তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও সর্বাত্মক ব্যবহারেই সম্ভব সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ খাতের টেকসই উন্নয়ন

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও মৎস্য চাষ মানুষের জীবিকা ও খাদ্যের একটি বড় উৎস। বর্তমানে এই শিল্পের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলারের। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশি জেলেদের মৎস্য আরহণের পরিমাণ ৭ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাজার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন, ফিশিং ভেসেলগুলোকে ট্র্যাকিং ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা গেলে এই খাতে টেকসই উন্নয়ন আসবে।

যেকোনো টেকসই কর্মপরিকল্পনা সাজানোর জন্য প্রয়োজন বিস্তারিত, সঠিক ও তাৎক্ষণিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ। মৎস্য আহরণ খাতেও বিষয়টি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। কোথায় মাছের প্রাপ্যতা বেশি, কোথায় বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতি টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, কী পরিমাণে মাছ ধরলে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না, কোন সময়ে মাছ ধরলে তা প্রজননের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে না, কোন বাজারে কোন প্রজাতির মাছের চাহিদা বেশি, কোথায় চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ কম-এসব তথ্য জানা থাকলে টেকসই মৎস্য আহরণ খাত গড়ে তোলা সম্ভব। আর সবার মাঝে এসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তির বিকাশ ও সর্বাত্মক ব্যবহার।

প্রযুক্তির আশীর্বাদে বাংলাদেশের জেলেরা এখন সাগরে আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। মৎস্য অধিদপ্তরাধীন চলমান সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য নৌযানে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস), অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস), জিএসএম ইত্যাদি ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে মাছ ধরার বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কমিউনিকেশন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনার, ইকোসাইন্ডার, ফিশফাইন্ডার, জিপিএস, এআইএস ইত্যাদি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মৎস্য আহরণ খাতও তথ্য ও প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতি দেশের সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। মৎস্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে প্রধান রচনায়।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তি এখন স্বংক্রিয়তার যুগে প্রবেশ করেছে। শিল্পোৎপাদন থেকে শুরু করে সেবাখাত-সর্বত্রই বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তার মাধ্যমে অটোমেশন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পালে হাওয়া দিয়েছে। সমুদ্রশিল্পও এই প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। সমুদ্রশিল্পে অসামরিক বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি এখন বিভিন্ন দেশে নৌ-সামরিক কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছে স্বয়ংচালিত ডুবো ড্রোন আনম্যানড আন্ডারওয়াটার ভেহিকল (ইউইউভি)। সাগর পাড়ি দেওয়া বাণিজ্যিক জাহাজগুলোয় স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন ও প্রপালশন ব্যবস্থার ব্যবহার এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অতিসম্প্রতি হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি একটি এলএনজি ক্যারিয়ার স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে। অস্ট্রেলীয় মেরিন টেকনোলজি কোম্পানি মেরিন অটোনমাস ইনটেলিজেন্ট ডকিং (এমএআইডি) সম্প্রতি এমন একটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছে যা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ডকিং ও পজিশনিংয়ের জন্য সহায়ক হবে। গভীর সমুদ্র তেল ও গ্যাস প্রকল্প, ক্রুজ শিল্প, প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তায় নিয়োজিত মেরিন ভেসেলের ডকিং প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করবে। নৌপরিবহন শিল্পে স্বংয়ক্রিয় প্রযুক্তি নিয়ে বিশদ আলোচনা থাকছে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগে।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম-চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here