দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদারের উদ্যোগ চীনের

হালনাগাদ স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ

চীনের হালনাগাদ স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ। এতে নাইন-ড্যাশ লাইনের পাশাপাশি তাইওয়ানের পূর্বদিক দিয়ে আরেকটি ড্যাশ লাইন আঁকা হয়েছে

চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি হালনাগাদ ‘চায়না স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’ প্রকাশ করেছে। এই মানচিত্রের মাধ্যমে দেশটি দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করেছে। তাদের এই দাবি দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলীয় কয়েকটি দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে।

চীন তাদের সমুদ্র সীমানা নির্ধারণে নাইন-ড্যাশ লাইন চার্ট প্রবর্তন করে ১৯৪৭ সালে। নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ সেই চার্টেরই হালনাগাদ সংস্করণ। পার্থক্য কেবল এক জায়গায়- এবার আরও একটি ড্যাশ লাইন যুক্ত করেছে তারা, যার মাধ্যমে তাইওয়ানকে তাদের সীমানাভুক্ত করা হয়েছে।

চীনের নাইন-ড্যাশ লাইন নিয়ে শুরু থেকেই আঞ্চলিক বিতর্ক রয়েছে। এই চার্টের মাধ্যমে বেইজিং আক্ষরিক অর্থে দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের দাবি করে। তাদের এই সীমানারেখার মধ্যে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ইন্দোনেশিয়ার একচ্ছত্র আঞ্চলিক অঞ্চলের (ইইজেড) বড় অংশ পড়েছে। চীনের এই দাবি একেবারেই তাদের নিজস্ব। অন্য কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা নাইন-ড্যাশ লাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৬ সালে হেগের স্থায়ী সালিশী আদালত এই বলে রায় দেন যে, চীনের দাবি আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বেইজিং অবশ্য আদালতের এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে।

নাইন-ড্যাশ লাইনের আরেকটি সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে যে নয়টি ড্যাশ লাইন দিয়ে আবদ্ধ করা হয়েছে, সেই ড্যাশগুলোর মাঝে বড় বড় ফাঁক রয়েছে। এই অঞ্চলের মালিকানা নির্ধারিত নয়।

১৯৪৭ সালের নাইন-ড্যাশ লাইন

ফিলিপাইনের কয়েকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলছেন, নাইন-ড্যাশ লাইনের হালনাগাদ সংস্করণ কেবল চীনের আরেকটি ভূরাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ও অন্যদের বিরক্তির কারণ মাত্র। তবে এবারের ম্যাপে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। চীন এখন এই ড্যাশ লাইনগুলোকে আন্তর্জাতিক সীমানারেখা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। তারা আরও বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা ও অন্য উপকূলীয় দেশের ইইজেডকে নিজেদের বলে দাবি করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ফিলিপাইন এরই মধ্যে ম্যানিলায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের কাছে এই একতরফা মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকারও চীনের এই হালনাগাদ মানচিত্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। নাইন-ড্যাশ লাইন বর্নেও দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে মালয়েশিয়ার ইইজেডের ওপর দিয়ে গেছে। এই লাইন মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যের এত কাছ দিয়ে গেছে যে, অন্য কোনো দেশের মূল ভূখণ্ড এই লাইনের এতটা নিকটবর্তী নয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপে চীন মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক জলসীমার অংশবিশেষকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করেছে। মালয়েশিয়া বেইজিংয়ের এই দাবিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না।’

ভিয়েতনামও চীনের নতুন মানচিত্রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘নাইন-ড্যাশ লাইনের মাধ্যমে চীন ইস্ট সির কোনো অংশ দাবি করলে ভিয়েতনাম তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’

এবারের ম্যাপে নাইন-ড্যাশ লাইনকে উত্তরদিকে সম্প্রসারণ করে তাইওয়ানের পূর্ব পাশে আরেকটি ড্যাশ আঁকা হয়েছে। দশম এই ড্যাশের মাধ্যমে তাইওয়ানকে নিজেদের মানচিত্রভুক্ত করেছে চীন। তাইওয়ান সরকার অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে এর বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, ‘তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে চীন যে চালই চালুক না কেন, অস্তিত্ব রক্ষার সংকল্প থেকে আমরা কখনই বিচ্যুত হবো না।’

নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ অসন্তুষ্ট করেছে ভারতকেও। এই মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের অংশবিশেষকে চীনের মালিকানাধীন করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীনের এই দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এ কারণে আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আজ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here