রাশিয়ার শিপিং খাতের ওপর আরও খড়গহস্ত যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

জাপানের হিরোশিমায় গতকাল (১৯ মে) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জি৭ সম্মেলন। নিশ্চিতভাবেই এ সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু গুরুত্ব পাবে। তবে তার আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও খড়গহস্ত হওয়ার ঘোষণা এসেছে পশ্চিমা নেতাদের পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দেশটির ওপর আরও কয়েকটি খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে শিপিং খাতও রয়েছে।

রাশিয়ার সমুদ্র পরিবহন খাতের বেশিরভাগ অনুষঙ্গই গত এক বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যোগ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য কেবল যে রাশিয়ার নাগরিক বা তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে, তা নয়। বরং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন বিদেশি সত্তাগুলোও কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে।

পশ্চিমা নেতাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের ফলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সেটির উৎস সীমিত হবে। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, ‘আমাদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে রাশিয়া তাদের সামরিক ব্যয়ে লাগাম টানতে বাধ্য হবে। নিষেধাজ্ঞার আওতা বৃদ্ধির ফলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার সক্ষমতা কমবে পুতিনের। এছাড়া বিভিন্ন ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাটাতে চাইছে রাশিয়া। এই পদক্ষেপের ফলে সেই ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টাও গতি পাবে।’

নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিন শতাধিক বিষয়কে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ২০০ ব্যক্তির সম্পদ, প্রতিষ্ঠান, জাহাজ ও আকাশযানকে জব্দ ও বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শিপিং কাতে মার্কিন খড়গের আওতায় এসেছে এফএসইউই অ্যাটমফ্লোট। রোসাটম গ্রুপের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিচালিত আইসব্রেকারের বহর। এছাড়া আর্কটিক উপকূলে রাশিয়া যেন তাদের ডিপ সি কোল টার্মিনাল ‘পোর্ট অব ইনডিগা’ প্রকল্প নিয়ে এগুতে না পারে, সেই প্রচেষ্টা রয়েছে পশ্চিমাদের। এই লক্ষ্যে টার্মিনালটির ডেভেলপার আকভামেরিন লিমিটেডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া এটির পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত চারটি কোম্পানিকে বিশেষ নজরদারির তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়ার লজিস্টিকস ও কার্গো পরিবহনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন প্রায় ১০টি জাহাজের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও ইরান নিজেদের মধ্যে লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে ইরানি শিপিং কোম্পানি খাজার সি শিপিং লাইনকে বিশেষ নজরদারির আওতায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান শিপিং লাইনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি গত এক বছরে অন্তত ৬০ বার রাশিয়ার বন্দরগুলোয় পোর্ট কল দিয়েছে। এছাড়া ইরানের সঙ্গে সমুদ্রবাণিজ্যে সম্পৃক্ত আরও দুটি কোম্পানিকেও এই তালিকায় রেখেছে মার্কিন প্রশাসন।

এদিকে ব্রিটিশ সরকার রাশিয়ার জ্বালানি, ধাতব শিল্প, সামরিক, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের ৮৬ ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া শিপিং খাতে তারা মেরিন অপারেটর এসএসকে পোর্ট, সিরিয়ার পতাকাবাহী জেনারেল কার্গো ভেসেল পাওয়েলকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। রুশ শিপিং কোম্পানি সোভকমফ্লোট গত এক বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। তারপরও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখার অভিযোগে ছয়টি শিপিং কোম্পানি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য।

এছাড়া ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য পাচার ও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের চেষ্টার দায়ে ফেসকো ও ভলগাসহ আরও কয়েকটি শিপিং কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয়েই অভিযোগ করেছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা শিপিং কোম্পানিগুলো রুশ সেনাদের দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোর গুদাম ও খেত থেকে খাদ্যশস্য চুরি করে সেগুলো রাশিয়ার পণ্য হিসেবে বর্ণনা দিয়ে বাইরে পাচার করে আসছে।

যুক্তরাজ্য বলেছে, রাশিয়া ও তাদের সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হওয়ার তাদের এই প্রচেষ্টা এখানেই শেষ হচ্ছে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জি৭ সম্মেলনেই ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়ার হীরা ও ধাতু খাতের ওপর আরও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে তার দেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here