ভিশন ২০৩৫ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী আফ্রিকার মেরিটাইম পাওয়ারহাউজ হয়ে উঠতে চাইছে জিবুতি। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, হর্ন অব আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হয়ে ওঠার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এ লক্ষ্য পূরণে ছয়টি বন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনাল, মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ও এথিওপিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী রেলপথ স্থাপনে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে জিবুতি। আর এই অর্থায়নের জন্য চীন, উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ করেছে তারা।

এই বিনিয়োগের কিছু সুফল এরই মধ্যে পেয়েছে দেশটি। গ্লোবাল কনটেইনার পোর্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্সে আফ্রিকার শীর্ষ বন্দর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে পোর্ট অব জিবুতি। কিন্তু একই সঙ্গে সামষ্টিকভাবে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জিবুতির সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়ে জিডিপির ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here