বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রায় সারথি চট্টগ্রাম বন্দর

বাংলাদেশের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিং এখন তৈরি পোশাক খাত। মেড ইন বাংলাদেশ বলতেই তাই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকই সর্বাগ্রে আলোচনায় চলে আসে। বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে তৈরি পোশাকশিল্প। এই খাতটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। দেশের মোট রপ্তানি পণ্যের ৮০ শতাংশের অধিক তৈরি পোশাক। সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এই খাতের উন্নয়ন এখন বিস্ময়কর। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বড় মাপ ও মানের ভার্টিক্যাল সেট-আপ কিংবা পূর্ণাঙ্গ পোশাককারখানা গড়ে উঠেছে। বিশ্বের ১৫০টির অধিক দেশ এখন বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে। পরিবেশবান্ধব পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রেও এসেছে অভাবনীয় উন্নতি। দেশে বর্তমানে লিড সার্টিফাইড গ্রিন পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় ১৬০টি। এর মধ্যে ৪৮টি প্ল্যাটিনাম মানের। বিশ্বের প্রথম সারির ১০০টি সবুজ কারখানার মধ্যে ৪০টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও প্রায় ৫০০টি কারখানা লিড সনদের জন্য আবেদন করেছে। দেশের মোট জিডিপিতে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। এ খাতের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। সাড়ে তিন হাজারের অধিক কারখানায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই পোশাক রপ্তানি আয় ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পোশাক খাতের অপ্রতিরোধ্য প্রবৃদ্ধি বিশ্বের ১৬৭টি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে এসেছে।

আর তৈরি পোশাকশিল্পের এই অগ্রযাত্রার প্রথম থেকেই সারথির ভূমিকায় ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এই রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় সবটুকুই পরিবাহিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর কর্তৃপক্ষ রপ্তানি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শিপমেন্ট অর্ডার নেওয়ার ক্ষেত্রে কাট অব টাইম এবং বন্দরে পণ্য আনার সময়সীমার ক্ষেত্রে গেট ইন টাইম সুবিধা দিচ্ছে। এতে করে সাধারণ রপ্তানিকারকদের চেয়ে শিপমেন্ট অর্ডারে ২৪ ঘণ্টা এবং বন্দরে পণ্য আনার ক্ষেত্রে ৩ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা। এছাড়া রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার সহজে পরিবহন ও জাহাজীকরণে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল (এনসিটি ও সিসিটি) ও জেনারেল কার্গো বার্থে ডেডিকেটেড ইয়ার্ড রয়েছে। এসব সুবিধা ছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বন্দরের হ্যান্ডলিং চার্জ ও পণ্য সংরক্ষণ চার্জে ছাড় পেয়ে আসছে। যাতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। পোশাকশিল্পের মেড ইন বাংলাদেশ হয়ে ওঠা এবং তার নেপথ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের প্রধান রচনায়।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এখন বিশ্বনেতাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে গত বছর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক সম্মেলন কপ২৬-এ ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে স্বাক্ষর করে ২২টি দেশ। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলো। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য সমুদ্র পরিবহন খাতে কয়েকটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা। গ্রিন করিডোর হলো এমন একটি শিপিং রুট, যেখানে কোনো নিঃসরণ থাকবে না। এসব রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো ব্যবহার করবে সবুজ জ্বালানি। গ্রিন করিডোর আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ হবে না। দুই বা ততোধিক বন্দরের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব করিডোর গড়ে উঠবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে যেসব বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা গেছে, তাতে অনেকাংশে দায় রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের। তাই গ্রিন করিডোরের সুফল পাবে বাংলাদশেও। বিস্তারিত রয়েছে ‘পরিবেশ ও জলবায়ু’ বিভাগের বিশেষ প্রতিবেদনে।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here