কৃষ্ণ সাগরীয় নিরাপদ করিডোর চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত রাশিয়ার

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কৃষ্ণ সাগরকে বিদেশী পতাকাবাহী শস্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ‘সাময়িক বিপজ্জনক’ জোন ঘোষণা করতে চলেছে রাশিয়া। আজ সোমবার (১৭ জুলাই) ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। এই ঘোষণার অর্থ হলো, ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি নতুন করে হুমকির মুখে পড়ে গেল।

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছরের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন দামামার মধ্যে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনের নিরাপদ করিডোর তৈরি হয়েছিল। তবে রাশিয়া এরই মধ্যে কয়েকবার এই চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছিল। বরাবরই তারা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিজেদের রপ্তানি সুবিধা ঠিকঠাক না মেলার অভিযোগ জানিয়ে আসছে। এবারও চুক্তির আপাত সমাপ্তি টানার পেছনে একই যুক্তি দেখিয়েছে পুতিন প্রশাসন।

মস্কো বলেছে, তাদের খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার যে শর্ত চুক্তিতে রয়েছে, সেটি প্রতিপালন করা না হলে চুক্তি থেকে সরে আসার চিন্তাভাবনা করবে তারা। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কো আর কোনো প্রতিশ্রুতি বা নিশ্চয়তার বাণী শুনতে চায় না। কেবল দৃশ্যমান ফলাফল পেলে তবেই নতুন করে চুক্তিতে ফিরে আসার কথা ভাববে রাশিয়া।

কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদশস্য রপ্তানি বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীনের আমদানিকারকরা। ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভের অধীনে গত এক বছরে ইউক্রেন থেকে মোট যে পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে, তার ২৫ শতাংশই কিনেছে চীন। আলোচ্য সময়ে চীনা আমদানিকারকরা ইউক্রেন থেকে ৬০ লাখ টন ভুট্টা ও গম আমদানি করেছে, যা দেশটির প্রধান খাদ্যপণ্য দুটির মোট আমদানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

এছাড়া রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর অবরুদ্ধ করে রাখলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপরও বড় প্রভাব পড়বে। এই অবরোধের ফলে খাদ্যশস্যের মূল্য বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি , অর্থনৈতিক চাপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর এমনটাই দেখা গিয়েছিল।

গত ১৮ মে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি চালু রাখার মানবিক করিডোর চুক্তির মেয়াদ দুই মাসের জন্য বাড়াতে সম্মত হয় রাশিয়া। এই মেয়াদ বৃদ্ধিতে রাশিয়াকে রাজি করাতে অবদান রাখেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো অবরোধ করে রাখে রুশ সেনারা। এতে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এ সংকট দূর করতে গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি স্বাক্ষর হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক গম সরবরাহে রাশিয়া ও ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল এই দুই দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ওপর বহুমুখী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। কিন্তু রাশিয়ার অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার জেরে আর্থিক লেনদেন, লজিস্টিকস ও বিমা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে দেশটি থেকে খাদ্য ও সার সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here