বাংলাদেশের মেরিটাইম বিষয়ক চর্চাকে এগিয়ে নিতে সারথির ভূমিকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

প্রিয় পাঠক, সময় পরিক্রমায় আমরা পৌঁছেছি ছোট এক মাইলফলকের সামনে- বন্দরবার্তার অর্ধশততম সংখ্যাটি এ মুহূর্তে আপনার হাতে! বাংলাদেশে অপ্রতুল মেরিটাইম বিষয়ক চর্চার পটভূমিতে এ খাতের টেকনিক্যাল ও একাডেমিক নানা বিষয়সমূহ নিয়মিতভাবে বাংলা ভাষায় রচনা ও প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেজ্ঞ। বন্দরবার্তা প্রকাশের মাধ্যমে এদেশে মেরিটাইম জ্ঞানভিত্তি এগিয়ে নিতে সারথির ভূমিকা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঠিক যে মুহূর্তে বাংলাদেশের মেরিটাইম শিল্প একটি বড় পরিবর্তনের সামনে দাঁড়িয়ে, গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে সমুদ্র অর্থনীতির সুবিশাল কর্মযজ্ঞ, উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার পথে যে মেরিটাইম খাত থেকে পেতে হবে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা- আমাদের অভিনিবেশ স্বার্থক হবে যদি বন্দরবার্তা সেখানে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আশা জাগানিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটিকে জনপ্রিয় ও সংবেদনশীল করে তোলার স্বতপ্রণোদিত এই মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।

যে বিশাল কর্মযজ্ঞের সামনে দাঁড়িয়ে এই খাত, সেখানে দক্ষ কর্মশক্তি হিসেবে যথাযথভাবে তরুণদের তৈরি করা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। প্রথম থেকেই বন্দরবার্তা চেষ্টা করে যাচ্ছে মেরিটাইম বিষয়াবলির প্রাঞ্জল উপস্থাপনের মাধ্যমে তরুণদের এই খাতটিতে উৎসাহী করে তুলতে। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের ক্রমোন্নতি ও চ্যালেজ্ঞসমূহ বিশ্লেষণের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং নীতিনির্ধারক মহলকে এই খাতের বৈশ্বিক পরিবর্তনের হালনাগাদ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে চলেছে বন্দরবার্তা।

সাথে থাকার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ পাঠকদের কাছে। বন্দরবার্তা ঘিরে আপনাদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা আমাদের জুগিয়েছে অবিরাম অনুপ্রেরণা। প্রিয় পাঠক, আপনাদের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত আমরা বদলে ফেলছি বন্দরবার্তাকে- বিষয়সমূহে রাখছি বৈচিত্র্য, গুণগত মানে হয়েছি আরো তাৎপর্যপূর্ণ, অঙ্গসজ্জায় এনেছি নতুনত্ব। বন্দরবার্তা হয়েছে নবীনতর থেকে অভিজ্ঞতালব্ধ। এই সাফল্যের ভাগীদার তাই আপনিও, প্রিয় পাঠক।

বিশ^ অর্থনীতি যখন এখনো করোনাভাইরাস মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার উপায় হাতড়ে বেড়াচ্ছে তখনই স্রোতের বিপরীতে বেশ প্রতাপের সাথে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দূর্যোগকালে পুরোদমে সচলথাকা বন্দর ব্যবস্থাপনা ও অংশীজনদের সহযোগিতায় দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। সংকটকালীন সময়েও বাংলাদেশের মেরিটাইম বাণিজ্য আরেকটি সুখবর নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে বাংলাদেশ তার অবস্থান আরো পোক্ত করে নিচ্ছেÑ তরতরিয়ে বাড়ছে লাল সবুজের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১৬টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে আমাদের সমুদ্রগামী জাহাজ বহরে। সরকারি ও ব্যক্তি খাত মিলে ৬২টি সমুদ্রগামী জাহাজ এখন পণ্য পরিবহন করছে সুনীল সাগরে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরো দুটি জাহাজ। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে এসে এখন বলাই যায়, মেরিটাইম জাতি হিসেবে পুনরুত্থানের পথে বাংলাদেশ।

সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের এই উল্লম্ফনের পিছনে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন ২০১৯। আইনটি ব্যবসাবান্ধব হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা পুনরায় এই খাতে পুঁজি লগ্নি করছেন। এছাড়া করোনার কারণে পুরনো জাহাজের দাম বেশ কমে যাওয়ায় তা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের লগ্নিকারকদের কাছে। এবারের প্রধান রচনায় থাকছে বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের আদ্যোপান্ত।

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের গতি কমিয়ে আনলেও আর্কটিক দিয়ে জাহাজ চলাচলে রাশ টানতে পারেনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বরফ গলে উন্মুক্ত হয়ে পড়ায় এই অঞ্চলে জাহাজ যাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অঞ্চলটির সাইবেরিয়ার উপকূল বরাবর ব্যস্ততম লেনটি দিয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাহাজ চলাচল ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে জলপথটি দিয়ে জাহাজগুলো ৯৩৫টি যাত্রা সম্পন্ন করেছে। পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে যেখানে যাত্রার সংখ্যা ছিল ৮৫৫টি। আর্কটিকে জল মাড়িয়ে জাহাজ চলাচলের এই যে উল্লম্ফন, তাতে চাপ বাড়ছে পরিবেশের ওপর, যা এই অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার করছে। আর্কটিকে উষ্ণায়ন ও জাহাজ চলাচল নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে বিশেষ রচনায়।

মেরিটাইম পরিবহন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সেবা প্রদান সম্ভব হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না অংশগ্রহণকারীরা অর্জন ও সমস্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ এবং গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রণীত তাদের পরিকল্পনার একক পদ্ধতি তৈরি না করছে। এছাড়া আধুনিক, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য মেরিটাইম সরবরাহ ব্যবস্থা সন্তোষজনকভাবে পরিচালনার জন্য যেটা দরকার হয় তা হলো সক্রিয় অংশীজনদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার স্বীকৃতি দেওয়া। এটা করতে হলে এ খাতের অংশীজনদের সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের কাজটা রপ্ত করতে হবে। বন্দর ও অংশীজনদের মধ্যে নিয়মিত ডেটা বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে থাকছে বিশেষ প্রতিবেদন।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশের মেরিটাইম সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব আরো অনেক দূর, সেই প্রত্যাশা রাখছি। সবাইকে বন্দরবার্তা পঞ্চাশতম সংখ্যা উদ্যাপনের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশে প্রায়-অকর্ষিত এই পথে আমরা আরো সমৃদ্ধ হব সামনের দিনগুলোতে, এই আশা আর অমূলক নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here