মেড ইন বাংলাদেশ অগ্রযাত্রায় সারথি চট্টগ্রাম বন্দর

তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। ষাটের দশকে শুরু হয়ে সত্তরের দশকের শেষার্ধে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে আবির্ভাব হওয়া খাত এখন বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। বিশ^বাণিজ্যে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে তৈরি পোশাকশিল্প। আর এই অগ্রযাত্রার প্রথম থেকেই সারথির ভূমিকায় আছে চট্টগ্রাম বন্দর।

নভোযান অ্যাপোলো-১১ এ করে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের বুকে প্রথমবারের মতো মানুষের পদচিহ্ন আঁকেন নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন। আর এতেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হন তাঁরা। পাঠ্যবই, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা গবেষণাপত্র সবজায়গাতেই ঠাঁই করে নিয়েছেন। এই তিন নভোচারী বাংলাদেশে এসেছিলেন চন্দ্রাভিযানের কয়েক মাস পর অক্টোবরে। ওয়ার্ল্ড গুডউইল ট্যুরের অংশ হিসেবে তাঁদের বাংলাদেশে আসা। ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তিন নভোচারীর সম্মানে আয়োজন করা হয়েছিল নাগরিক সংবর্ধনার। শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়ে পুরো হোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এই ভিড়ে রিয়াজউদ্দিন নামের একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও ছিলেন, যিনি নিজের দোকানে বানানো তিনটি শার্ট নিয়ে গিয়েছিলেন তিন নভোচারীকে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে দিতে। সেদিন রিয়াজউদ্দিনের উপহার সানন্দ্যে গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা এবং দিয়েছিলেন ধন্যবাদসমৃদ্ধ একটি চিঠিও। আর এতেই খুশি রিয়াজউদ্দিন।

সবাই যখন চাঁদে পদচিহ্ন এঁকে দেওয়া তিন নভোচারীকে নিজ চোখে দেখার খুশিতে উদ্বেল, তখন রিয়াজউদ্দিনের মনে ছিল অন্য চিন্তা। রিয়াজউদ্দিন স্বপ্ন দেখছিলেন নিজের ব্যবসাকে বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার। তিনি ভাবছিলেন, তিন আমেরিকান নভোচারী যদি তাঁর বানানো শার্টের প্রশংসা করতে পারেন, তাহলে তা হয়তো অন্য পশ্চিমা নাগরিকরাও পছন্দ করবে।

তিন নভোচারীর প্রশংসা পাওয়ার পর রিয়াজউদ্দিন বেশ কয়েকবার করাচিতে যান ‘রিয়াজ শার্ট’ রপ্তানি করা যায় কিনা, সে সুযোগ খুঁজে বের করতে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণে তাঁর পরিকল্পনা থমকে যায়। তখন চকবাজারের অন্যসব দোকানের সাথে রিয়াজউদ্দিনের পোশাক সেলাইয়ের দোকান এবং কারখানাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দেয়।

স্বাধীনতার পর রিয়াজউদ্দিন নতুন করে  ব্যবসা শুরু করেন ১৯৭৩ এ। তিনি এর নাম দেন রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম তৈরি পোশাক কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পান। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রিয়াজউদ্দিন তখন ব্যাংকিং ও বাজারজাতকরণ বিভাগ পরিচালনা শুরু করেন এবং উৎপাদন বিভাগের দায়িত্ব দেন ভাতিজা মাইজুদ্দিনকে। নতুন পদযাত্রায় তাঁরা বেছে নেন এক সৃজনশীল বিজ্ঞাপন। নিজেদের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ধারণাকে ছড়িয়ে দিতে রিয়াজ শার্ট একটি বাইসাইকেল রেসে অর্থায়ন করে। কলকাতার মোহনবাগান ক্লাবের খেলোয়াড়রা যখন বাংলাদেশে আসেন, তাদের রিয়াজ শার্ট উপহার দেওয়া হয়। মোহনবাগানের জনপ্রিয় খেলোয়াড চুনি গোস্বামীর ছবি ও তার প্রশংসাসংবলিত একটি পোস্টার তখন সংবাদপত্রে ছাপা হয়। নায়করাজ রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি অভিনেতা আবদুর রাজ্জাককে রিয়াজ শার্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়।

পরের বছর তৎকালীন টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের সচিব ইদ্রিস রিয়াজউদ্দিনকে আশার আলো দেখান। তাঁর সহায়তায় রিয়াজ শার্টের নমুনা ফ্রান্সে পাঠান রিয়াজউদ্দিন। রিয়াজ শার্টের উন্নত মান দেখে তারা কিনতে আগ্রহী হন। এর পরই রিয়াজউদ্দিন উর্দু রোডে দেড় কাঠা জমির উপর তাঁর কারখানা সম্প্রসারণ করেন। সেলাই মেশিনের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয় এবং নিতে হয় আরও কর্মী। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই রিয়াজউদ্দিন ১০ হাজার ‘রিয়াজ শার্ট’ ফরাসি ক্রেতা হলান্ডার ফ্রঁসের কাছে রপ্তানি করেন। শার্টের ওই চালানের দাম ছিল বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এটিই ছিল বাংলাদেশ থেকে প্রথম পোশাক রপ্তানি।

একই বছর রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা দেখে শিল্পপতি নুরুল কাদের খান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির সাথে মিলে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠা করলেন দেশ গার্মেন্টস, যা ছিল দেশের প্রথম শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। পরের দুই বছরে আরও তিনটি রপ্তানি অর্ডার পায় রিয়াজ গার্মেন্টস। এভাবেই বিশ্বের বাজারে জায়গা করে নিতে থাকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক।

বাংলাদেশই কেন

শুরুতে শতভাগ রপ্তানিমুখী এই শিল্প খাত আমদানীকৃত কাঁচামাল-নির্ভর ছিল পুরোপুরি। এই নির্ভরশীলতার কারণে পরিস্থিতি ছিল নাজুক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এবং উন্নতি হয়েছে বিস্ময়কর। স্থানীয় উদ্যোক্তারা পশ্চাৎ-সংযোগ শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং স্থানীয়ভাবেই দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানসম্পন্ন রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড় উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া পোশাকশিল্প রং ও প্রক্রিয়াজাত করার পর কাপড় কেটে এবং সেলাই করে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তর করার যোগ্যতা অর্জন করেছে অনেক আগেই। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের শক্তিশালী অবস্থানের পেছনে ১০টি কারণ দেখছেন। এগুলো হলো অভিজ্ঞতা, তুলনামূলক বাজারদর, আন্তর্জাতিক মান, নিবেদিত ও দ্রুত কৌশল আয়ত্ত করতে পারা জনবল, উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি, গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার দ্রুত বাস্তবায়ন, কমিটমেন্ট, ভার্সালিটি ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সুবিধা।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বড় মানের ভার্টিক্যাল সেট-আপ কিংবা পূর্ণাঙ্গ পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত সবকিছু এক স্থানেই উৎপাদন বা তৈরিকে আমরা ভার্টিক্যাল সেট-আপ কারখানা বলে থাকি। এ সমস্ত কারখানা তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে বুনন করে কাপড় তৈরি করা, কাপড় রং করা, নানা প্রকার ট্রিটমেন্ট করা, প্রক্রিয়াজাত করাসহ অন্যান্য সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকে। তাছাড়া এই কারখানাগুলো রপ্তানিযোগ্য কাপড় ছাড়াও স্থানীয় দেশের চাহিদা মেটানোর কাজেও শক্ত অবস্থান দখল করেছে। এই কারখানাসমূহে বিদেশি ক্রেতাদের নকশাপত্র, চাহিদাপত্র, বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন সাইজের পোশাক, সকল প্রকার ফরমায়েশ অনুযায়ী সেলাই করে, আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং করে দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে ওঠার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান পূর্বের তুলনায় আরও অনেক সুসংহত হয়েছে। বিশে^র ১৫০টির অধিক দেশ এখন বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে।

জিডিপিতে অবদান ১১ শতাংশ

দেশের মোট জিডিপিতে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। এ খাতের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। সাড়ে তিন হাজারের অধিক কারখানায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ বিনিয়োগেই গত অর্থবছর (২০২০-২১) পোশাক রপ্তানি করেছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই এ পরিমাণ আগের পুরো অর্থবছরকে ছাড়িয়ে ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে। পোশাক খাতের অপ্রতিরোধ্য প্রবৃদ্ধি বিশ্বের ১৬৭টি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে এসেছে।

রপ্তানি আয়ে অংশীদারিত্ব

পাট ও পাটজাত দ্রব্য ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষে ছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাকশিল্প শীর্ষস্থান দখল করতে থাকে। ১৯৮৩-৮৪ সালে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৮১১ মিলিয়ন ডলার। এ সময় পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এ অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়তে থাকে। আট বছর পরে ১৯৯০-৯১ অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক। ওই বছর ১ হাজার ৭১৭ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ডলার মোট রপ্তানিতে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। ক্রমোন্নতির ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক। মোট ৩৮ হাজার ৭৫৮ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলারের মোট রপ্তানিতে পোশাক খাতের অংশীদারিত্ব ছিল ৩১ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের মোট আয়ের সর্বোচ্চ অংশীদারিত্ব ছিল পোশাক খাতের। এ বছর মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক।

বিজিএমইএ’র হিসাব অনুযায়ী দেশের পোশাক খাতে কর্মরত নারীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এই কর্মসংস্থান নারীদের দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে

কোথায় রপ্তানি হয়

তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের গতিশীল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রভাবক’ হিসেবে কাজ করেছে এবং করছে। পোশাক রপ্তানির উপর ভর করে শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানির পাশাপাশি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করেছে খাতটি। বিশ্বের ১৫০টির অধিক দেশে এখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাকের টপ ব্র্যান্ড। দেশের পোশাক রপ্তানির সিংহভাগ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশে মোট রপ্তানির প্রায় ৬২ শতাংশ রপ্তানি হয়। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, এ দুটি বাজারে মোট রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে ১৯ ও ৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরে (২০২০-২১) ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়েছে ১৯ হাজার ৪৩০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর আগের দুই অর্থবছরে (২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯) রপ্তানি হয় ১৭ হাজার ১৪৬ দশমিক ১৮ মিলিয়ন এবং ২১ হাজার ১৩৩ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন ডলার। মোট পোশাক রপ্তানিতে এ অংশীদারিত্ব ৬১ দশমিক ৭৭, ৬১ দশমিক ৩৫ ও ৬১ দশমিক ৯১ শতাংশ।

একই সময় (২০২০-২১ থেকে ২০১৮-১৯) অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৯৪৬ দশমিক ৪০ মিলিয়ন, ৫ হাজার ১৪৬ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন এবং ৬ হাজার ১৩৩ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। যা মোট মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৯০, ১৮ দশমিক ৪১ ও ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ছাড়া পোশাক রপ্তানির অন্য গন্তব্যগুলো ‘নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট’ হিসেবে পরিচিত। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ বেশকিছু দেশ। সর্বশেষ অর্থবছরে সম্মিলিতভাবে এসব দেশে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৪ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের দুই অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৭৮০ দশমিক ২০ ও ৫ হাজার ৬৮৭ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার। মোট রপ্তানিতে অংশীদারিত্ব ১৭ দশমিক ১০ ও ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরেও আগের অর্থবছরগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে পোশাক খাত। অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৬৮৬ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের পোশাক। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রে ৭ হাজার ৪৮২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ৭৭৯ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার, কানাডায় ১ হাজার ৫৯ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তিন দেশে পোশাক রপ্তানিতে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৫৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে মোট রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৫৫ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বেসরকারি একটি আইসিডিতে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে স্টাফিং করছেন শ্রমিকরা। এখান থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হবে জাহাজীকরণের জন্য

সবুজ বিপ্লব

পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রেও এসেছে অভাবনীয় উন্নতি। বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন ফ্যাক্টরি। দেশে বর্তমানে লিড সার্টিফাইড গ্রিন পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় ১৬০টি। এর মধ্যে ৪৮টি প্ল্যাটিনাম এবং ৯৮টি গোল্ড মানের। বিশ্বের প্রথম সারির ১০০টি সবুজ কারখানার মধ্যে ৪০টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও প্রায় ৫০০টি কারখানা লিড সনদের জন্য আবেদন করেছে।

নারীর ক্ষমতায়ন

বিজিএমইএ’র হিসাব অনুযায়ী দেশের পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৬০ ভাগ নারী। এদের অধিকাংশের বয়স ১৮-৩০ বছর। ফলে কর্মজীবী নারীরা শুধু পোশাক খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে তা নয়। কর্মসংস্থান নারীদের দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাল্যবিবাহ রোধ ও অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ থেকে নারীদের বিরত রাখছে। এ ছাড়া নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উন্নত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্র অর্জনে নজর দিতে হবে পোশাক খাতে

প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা দিয়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠা এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে সার্কুলার ইকোনমি গড়ে তুলে ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি যে ‘রপ্তানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪’ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে; তাতে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পোশাক খাতের রপ্তানির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনযোগ্য বলে রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তাদের মতে, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সুদহার কমানো এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার পাশাপাশি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে বাজার বিস্তৃত করতে হবে। আমাদের রপ্তানি খাত কাঁচামাল আমদানিনির্ভর, তাই ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন করতে হলে আমদানি ব্যয়ও প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। আমদানি ব্যয়ে লাগাম টানতে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তোলার যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া হাইভ্যালু তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও জোর দিতে হবে।

বেসরকারি আইসিডি গোল্ডেন কনটেইনার্স লিমিটেডে আমদানি পণ্য আনস্টাফিং করছেন একজন ফর্কলিফ্ট অপারেটর। চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ানো জাহাজ থেকে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনার নামিয়ে বেসরকারি আইসিডিতে নিয়ে খালাস করা হয়

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার সাথি চট্টগ্রাম বন্দর

শত বছর ধরে এ অঞ্চলের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু ঢেলে দিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার গতিকে সচল রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর। স্বাধীন বাংলাদেশের আগ থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী ও একুশ শতকের বাণিজ্যিক চাহিদার সবটুকু পূরণ করছে এই বন্দর। পাট থেকে পোশাক খাত। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় সবটুকুই পরিবাহিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ৯০ শতাংশের অধিক বৈদেশিক বাণিজ্য পণ্য এবং কনটেইনারবাহী পণ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ পরিবহন করছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমরা আমদানি-রপ্তানি পরিসংখ্যানে আগেই দেখেছি গত অর্থবছরে মোট রপ্তানির ৮১ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক। পোশাক রপ্তানির প্রায় সব পণ্যই কনটেইনারজাত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজীকরণ করা হয় এবং এখান থেকেই বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রার শুরুতে এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা অন্যান্য সাপোর্ট শিল্প না থাকায় পণ্য উৎপাদনের প্রায় সব কাঁচামাল আমদানি করতে হতো। শ্রমঘন শিল্প হিসেবে দ্রুত বিস্তার পেতে থাকে পোশাক খাত। সময়ের ব্যবধানে এখন পোশাক খাতের উপর নির্ভর করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে উঠেছে। তবে নির্ভরতা এখনো খুব বেশি কমেনি। পোশাক তৈরির কাপড়, রং, কেমিক্যালসহ বেশকিছু কাঁচামাল এখনো আমদানি করতে হয় চীনসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে। অর্থাৎ যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়, তা তৈরি করতে প্রায় সমপরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দেশে রপ্তানির বিপরীতে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় আমদানিতে পোশাক খাতের অংশীদারিত্ব কতটুকু তা আলোচনায় থাকে না, একক পণ্য হিসেবে ৮১ শতাংশ রপ্তানি পণ্য হওয়ায় আলোচনায় থাকে পোশাক রপ্তানি। 

আমরা এখন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির পরিসংখ্যান দেখে নিই। সর্বশেষ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়েছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার টিইইউ (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে) কনটেইনার। এর মধ্যে রপ্তানি কনটেইনার ছিল ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টিইইউ। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে বিশে^র অন্য কোনো বন্দরের উদ্দেশে জাহাজীকরণ করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক খালি কনটেইনার বাদ দিলে, অবশিষ্ট কনটেইনার পোশাক খাতের পণ্য বোঝাই হয়ে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। বিগত বছরগুলোতেও মোট রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ পোশাক খাতের পণ্য বোঝাই হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৪ হাজার একক কনটেইনারের মধ্যে ১৪ লাখ ৫৭ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ লাখ ১৯ হাজার একক কনটেইনারের মধ্যে ১৪ লাখ ৫৩ হাজার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৮ লাখ ৯ হাজার কনটেইনারের মধ্যে ১৩ লাখ ৯৪ হাজার একক কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজীকরণ করা হয়েছে। যার বেশির ভাগ রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা।

বাংলাদেশে রয়েছে বিশে^র সর্বোচ্চ সংখ্যক লিড সার্টিফাইড গ্রিন পোশাক কারখানা

একই সময় আমরা যদি মোংলা বন্দরের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, গত অর্থবছর এ বন্দর ৪৩ হাজার ৯৫৯ টিইইউ কনটেইনার পরিবহন করেছে, যার মধ্যে রপ্তানি কনটেইনার ছিল ২২ হাজার ৫২০ টিইইউ। এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৪৭৬ টিইইউ কনটেইনারের মধ্যে ২৯ হাজার ৩৬৩ টিইইউ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭ হাজার ৭৩২ টিইইউ কনটেইনারের মধ্যে ২৯ হাজার ৬৮ টিইইউ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৯৮৯ টিইইউ কনটেইনারের মধ্যে ২১ হাজার ২২৯ টিইইউ রপ্তানি কনটেইনার ছিল।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার সেবা

দেশের রপ্তানি পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর নেতৃত্ব দিচ্ছে, পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। ক্রমবর্ধমান হারে রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে সেবার মানও বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। একক রপ্তানি খাত হিসেবে শুধু নয়, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দর সামর্থ্যরে সবটুকু বিলিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বন্দরে অন্যান্য সকল সেবা পাওয়ার পাশাপাশি অগ্রাধিকারমূলক যে সকল সেবা পাচ্ছেন, এবার তা জেনে নিই।

পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় কনটেইনারে। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহনকৃত বেশিরভাগ কনটেইনারই এই খাত সংশ্লি­ষ্ট। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে কি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি

কাট অব টাইম

সকল রপ্তানিকারককে জাহাজে পণ্য বোঝাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জাহাজ জেটিতে  ভেড়ার দিন শিপমেন্ট অর্ডার নিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটানির্ভর। তাই সকালের জোয়ারে জেটিতে আসা জাহাজের ক্ষেত্রে সকাল সাড়ে ৭টা এবং রাতের জোয়ারে আসা জাহাজের ক্ষেত্রে রাত ৮টার মধ্যে শিপমেন্ট অর্ডার নিতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পোশাক রপ্তানিকারকরা। পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা জাহাজ জেটিতে ভেড়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টাও শিপমেন্ট অর্ডার নেওয়ার সুযোগ পান। সহজে বললে, সাধারণ রপ্তানিকারকদের চাইতে অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা শিপমেন্ট অর্ডার নেওয়ার সুযোগ পান তারা।

গেট ইন টাইম

শিপমেন্ট অর্ডার নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রপ্তানি পণ্য জাহাজ জেটি ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় আগে বন্দরে নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ রপ্তানিকারকদের জাহাজ ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে পণ্য বন্দরে নিয়ে আসতে হয়। তবে পোশাক রপ্তানিকারকদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল। রপ্তানি পোশাক বোঝাই কনটেইনার জাহাজ ছাড়ার ৩ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত বন্দরে নিয়ে আসতে পারেন। পোশাক রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দিয়েই বন্দর কর্তৃপক্ষ এ সুবিধা দিয়ে থাকে।

কাট অব টাইম এবং গেট ইন টাইম-এ দুটি সুবিধা দিতে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বরাবরই বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ রপ্তানি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ সুবিধা অব্যাহক রেখেছে।

ডেডিকেটেড এক্সপোর্ট ইয়ার্ড

রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার সহজে পরিবহন ও জাহাজীকরণে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল (এনসিটি ও সিসিটি) ও জেনারেল কার্গো বার্থে ডেডিকেটেড ইয়ার্ড রয়েছে। এতে করে বেসরকারি ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে স্টাফিং হওয়ার পর সহজেই তা বন্দরে নিয়ে এসে এসব ইয়ার্ডে সংরক্ষণ ও জাহাজের সময়সূচি অনুযায়ী এখান থেকে জাহাজীকরণ সম্ভব হচ্ছে। দুটি টার্মিনাল ও জেনারেল কার্গো বার্থ মিলিয়ে ৪ হাজারের অধিক কনটেইনার সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

প্রায়োরিটি বার্থিং

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপের দেশ ইতালির সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির সময় এবং ব্যয় সাশ্রয়ে এ রুট চালু করা হয়েছে। ইতালির সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে এ সেবা কার্যক্রম শুরু হলেও ইউরোপের আরও বেশ কয়েকটি দেশ সরাসরি জাহাজ চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুরু থেকেই সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবায় অগ্রাধিকার সেবা দেওয়ার কথা বলে আসছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবং তা সরাসরি জাহাজ চলাচলের শুরু থেকেই প্রায়োরিটি বার্থিং (জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি) দিয়ে আসছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আগ্রহী শিপিং লাইন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ফোরামে এ বিষয়টি জোরালোভাবে বলেছেন।

এসব সুবিধা ছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বন্দরের হ্যান্ডলিং চার্জ ও পণ্য সংরক্ষণ চার্জে ছাড় পেয়ে আসছে। যাতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

অব্যাহত থাকবে বন্দরের অগ্রাধিকার সেবা

চলতি বছরের শুরুতে ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার, তার সিংহভাগই পূরণ করবে পোশাক খাত। স্বাভাবিকভাবেই এ পণ্য পরিবাহিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এতে বাড়বে পণ্য পরিবহনের চাপ। বিদ্যমান সক্ষমতায় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে শিগগির বন্দরে যুক্ত হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। যা বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ টিইইউ কনটেইনার পরিবহন সক্ষমতা বাড়াবে চট্টগ্রাম বন্দরের। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেমসহ তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর সেবা চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা প্রদানের ধারণাকে নিয়ে যাচ্ছে অন্য উচ্চতায়। উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের বাস্তবিক প্রয়োগে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here