জলবায়ুসহিষ্ণুতা বন্দরশিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সমুদ্র পরিবহন খাত। শিল্পের অন্যতম অংশীদার হওয়ায় সমুদ্রবন্দরকে বাদ দিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বন্দরশিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনের কোনো বিকল্প নেই।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন অনেকাংশে সমুদ্র বাণিজ্যনির্ভর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় আরেকটি খাত সমুদ্র অর্থনীতি। এই দুই বিষয়ের প্রথমটি চলে আসছে মানবসভ্যতার শুরুর সময় থেকে। আর দ্বিতীয়টির চর্চা শুরু মাত্র কয়েক দশক হলো। তবে একটি জায়গায় অর্থনীতির এই দুটি অনুষঙ্গের মধ্যে মিল রয়েছে। সেটি হলো-উভয় ক্ষেত্রের উন্নয়নেই সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা অনিবার্য।

বন্দরগুলোর কারণেই বৈশ্বিক বাজার ও বিভিন্ন দেশের সাপ্লাই চেইন আজ এক সুতোয় গাঁথা পড়েছে। বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে, এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে। এছাড়া মৎস্য আহরণ, গভীর সমুদ্র বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্প্রসারণসহ উপকূলীয় আরও অনেক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে সমুদ্রবন্দর।

এ কারণে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির জন্য বন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, যারা বৈশ্বিক বাণিজ্য সচল রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সারা বিশ্বে বন্দরগুলোয় যে পরিমাণ পণ্য লোড-আনলোড হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশই হয় এসব দেশে।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি হলো প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কবল থেকে সমুদ্রবন্দরগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া। উন্মুক্ত উপকূলীয় এলাকা অথবা প্লাবনপ্রবণ মোহনায় অবস্থানের কারণে বিশ্বের সমুদ্রবন্দরগুলোকে প্রায়ই সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক ঝড়, উত্তাল ঢেউ, ঝোড়ো বাতাস, বন্যা, টেকটোনিক বিভিন্ন ঘটনা যেমন সুনামির মতো সামুদ্রিক ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে অসহায় হয়ে পড়তে দেখা যায়।

যেহেতু বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় সমুদ্রবন্দরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বন্দরগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অবকাঠামোগত ক্ষতি, কার্যক্রম বিঘিœত হওয়া ও বিলম্বের মতো ঘটনার শিকার হয়, সেহেতু বন্দরগুলোকে এসব দুর্যোগ থেকে সুরক্ষিত রাখা কৌশলগত আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বর্তমান যুগে একটি কথা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটস (এসআইডিএস) এবং অন্যান্য উপকূলীয় ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা ও উপকারিতাগুলো অনুসন্ধান ও কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। বহিঃবাণিজ্য, খাদ্য সরবরাহ, শক্তি ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পর্যটনের মতো খাতগুলোয় এসব দেশের জন্য প্রাণভোমরা হিসেবে কাজ করে সমুদ্রবন্দরগুলো। আঞ্চলিক ও আন্তঃদ্বীপ সংযোগ স্থাপন এবং আর্থ-সামাজিক সেতুবন্ধ স্থাপনের মাধ্যমে এসআইডিএসগুলোর অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে এই খাতগুলো।

জলবায়ু পরিবর্তন: প্রতিরোধের জন্য জানতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব কী পরিমাণ ঝুঁকিতে রয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা হয়তো পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নই। তা না হলে কি আর আমরা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাজগুলো করে থাকি? আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিবেচনাহীন কাজ সম্মিলিতভাবে পুরো বিশ্বকেই বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে। বাড়ছে দুর্যোগের ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিষয়গুলো দ্রুত অনুধাবন করতে না পারলে দুর্যোগ ও বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হয়ে যেতে পারে।

জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনডিআরআর) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ দুই দশকে প্রতিবছর ৩৫০ থেকে ৫০০টি মধ্যম থেকে ভয়াবহ মাত্রার দুর্যোগের শিকার হয়েছে বিশ্ববাসী, যা আগের তিন দশকের গড় ঘটনার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।

আশঙ্কার কথা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে ঘনঘন এসব দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আগামী দিনগুলোয় এ ধরনের দুর্যোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে এমন দুর্যোগের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে বছরে ৫৬০টি, যা গড়ে দৈনিক দেড়টির কাছাকাছি।

ইউএনডিআরআর মনে করছে, বিম্বজুড়ে দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় একটি কারণ, দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধিগত সমস্যা। অনেক সময় ঝুঁঁকির বিষয়গুলোকে ঠিকমতো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক সময় সাংগঠনিক কিংবা রাষ্ট্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও এমন মানসিকতা দেখা যায়।

ইউএনডিআরআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশকে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ক্ষতি প্রশমনে বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। সমস্যা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সংঘটিত দুর্যোগের বেশির ভাগ আঘাত হেনেছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয়। এসব দেশ তাদের জিডিপির ১ শতাংশেরও কম অর্থ দুর্যোগ প্রশমনে ব্যয় করে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ক্ষতির জেরে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে পারে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

২০১৭ সালে ক্যারিবীয় অঞ্চলে হারিকেনের তা-ব অনেক বেশি ছিল। এর কারণে অনেক স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটসই (এসআইডিএস) তাদের জিডিপির বড় একটি অংশ হারিয়েছিল। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক লোকসানের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৩২ হাজার কোটি ডলার

আইপিসিসির প্রতিবেদন কী বলছে?

দি ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) হলো জাতিসংঘের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যেটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সার্বিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে। বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন, এর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এবং পরিবর্তনের হার প্রশমনের উপায়গুলো পর্যালোচনা করে কম্প্রিহেনসিভ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে তিনটি কার্যনির্বাহী পর্ষদের প্রতিবেদন ও একটি সমন্বিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। এই তিন কার্যনির্বাহী পর্ষদের মধ্যে তৃতীয় পর্ষদ কাজ করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন নিয়ে। তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২২: মিটিগেশন অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে মানবসৃষ্ট উৎস থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধির ধারা ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দশ বছরেও অব্যাহত ছিল। এ সময়ে দূষকটির বার্ষিক গড় নিঃসরণ আগের যেকোনো দশকের চেয়ে বেশি ছিল। অবশ্য আলোচ্য সময়ে নিঃসরণ বৃদ্ধির হার ২০০০-২০০৯ মেয়াদের চেয়ে কিছুটা কম দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি খাতেই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বেড়েছে। বিশেষ করে নগর অঞ্চলে নিঃসরণ বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এখন শিল্প, শক্তি, সমুদ্র পরিবহন ইত্যাদি খাতে পরিবেশবান্ধব জালানিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর ফলে এসব খাতে নিঃসরণ কিছুটা কমেছে। তবে বর্তমানে নগর অঞ্চলে শিল্প, জ্বালানি সরবরাহ, পরিবহন, কৃষি ও ভবনগুলো থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, তার তুলনায় এই হ্রাসের পরিমাণ কম।

আইপিসিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে যে হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তাতে চলতি শতকের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। আর এ সময়ে উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছেন বিশ্বনেতারা। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ২০৩০ সালের পর থেকে নিঃসরণ প্রতিরোধে রীতিমতো আদাজল খেয়ে নামতে হবে বলে আইপিসিসি মনে করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি বন্দরের উদ্বেগ

বন্দর ও উপকূলীয় পরিবহন অবকাঠামোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন অত্যন্ত জটিল একটি ব্যবস্থা। স্বাভাবিক জোয়ারের সময় সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বেড়ে গেলেই অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সামুদ্রিক ঝড় ও উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এক্সট্রিম সি লেভেলের (ইএসএল) ঘটনা ও মাত্রা বেড়ে গেলে যে বন্দরগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়ে যায়, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশ্বের বেশির ভাগ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আধুনিক শহর। অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে উপকূলীয় ভূমির ওপর চাপ বাড়ায় এসব অঞ্চলের ওপর সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি হয়। এতে বন্দরগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই বন্দরকেন্দ্রিক নাগরিক সম্প্রদায়ও ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

যেসব অঞ্চলে উষ্ণম-লীয় ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক ঢেউয়ের প্রভাব বেশি হয়, সেসব অঞ্চলের বন্দরে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিলম্ব দেখা দেয়। আর এর কারণে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের লোকসান চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ করা যায়। সে বছর ক্যারিবীয় অঞ্চলে হারিকেনের তা-ব অনেক বেশি ছিল। আর এর কারণে অনেক স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটসই (এসআইডিএস) তাদের জিডিপির বড় একটি অংশ হারিয়েছিল। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক লোকসানের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৩২ হাজার কোটি ডলার।

২০১৯ সালে হারিকেন ডোরিয়ানের কারণে কেবল বাহামা দ্বীপপুঞ্জকেই প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছিল। এই ক্ষতির বড় একটি অংশই হয়েছিল পরিবহন অবকাঠামো খাতে। ২০১২ সালে হারিকেন স্যান্ডির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেক্টিকাটের ক্ষতি হয়েছিল ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। সেই দুর্যোগের কারণে নিউইয়র্ক/নিউজার্সির কনটেইনার পোর্টের কার্যক্রম প্রায় সপ্তাহখানেক বন্ধ ছিল।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে অনিয়মিত উপকূলীয় বন্যার কারণে ২১০০ সাল নাগাদ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১২-২০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এরই মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে দেখা গেছে। ২০৩০-এর দশকের শুরুর দিকে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উপকূলীয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর।

বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা না গেলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আঘাত হানতে থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০-এর দশকের মধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। অবশ্য এটি নির্ভর করছে আগামী তিন দশকে আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি তার ওপর।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় সারা বিশ্বে নিঃসরণের পরিমাণ কিছুটা কমতে দেখা গেছে। এছাড়া শিল্পোৎপাদন, সমুদ্র পরিবহন, শক্তি ও জ্বালানি ইত্যাদি খাতে সবুজ বিপ্লবের দাবি জোরাল হচ্ছে। সরকারগুলোকেও নিঃসরণ প্রতিরোধের পক্ষে আরও বেশি শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। তারপরও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে যে আমরা খুব একটা সফল হচ্ছি, তা বলা যাবে না। জাতিসংঘের জলবায়ু কর্মসূচির (ইউএনইপি) সর্বশেষ এমিশন গ্যাপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঢের বেশি। এই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নিচে এবং সম্ভব হলে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রশিল্পে কী প্রভাব পড়বে, সে বিষয়টি একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রথমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, যার কারণে মেরু অঞ্চলের আইস শিট, হিমবাহ ইত্যাদি গলতে শুরু করবে। দ্বিতীয়ত, বরফ গলার কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। তৃতীয়ত, সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে এবং ল্যান্ড ওয়াটার স্টোরেজে পরিবর্তন আসবে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে প্রতি দশকে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি (এসএলআর) গড়ে ৪ সেন্টিমিটার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসএলআরের এই আনুমানিক হিসাব প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ২১০০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক এসএলআর ১৯৮৬-২০০৫ মেয়াদের গড় মানের চেয়ে ৩০-৯৩ সেন্টিমিটার বেশি দাঁড়াবে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো মিন সি লেভেল যত বেশি হবে, এর সঙ্গে চরম উত্তাল সামুদ্রিক ঢেউ, ঝড় ও জোয়ার যুক্ত হয়ে বিধ্বংসী এক্সট্রিম সি লেভেল (ইএসএল) ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা যত বাড়বে, বিশ্বের সমুদ্রবন্দরগুলো তত বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্দরের ক্ষতি

২০০৫ সালে আটলান্টিকের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হানলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট কৃষিজ পণ্যের ৪৫ শতাংশ হ্যান্ডলিংকারী শীর্ষ তিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যায় ৩ শতাংশ। একইভাবে ২০১৭ সালে টেক্সাস ও লুইজিয়ানায় আঘাত হানা ক্যাটাগরি ফোর হারিকেন হার্ভির কারণে বেড়ে যায় জ্বালানির মূল্য।

এ দুটি উদাহরণ দেওয়ার কারণ হলো, সামুদ্রিক ঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগের কারণে বন্দর ও জাতীয় অর্থনীতিতে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে একটি ধারণা লাভ করা। অবস্থানগত কারণেই সমুদ্রবন্দরগুলো প্রকৃতির কাছে সমর্পিত। অন্যদিকে ৮০ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সুবাদে বন্দরগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যের অবশ্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। সুতরাং বন্দরের কার্যক্রমে যেকোনো বিঘ্ন ঘটলে বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর তার যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বন্যার কারণে বন্দরের কার্যক্রম ও বাণিজ্যে কী ধরনের ক্ষত তৈরি হয়, তার স্বরূপ জানার জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরকে মডেল হিসেবে ধরা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বন্যার কারণে বন্দর অবকাঠামোর সরাসরি ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই, এর পাশাপাশি সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের খরচ ৬৪  থেকে ৮৬ শতাংশ বেড়ে যায়। 

এ তো গেল একটি বন্দরকেন্দ্রিক মডেলভিত্তিক হিসাব। সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে? এটি জানার জন্য ফোর  টোয়েন্টি সেভেন নামের একটি জলবায়ু-ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে একটি পর্যালোচনা কার্যক্রম পরিচালনা করে দ্য ইকোনমিস্ট। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বের প্রায় সাড়ে তিনশ বড় বন্দরের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা বিশ্লেষণ করে তারা। বিশ্লেষকরা বন্দরগুলোর টিইইউভিত্তিক বার্ষিক হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যান ও তাদের কার্যক্রমের ওপর প্রাকৃতিক ছয় ধরনের ঘটনার প্রভাব পর্যালোচনা করেন। তারা দেখেছেন, এসব বন্দর দিয়ে সম্পন্ন ৫৫ শতাংশ বৈশ্বিক বাণিজ্য অন্তত এক ধরনের দুর্যোগের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া ৮ শতাংশ বাণিজ্য তিন অথবা তার বেশি ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে।

কিছু বন্দরে, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর বড় বন্দরগুলোয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ বন্দরেরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকে না। বিশেষ করে যেগুলো প্রাচীন বন্দর, সেগুলোর অবকাঠামো অনেক আগে নির্মিত হওয়ায় সেই প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগও কম থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় লেক মিশিগানের বন্দরের কথা, যেটির বেশির ভাগ অংশই নির্মিত ১৯৬০-এর দশকে।

৬৭টি বন্দরের ওপর পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা কোনো পরিবেশগত ঝুঁকি পর্যালোচনা করেছে কিনা অথবা আগে থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য কোনো প্রযুক্তি স্থাপন করেছে কিনা অথবা আকস্মিক কোনো দুর্যোগ আঘাত হানলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে কিনা। ফলাফলে দেখা গেল, মাত্র ১৫ শতাংশ বন্দর তিনটি পদক্ষেপই নিয়েছে। আর এক-পঞ্চমাংশের বেশি বন্দর কোনো ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

বন্দরকে দুর্যোগ সহনশীল হিসেবে গড়ে না তুলতে পারার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই দায়িত্ব কে নেবে, সে বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকা। অনেক বন্দর রয়েছে যেগুলো সরকারি মালিকানাধীন, কিন্তু পরিচালিত হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক। আবার বন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও বিভিন্ন সংস্থার ওপর ন্যস্ত থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ঝড় প্রতিরোধক ব্যারিয়ার নির্মাণের দায়িত্ব আর্মি কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের। বন্দর সংযোগকারী রাস্তাগুলোর নির্মাণ ও সংস্কারের কর্মভার বর্তায় রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওপর। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দায়িত্ব পালনের বিষয়ে এসব সংস্থার মধ্যে সঠিক সমন্বয় হচ্ছে না।

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আরেকটি বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থায়ন; বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য। বিভিন্ন বন্দরকে প্রায়ই তহবিল সংগ্রহের জন্য উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। কিন্তু এই ধরনের ব্যাংকগুলো সাধারণত বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করে। একটি বন্দরের জন্য ছোট আকারের তহবিল সংগ্রহ করার কাজটা আসলেই কঠিন।

তবে বন্দরগুলো যে এসব সমস্যা নিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে, তা নয়। বন্দরভিত্তিক ও বৈশ্বিকভাবে দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড বন্দর ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্তদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য বন্দরগুলোর মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে নেটওয়ার্ক। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যেও গড়ে উঠছে সমন্বয়।

ক্যাটারিনার আঘাতে বিপর্যস্ত গালফপোর্ট। ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হানলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট কৃষিজ পণ্যের ৪৫ শতাংশ হ্যান্ডলিংকারী শীর্ষ তিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যায় ৩ শতাংশ

উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দিতে হবে বিশেষ নজর

সমুদ্রশিল্পের জন্য বর্তমানে জলবায়ু-সম্পর্কিত দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে দূষণ ও নিঃসরণের মাধ্যমে সমুদ্র পরিবহনের কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার (যেমন ঝড়, অতি উচ্চ তাপমাত্রা, উষ্ণপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি) কারণে সমুদ্র পরিবহন ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির মেরুদণ্ডই হলো বৈদেশিক বাণিজ্য। স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক বাাণিজ্যের মুক্তপ্রবাহের ওপর নির্ভর করছে এসব দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ। অন্যদিকে বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণভোমরা হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো। আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ আমদানি হয়, তার ৬৩ শতাংশ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। রপ্তানির ক্ষেত্রে এ হার ৬০ শতাংশ।

আঙ্কটাডের উদ্বেগের কেন্দ্রও রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বন্দর ও উপকূলীয় পরিবহন অবকাঠামো। বিশেষ করে স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটসগুলোর (এসআইডিএস) ক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে তারা। সংস্থাটি পরিবহন নীতি ও বিধিবিধান নিয়ে তাদের কাজের অংশ হিসেবে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বন্দরের সুরক্ষা নিয়েও কাজ করছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসআইডিএসগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে। কারণ তাদের স্থলভূমি সীমিত, অর্থনীতির আকার ছোট, জনসংখ্যাও কম। এছাড়া দূরবর্তী অবস্থানের কারণে প্রকৃতির যেকোনো বিরূপ আচরণে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে তাদের।

এসআইডিএসগুলোর জন্য সমুদ্রবন্দর যে কেবল বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। বরং তাদের খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পর্যটন খাতের বিকাশ ও দুর্যোগকালীন ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যও বন্দরগুলো সচল থাকার কোনো বিকল্প নেই।

অর্জন করতে হবে সহিষ্ণুতার সক্ষমতা

বন্দরের সুরক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিল ও সহনশীলতার সক্ষমতা অর্জনের জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে নীতিনির্ধারক, খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত পদক্ষেপ একান্ত জরুরি।

আন্তঃসংযোগে যুক্ত বিশ্বে সব পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় থাকতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে এবং সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন টেকসই উপায়ে না হলে বন্দরের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা জাতীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যে ভয়ানক ক্ষত তৈরি করতে পারে। এ কারণে সরকারগুলোর টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু কৌশলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্দরের সুরক্ষা অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হওয়া প্রয়োজন।

জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের গোল ৯, ১৩ ও ১৪ এবং টার্গেট ১ দশমিক ৫ পূরণে মূল ভূমিকা রাখবে সমুদ্রবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পরিবহন অবকাঠামোর জলবায়ুসহিষ্ণুতা সক্ষমতা অর্জন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি যেমন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন, এসআইডিএস অ্যাকসিলারেটেড মোডালিটিজ অব অ্যাকশন (সামওয়া) পাথওয়ে, ইস্তাম্বুল প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন ফর দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ, নিউ আরবান এজেন্ডা ইত্যাদি বাস্তবায়নে অগ্রগতি অর্জনের জন্যও বন্দর ও উপকূলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার সুরক্ষা প্রয়োজন।

বন্দরের সহিষ্ণুতা সক্ষমতা বাড়াতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে কার্যকর করার জন্য সবার আগে যে উদ্যোগটি দরকার, সেটি হলো যথোপযুক্ত ঝুঁকি মূল্যায়ন। এরপর তথ্য ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যেসব অসমতা ও ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। তারপর সঠিক প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সমাধান প্রণয়ন করতে হবে, যা বন্দরের ভঙ্গুরতা কমানো ও দুর্যোগকালীন অনিশ্চয়তার সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।

যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজন হয়। বন্দর অবকাঠামোর উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকারগুলোকে এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সমন্বিত নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং সহায়ক আইনি ও নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

সমুদ্রশিল্পে দূষণ ও নিঃসরণ বড় এক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব বন্দরের ওপরও পড়ে। সুতরাং নিঃসরণ প্রতিরোধীন মানদ-, দিকনির্দেশনা ও পদ্ধতিগত টুলসগুলো বন্দরের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জ্বালানি দক্ষতা, নিঃসরণ প্রতিরোধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ উষ্ণায়ন প্রশমনের প্রচেষ্টায় সুফল বয়ে আনবে। আর এতে যে বন্দরগুলো লাভবান হবে, তা বলাই বাহুল্য।

জলবায়ু-সহিষ্ণুতার পেছনে বিনিয়োগ করলে জাতীয় অর্থনীতি সুবিধাভোগী হবে, তা বিশ্বব্যাংকও জোর দিয়ে বলছে। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, দুর্যোগ-সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিট লাভের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগের বিপরীতে দেশগুলো ফেরত পাবে ৪ ডলার করে।

সঠিক দিকনির্দেশনা ও পূর্বপ্রস্তুতির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে তেমন অচলাবস্থা তৈরি হয়নি

প্রসঙ্গ চট্টগ্রাম বন্দর

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে সামুদ্রিক ঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, উত্তাল ঢেউয়ের হানা নৈমিত্তিক ঘটনা। এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সাইক্লোন ও বন্যার তাণ্ডব দেখেছে।

বাংলাদেশের মৌসুমি জলবায়ু যেমন একদিকে আশীর্বাদ, আবার অন্যদিকে তা জানমালের বহু ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি বছর মৌসুম পরিবর্তনের সময় বঙ্গোপসাগরে উচ্চ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকেও প্রায়ই এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত সইতে হয়। এসব দুর্যোগের কারণে বন্দরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

প্রকৃতির বিরূপ আচরণকে তো আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, আবার বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হলে দেশের বাণিজ্যের গতিও থমকে যাবে। তাহলে এই দুই অলঙ্ঘনীয় বিষয় মোকাবিলায় আমাদের করণীয় কী? সেক্ষেত্রে আমাদের দুর্যোগের প্রভাব যত কম পড়ে এবং যত দ্রুত বন্দরকে পুনরায় সচল করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। আর এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রণয়ন করা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা।

পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বন্দর এলাকার প্রাণ ও সম্পদের সুরক্ষা প্রদান, যতটা সম্ভব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম রাখা এবং যত দ্রুত সম্ভব বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা।

সাইক্লোন আঘাত হানলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সব ডিপার্টমেন্টের সমন্বিত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই পরিকল্পনায়, যেন সবকিছু সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুরক্ষিত রাখা যায়। তবে বাস্তবতা হলো, মানুষের সব প্রচেষ্টাই যে সবসময় সফল হয়, তেমনটা নয়। বরং আমরা যা অনুমান করি, পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। আবার সাইক্লোনের আচরণও যে সবসময় একই রকম হয়, তা-ও নয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্দরের সব অংশীজনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবাইকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগকালে এক অংশীজনের সহায়তায় অন্যরা এগিয়ে আসবে-এই আশায় বসে থাকা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে না। বরং ‘সেলফ হেল্প ইজ দ্য বেস্ট হেল্প’-এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নিজেকে উদ্ধারে নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা, ১৯৯২-তে যেসব পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে, তার কোনোটির কম্পায়েন্সে ব্যর্থ হলে সেই ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ, কর্তৃপক্ষ অথবা সংস্থা আইনের আদেশ অমান্য করেছে বলে বিবেচিত হবে এবং তার/তাদের বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর এরই মধ্যে এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল বন্দরের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষ করে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বন্দরের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। ১৯৭৭ সালে মাত্র ছয়টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে কনটেইনার সেবা কার্যক্রম শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে প্রতিবছর ৩০ লাখ টিইইউর (বিশ ফুট সমমান ইউনিট) বেশি কনটেইনার  হ্যান্ডলিং করছে। বিশ্বের কনটেইনার হ্যান্ডলিংকারী বন্দরসমূহের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক জার্নাল লয়েড’স কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ ১০০ কনটেইনার পোর্টের তালিকা প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের একমাত্র বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৯ সালে ৯৮তম স্থানে অবস্থান করে এই তালিকায় নাম লেখায়। পরবর্তী ১০ বছরে অভূতপূর্ব সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে উক্ত তালিকায় ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০১৯ সালে ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়।

এই যে উন্নতি, তার গতি ধরে রাখতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প নেই। সুপ্রাচীন একটি বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্কারের মাধ্যমে যতটুকু সক্ষমতা অর্জন করা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর তার সর্বোচ্চটাই করেছে। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও বন্দরের কার্যক্রমে তেমন অচলাবস্থা তৈরি হয়নি।

সরকারের রূপকল্প-২০৪১-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী চ্যানেলের বাইরে বঙ্গোপসাগরের তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে বে টার্মিনাল। ২০৪১ সালের হ্যান্ডলিং চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে বন্দরের সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম বড় প্রভাবক হতে যাচ্ছে এটি। এতে থাকছে তিনটি টার্মিনাল। অন্তত ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১২ মিটার ড্রাফটের ৪-৫ হাজার টিইইউ কনটেইনার জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। নতুন অবকাঠামো হওয়ায় বে টার্মিনালকে সম্পূর্ণরূপে জলবায়ুর প্রভাব-সহিষ্ণু করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া ও সমুদ্রের সরাসরি ঢেউ থেকে টার্মিনালকে রক্ষা করতে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে শুরু হয়েছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্মীয়মাণ মাতারবাড়ী মাল্টি-পারপাস টার্মিনালটি চালু হয়ে যাবে। তখন ১৬ মিটার বা তার বেশি ড্রাফটসম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর একে সাব-রিজিওনাল হাব পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করবে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এই গভীর সমুদ্রবন্দরেও নির্মাণ করা হচ্ছে ব্রেক ওয়াটার বাঁধ। এছাড়া চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার বিষয়ে আগেভাগেই সতর্ক হওয়া ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে স্থাপন করা হচ্ছে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি।

উপসংহার

ভূপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশের বেশি অংশজুড়ে রয়েছে সাগর-মহাসাগর। তাই বৈশ্বিক জলবায়ুতে এই সুনীল জলরাশির স্বাভাবিকতা বজায় রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। সমুদ্র পরিবহন খাতের পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতির উত্তরোত্তর অগ্রগতির জন্যও বিষয়টি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

সমুদ্রশিল্পের বড় একটি স্টেকহোল্ডার হলো সমুদ্রবন্দর। বিশ্ববাণিজ্যের গতি স্বাভাবিক রাখার প্রাণভোমরা এটি। বন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এলে বৈশি^ক সাপ্লাই চেইনে কীরূপ প্রভাব পড়ে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভালোভাবেই উপলব্ধি করা গেছে। এমনিতেই চাহিদা ও সক্ষমতার অসামঞ্জস্যের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্দরের কার্যক্রম থমকে গেলে তা সাপ্লাই চেইনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।

সমুদ্রভিত্তিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ হওয়ায় সামুদ্রিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে বন্দরগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে। তাই বন্দরের সুরক্ষায় নজর না দিলে সমুদ্র পরিবহন খাতের টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে। কেবল জাহাজের বহর কিংবা পরিবহন সক্ষমতা, বন্দরের হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বাড়ালেই চলবে না। বন্দরগুলো যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে সবসময় সচল থাকে, সেই বিষয়টাও নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিহত করা নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক। কিন্তু এর সঙ্গে বন্দরগুলোর দুর্যোগ-সহিষ্ণুতা বাড়ানো না হলে তা সমুদ্রশিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here