নৌপরিবহন ২০২০ সংকট কাটিয়ে সম্ভাবনার দিকে

সাল ২০২০। জীবন, জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের বছর হিসেবে ইতিহাস মনে রাখবে বছরকে। সার্স কোভ-নামক পোশাকি নামধারী ৬০ থেকে ১৪০ ন্যানোমিটার ব্যাসের অতি এক ক্ষুদ্র ভাইরাস একাই ওলটপালট করে দিয়েছে চেনা দুনিয়া। যদিও করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার এবং ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই এখনো থামেনি। মৃত্যুর মিছিলের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানুষ এমন সব বাস্তবতা দেখেছে, যা পালটে দিয়েছে শিল্প-বাণিজ্যের চেহারা। ওদিকে বায়ুম-লে বিষাক্ত উপাদান কমে যাওয়া, নাবিক অধিকারে বৈশ্বিক ঐক্য, নবায়নযোগ্য শক্তিতে রেকর্ড, ডিজিটাইজেশনসহ ইতিবাচক নানা ঘটনায় শিপিং বিশ্বকে নিয়ে নতুন করে ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

নতুন মেরুকরণ হয়েছে অর্থনীতিতে

আঙ্কটাড প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০২০’ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের দুর্বল অর্থনীতির পিঠে ২০২০ সালে শক্তিশালী বাণিজ্যের আশা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সব পূর্বাভাস মিথ্যে করে ২০০৮-২০০৯ এর পর সর্বনিম্ন অংকে নেমেছে মেরিটাইম প্রবৃদ্ধি। শুধু কোভিড-১৯ নয়, আরো বেশকিছু কারণে বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি পালটে দিয়েছে ২০২০। ব্রাজিলের বাঁধে ভূমিধস এবং অস্ট্রেলিয়ার সাইক্লোন ভেরোনিকার কারণে ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আকরিক লোহার মূল্য হ্রাস পেয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১.৫ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে সমুদ্রপথে বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ব্রাজিল। বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ও শিপারদের সুবিধা দিতে হিন্টারল্যান্ড কানেক্টিভিটি উন্নয়নে জোর দিতে শুরু করেছে বন্দরগুলো। কার্গো ভলিউমের দিক থেকে জাহাজের মালিকানার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন, গ্রিস ও জাপান। টনেজ হিসাব করলে মোট বৈশ্বিক ফ্লিটের ৪০.৩ শতাংশ এই তিন দেশের দখলে রয়েছে। পতাকা বহনের দিক থেকে শীর্ষে আছে লাইবেরিয়া, মার্শাল আইল্যান্ড ও পানামা। ধারণক্ষমতার দিক থেকে ৪২ শতাংশ এবং ফ্লিটের মূল্যের দিক থেকে ৩৩.৬ শতাংশ আছে এই দেশগুলোর কাছে।

করোনার মধ্যেই প্রথমবারের মতো পানিতে ভেসেছে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনারবাহী জাহাজ এইচএমএম আলজেসিরাস। এইচএমএমের (হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন) ২০১৮ সালে কার্যাদেশ দেওয়া প্রতিটি ২৪ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মোট ১২টি আলট্রা লার্জ কনটেইনার শিপের সবগুলো অপারেশনে এসেছে এ বছর। এশিয়ার দেশগুলোর ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম নেপথ্য চরিত্র হয়ে দৈত্যাকার সব কয়টি জাহাজ চলাচল করছে ইউরোপ-এশিয়া রুটে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ২৪,০০০+ টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে হ্যাপাগ-লয়েড, ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান)। সদ্যবিদায়ী বছরের শেষ ১৫ দিনে অন্তত ১৮টি মেগা আকৃতির জাহাজ নির্মাণের চুক্তি হওয়ায় গতি ফিরে পেয়েছে জাহাজ নির্মাণ খাত। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের ডেটা বলছে, ২০২০ সালে ট্রেড মার্চেন্ডাইজিংয়ের বার্ষিক ভলিউম দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৯.২ শতাংশ কমার বিপরীতে বছর শেষে ৭.২ শতাংশ গতিতে উঠে আসছে।

আকাশ ছুঁয়েছে ফ্রেইট রেট

কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি পৃথিবী ২০২০ সালকে মনে রাখবে ওশান ফ্রেইট রেটের অস্বাভাবিক উচ্চ হারের কারণেও। আকস্মিক লকডাউনের কারণে ভীত হয়ে ‘প্যানিক বায়িং’, জরুরি খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ বৃদ্ধিকে এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ফলে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যত অস্বাভাবিক গতিতে নিচে নেমে ছিল, তার দ্বিগুণ গতিতে উঠে এসেছে ফ্রেইট রেট। চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য রাখতে এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে পণ্যের চালানের সংখ্যা বহুগুণে বাড়িয়েছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এর ফলে মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে গ্লোবাল কনটেইনার রেটের সূচক ১০৬ শতাংশ উপরে উঠেছে। এমনকি এক মাসের মধ্যে চারবার বাড়ানো হয়েছে ফ্রেইট রেট। (সূত্র: দ্য এফবিএক্স গ্লোবাল কনটেইনার ইনডেক্স)।

ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এবং বাংকারের নিম্ন মুখী মূল্যের মধ্যে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে কনটেইনার ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান। অপারেশনাল শিপিং থেকে এ বছর ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে শীর্ষ শিপিং কোম্পানিগুলো, যা আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১৬ শতাংশ বেশি। ব্যস্ত শিপিং রুটে, বিশেষ করে ট্রান্স-প্যাসিফিক নৌপথে জাহাজের সংখ্যা ও কনটেইনার ধারণক্ষমতা আরো বাড়িয়ে বাজারে ভারসাম্য বজায় ও ফ্রেইট রেটে লাগাম টানতে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল মেরিটাইম কমিশন।

লাখো নাবিকের অনির্দিষ্ট যাত্রা

বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং শিপিংয়ের সূচকগুলোকে ওঠানামা করানো ছাড়া মেরিটাইম দুনিয়ায় কোভিড-১৯ সবচেয়ে মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা দিয়েছে সি ফেয়ারারদের। মহামারির মধ্যেও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে চালু রাখতে নিরন্তর অমানুষিক পরিশ্রম করে চলেছেন নাবিকেরা। ওদিকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপের ফলে নাবিকরা জাহাজ থেকে না পারছেন নামতে, না পারছেন নিজ দেশে ফিরতে। আবার যারা ঘরে আটকা, তারাও অপেক্ষমাণ জাহাজে আরোহণের জন্য নিকটবর্তী বন্দরে যেতে প্রয়োজনীয় এন্ট্রি বা এক্সিট ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন না। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৬ হাজার বাণিজ্যিক সমুদ্রযানে কর্মরত প্রায় ১৮ লাখ নাবিকের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি এখন আটকা পড়ে আছেন জাহাজ বা বাড়িতে। তীরে এসেও তরী থেকে নামতে পারছেন না অন্তত চার লাখ নাবিক। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিমাতাসুলভ আচরণ করছে বন্দরগুলো। অনেক দেশই নাবিক পরিবর্তন নিষিদ্ধ করেছে, পুরো প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত কঠোর করে তুলেছে বাদবাকি রাষ্ট্রগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, একজন নাবিকের টানা ১১ মাসের বেশি সাগরে কোনোভাবেই অবস্থান করার কথা না থাকলেও অনেকে ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভেসে চলেছেন একটানা। অনেকে বিপজ্জনকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এরকম অবসন্ন নাবিকদের নিয়ে জাহাজ চালানো হলে ক্যাপ্টেনদেরই ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে। মাসের পর মাস সমুদ্রযাত্রার ধকল এবং বাড়ি ফিরতে না পারার মানসিক চাপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে তাদের মধ্যে।

সমুদ্রগামী নাবিকদের অর্থনীতির ‘অপরিহার্য কর্মী’ স্বীকৃতি দিয়ে সমুদ্রযানে কাজে যোগদান বা সেখান থেকে ফেরার ক্ষেত্রে মুক্তভাবে চলাচলের সুযোগ দেয়ার জন্য আইএমওর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইটিএফ। সদস্য দেশগুলোর বন্দরে নাবিক পরিবর্তনের জন্য ১২ স্তরের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে আইএমও। জুনে আন্তর্জাতিক নাবিক দিবসে ট্রেন্ডিং থেকে ভাইরাল হয়ে ওঠে সি ফেয়ারারস আর কি ওয়ার্কার্স হ্যাশট্যাগ। বর্তমানে ক্রু চেঞ্জ ক্রাইসিস অনেকটা লাঘব হয়েছে, চালু হয়েছে নাবিক বদলের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর প্রক্রিয়া।

তেল নিয়ে তেলেসমাতি

সাপ্লাই চেইন চেকপয়েন্টে বৈদেশিক বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা, লকডাউনের ফলে ফুয়েলের চাহিদা অনেক কমে যাওয়ায় অয়েল বিজনেস গোত্তা খেলেও অয়েল ট্যাংকার ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা। এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় একসাথে কাজ করেছে-সৌদি আরব-রাশিয়া তেলযুদ্ধ এবং মহামারি নিজে।

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ দখলে রেখে অয়েল প্রডাকশন অ্যান্ড এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)-এর নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। নতুন সদস্য রাশিয়াসহ এর নাম হয়েছে এখন ওপেক প্লাস। মহামারির শুরুতে তেলের চাহিদা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় সৌদি আরবসহ পুরনো সদস্যরা দৈনিক তেল উৎপাদন অন্তত ১.৫ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত কমিয়ে ফেলতে একমত হয়। বিন্তু রাশিয়া সাফ জানিয়ে দেয় এ সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। ওপেক প্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখে এবং শুরু হয় কুখ্যাত ‘অয়েল মার্কেট ওয়ারফেয়ার’। সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেক দেশগুলো তেলের উত্তোলন ও উৎপাদন না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আগে থেকেই কমতে থাকা চাহিদার বাজারে ঢুকতে থাকে বিপুল পরিমাণে পরিশোধিত ফুয়েল অয়েল। প্রতিদিন উদ্বৃত্ত হতে শুরু করে প্রায় ২০-৩৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল। শীর্ষ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম মার্চে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে এসে যায় বাজারে তেলের দাম। তেল মজুদের প্রতিটি স্থাপনা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ট্যাংকারগুলোকেই ভাড়া নিয়ে ভাসমান অয়েল স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে আরামকো, এক্সন, শেভরন, বিপি অয়েলসহ বেশির ভাগ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। মহামারির প্রথম তিন মাসে অন্তত ১.২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল আক্ষরিক অর্থেই ভাসছিল সাগর-মহাসাগরে। ট্যাংকার চার্টার রেট দৈনিক ২৫-৩০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে এক লাফে বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে যায় ২ লাখ মার্কিন ডলারে!

বিধ্বস্ত বৈরুত

বন্দরের ওয়্যারহাউসে রক্ষিত সার কারখানার জন্য আমদানীকৃত ২ হাজার ৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দর। তাৎক্ষণিকভাবে দুইশর বেশি নিহত, হাজার অযুত আহত এবং লক্ষাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম শস্যাগারটিও। লেবাননে কর্মরত বাংলাদেশের পাঁচজন প্রবাসী নাগরিক নিহত এবং শতাধিক আহত হন, যার বেশির ভাগ ছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৈরুত বন্দরের কাছে নোঙর করে থাকা জাতিসংঘ শান্তি মিশনের দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা বিজয়। হিরোশিমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা পারমাণবিক বোমা ফ্যাট বয়ের বারো ভাগের এক ভাগ শক্তি নিয়ে ঘটা বিস্ফোরণে ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি ছিল। এমনকি ২০০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সাইপ্রাসও টের পায় এ বিস্ফোরণের ধাক্কা। একই ওয়্যারহাউসে কয়েক দিন আগে ৩০ থেকে ৪০ ব্যাগ আতশবাজি রাখা হয়েছিল। কোনো কারণবশত এতে আগুন ধরে গেলে প্রাথমিক বিস্ফোরণ ঘটে। অসতর্কতার মূল্য কত ভয়ানক হতে পারে, এ শিক্ষাই দিয়ে গেছে বৈরুত ট্র্যাজেডি।

রুদ্র ছিল প্রকৃতিও

ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলের সাও লুইস উপকূলে মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ডুবে যায় তিন লাখ ডেড ওয়েট টনের আকরিক লোহা পরিবহনকারী সুবিশাল জাহাজ স্টেলার ব্যানার। আধুনিক ভিএলওসিগুলোর (ভেরি লার্জ ওর ক্যারিয়ার) ডিজাইন এবং গঠনগত দুর্বলতা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে স্টেলার ব্যানার ডুবে যাওয়ার পর ধস নামে ব্রাজিলের লোহার খনি ব্যবসায়। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হিসেবে নিজেদের ২৫ কনভার্টেড ভিএলওসিকে অপারেশনাল কর্মকা- থেকে প্রত্যাহার করে নেয় মাইনিং কোম্পানি ভেল।

গত মে মাসে মেলবোর্ন থেকে চীন যাওয়ার পথে খারাপ আবহাওয়ার কবলে পড়ায় কনটেইনার জাহাজ এপিএল ইংল্যান্ড থেকে অন্তত ৫০টি কনটেইনার নিউ সাউথ ওয়েলসের সাগরে পড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, জাহাজে সারিবদ্ধ কনটেইনারসমূহও জাহাজের খোলের ভেতরে এলোমেলোভাবে পড়ে যায়।

সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে জুলাইয়ে। আফ্রিকার মরিশাস উপকূলে ডুবে থাকা কোরাল রিফে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় মিৎসুই ওএসকে লাইন পরিচালিত চীন থেকে ব্রাজিলগামী জাহাজ এমভি ওয়াকাশিও। জাহাজে থাকা প্রায় চার  হাজার টন ফুয়েল অয়েলের প্রায় সবটুকু মিশে যায় পর্যটন স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দ্বীপদেশটিতে, সৃষ্টি হয় অকল্পনীয় মাত্রায় সমুদ্র দূষণ। অত্যন্ত সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যকে মারাত্মক হুমকিতে ফেলা ও অদক্ষ নেভিগেশনের দায়ে ৬০ বছরের কারাদ- দেওয়া হতে পারে ইতিমধ্যেই আটক ওয়াকাশিও’র ক্যাপ্টেনকে।

বছরের শেষে হাওয়াই উপকূল থেকে ১ হাজার ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূর দিয়ে চীনের ইয়ানতিয়ান বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লং বিচ বন্দরে যাওয়ার সময় ওশান নেটয়ার্ক এক্সপ্রেসের (ওয়ান) ১৪ হাজার ৫২ টিইইউ জাহাজ দ্য ওয়ান অ্যাপাস থেকে আঠারোশর বেশি কনটেইনার খোলা সাগরে পড়ে যায়। প্রাথমিক কারণ হিসেবে তদন্তে মৌসুমি ঝড় এবং আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের ফলে সৃষ্ট প্রবল রোলিংকে দায়ী করা হয়েছে।

বাজারে টিকে থাকতে অধিগ্রহণ, একীভূত হওয়ার হার বেড়েছে

এপিএম-মায়েস্ক  , এমএসসি, কসকোর মতো শীর্ষস্থানীয় শিপিং সংস্থাগুলো নয়া প্রযুক্তি ও অনশোর কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রবণতা এ বছরও বজায় রেখেছে। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্ববাহী আঞ্চলিক হাবগুলোতে ব্যবসার সুবিধার্থে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পোর্ট লজিস্টিকস, টার্মিনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। গত এপ্রিলে মার্কিন ওয়্যারহাউজিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি পারফরম্যান্স টিমকে অধিগ্রহণ করেছে মায়ের্স্ক। একই সময় সাংহাইভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিজ কনটেইনার লাইন (ওওসিএল)-এর শতভাগ শেয়ার কিনে নিয়েছে চীনা শিপিং জায়ান্ট কসকো। ডেলফিন শিপিং এলএলসির নিয়ন্ত্রণাধীন উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়ে যৌথ অপারেশন শুরু করেছে বৃহৎ বাল্ক ক্যারিয়ার কো¤পানি স্টার বাল্ক। এছাড়াও বহু ছোট প্রতিষ্ঠান একে অপরের সাথে যুক্ত হয়েছে নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে।

উপসংহার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল শিপিং ও মেরিটাইম। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে অতি দ্রুত ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে নৌবাণিজ্য। আবার নতুন ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে সার্স কোভ-২ এর অন্য একটি ভ্যারিয়েন্ট, যা প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও মারণঘাতী, দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম, নতুন আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন বিতরণ কাজে মুখ্য ভূমিকা রাখতে যাওয়া শিপিং খাত আগের বছরের চেয়ে ভালোভাবে কাটাতে পারবে নতুন বছর, এ আশা করাই যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here