দীর্ঘদিন ধরে চলমান খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে পানামা খালে দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা দফায় দফায় কমানো হচ্ছে। সম্প্রতি জাহাজ চলাচল সীমিতকরণ নীতি আরও কঠোর করেছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে দৈনিক ৩১টি জাহাজ পানামা খাল অতিক্রম করবে।
পানামা খালে পানি সরবরাহকারী গাতুন লেক দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির যোগান দেয়। অতিরিক্ত খরার কারণে ২০২৩ সালের জুনে গুরুত্বপূর্ণ এই লেকের পানির স্তর ৭৯ ফুটে নেমে আসে, যেখানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পানির স্তর ৮৮ ফুটের বেশি ছিল। জুনে পানির স্তর কমার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাতুনের পানির স্তর ৭৯ থেকে ৮০ ফুটের ভেতরই ওঠা-নামা করছে। পানি স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে জলাধারটির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান বিধায় নতুন নিয়মটি ২০২৪ সালের পুরো শুষ্ক মৌসুম জুড়ে জারি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাভাবিক অবস্থায় দৈনিক ৩৬ থেকে ৩৮টি জাহাজ এই নৌপথ পাড়ি দিলেও চলতি বছরের আগস্টে এই সংখ্যা ৩২টিতে সীমিত করে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ঘোষণায় এই সংখ্যা ৩১টিতে নামিয়ে আনা হলো। নতুন শিডিউল অনুযায়ী খালের নিওপানাম্যাক্স লকগুলো দিয়ে দিনে নয়টি ও পানাম্যাক্স লকগুলো দিয়ে ২২টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
স্বাভাবিক সময়ে পানামা খাল দিয়ে ৫০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারলেও খরার কারণে সেটা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে বর্তমানে ৪৪ ফুটে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে বৃহদাকার জাহাজগুলোকে প্রায়ই পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা কমিয়ে পানামা খাল পাড়ি দিতে হচ্ছে।
জাহাজ চলাচল সীমিতকরণের ফলে পানামা খালে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমান থাকতে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাহাজকে। এই জট কিছুটা কমাতে খালে চলাচলের রিজার্ভেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৩০টি জাহাজ রিজার্ভেশনের জন্য বুকিং দিতে পারবে। আর দিনে একটি জাহাজ রিজার্ভেশন ছাড়াই নিওপ্যানাম্যাক্স লক দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে ১২৫ ফুটের বড় জাহাজগুলোকে পানামা খাল অতিক্রম করতে হলে ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জ দিতে হয়। এর আওতায় একটি জাহাজকে যাত্রাপ্রতি ১০ হাজার ডলারের নির্দিষ্ট ফি এবং যাত্রাকালীন সময়ে গাতুন লেকের পানির স্তরের ওপর ভিত্তি করে জাহাজের টোলের ন্যূনতম এক থেকে সর্বোচ্চ দশ শতাংশ পর্যন্ত পরিবর্তনশীল ফি দিতে হয়। জাহাজের ড্রাফট লেভেল কমানোর কারণে ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জের উভয় ধরনের ফি কমানো হয়েছে, যা ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়েছে। ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জ কমানোর বিষয়টি জাহাজ মালিকদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।
অন্যদিকে জাহাজ চলাচল কমে যাওয়ায় চলতি মাসে (অক্টোবর) শুরু হওয়া অর্থবছরে পানামা খালের রাজস্ব ২০ কোটি ডলার হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করছে কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সচল রাখতে এবং আর্থিক লোকসান এড়াতে চলমান সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা করছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ।