দেশের মেরিটাইম খাতকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রকাশনার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রশংসনীয়

প্রিয় পাঠক, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বন্দরবার্তা অতিক্রম করল সাফল্যমণ্ডিত  পাঁচ বছর। গত পাঁচ বছরে বাংলা ভাষায় মেরিটাইম চর্চায় একক ও অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছে বন্দরবার্তা। পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত বন্দরবার্তার প্রকাশ এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমই বটে। মেরিটাইম সেক্টর ও বন্দরের অংশীজনদের সার্বিক কর্মকা-, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব উদ্ভাবনী কৌশল-পরিকল্পনা ও উত্তম চর্চাগুলো বস্তুনিষ্ঠতার সাথে তুলে আনছে বন্দরবার্তা। দেশের মেরিটাইম খাতকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রকাশনার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা নিঃসন্দেহে গর্বের। এই শুভক্ষণে বন্দরবার্তা পরিবারের সকলকে জানাই অভিনন্দন।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আরো একটি নতুন বছরে পা দিল বিশ্ব। ২০২০ সালটি বিশ্বের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করতে দেশে দেশে প্রায় একযোগে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গ্রেট লকডাউন নামেই অভিহিত হয় এই অভূতপূর্ব ঘটনা। এর ফলে স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের কর্ম-চাঞ্চল্য, বিশ্ববাণিজ্য-পাল্টে গিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি। লকডাউন ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশেও। তবে ব্যতিক্রম ছিল সমুদ্রবন্দরসমূহ বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর। ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম আর প্রয়োজনীয় পণ্যে সরবরাহ অব্যাহত রাখতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বন্দর সচল রেখেছেন এর নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। একই সাথে থেমে থাকেনি বন্দরবার্তাও। এই কঠিন সময়েও আমাদের চেষ্টা ছিল বন্দর ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে মেরিটাইম-সংশ্লিষ্ট সবাইকে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবগত করা। আগামীতেও বন্দরবার্তা এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে-ষষ্ঠ বছরে পদার্পণের শুভক্ষণে এটাই আমাদের ব্রত।

ঠিক এই সময়ে বিরাট এক রূপান্তরের মুখে দাঁড়িয়ে বৈশ্বিক নৌপরিবহন শিল্প। বছরজুড়েই করোনাভাইরাস নিয়ে অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক ছিল নৌপরিবহন শিল্পে। যদিও নৌপরিবহন শিল্পে নানা পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২০ সাল। বেশকিছু বিধি এবং নীতিমালাতেও পরিবর্তন আসে বছরটিতে। আইএমও ঘোষিত বহু আকাক্সিক্ষত সালফার ক্যাপ ২০২০ কার্যকরী হয় বছরের প্রথম দিন থেকেই। একই সাথে সোলাস, মারপোল অ্যানেক্স এবং কিছু কোডের ক্ষেত্রেও বেশকিছু সংশোধনী কার্যকর হয়েছে। সন্দেহ নেই এসব সংশোধনী মেরিটাইম খাতকে আরো পরিবেশবান্ধব ও কল্যাণমুখী করবে এবং বৈশ্বিক নৌবাণিজ্যের ঝুঁকিগুলো কমিয়ে এনে এই শিল্প খাতকে আরো নিরাপদ করে তুলবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিশ^ ২০২০-কে মনে রাখবে করোনাভাইরাসের কারণে। আঙ্কটাড প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০২০’ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের দুর্বল অর্থনীতির পিঠে ২০২০ সালে শক্তিশালী বাণিজ্যের আশা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু করোনায় বদলে গেছে সব পূর্বাভাস-২০০৮-০৯ এর পর সর্বনিম্ন অংকে নেমেছে মেরিটাইম প্রবৃদ্ধি। তবে শুধু কোভিড-১৯ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূরাজনীতি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধিগ্রহণ-একীভূতকরণের মতো আরো বেশকিছু কারণেও ২০২০ সালে বদলে গেছে বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি। তারপরও থেমে থাকেনি, হতাশা পেছনে ফেলে আরো টেকসই শিল্প খাতে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেই প্রচেষ্টার ফলেই বছরের শেষ প্রান্তে এসে করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে ওঠার লক্ষণ দেখা গেছে মেরিটাইম-সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে।

এই প্রতিকূল সময়েও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে দীর্ঘমেয়াদের বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্রতী রয়েছে সরকার। করোনায় সাময়িকভাবে ব্যাহত হলেও, বন্দর ও এর হিন্টারল্যান্ড কেন্দ্রিক অবকাঠামো এবং পতেঙ্গা টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে গেছে দ্রুতগতিতে। ক্রমোন্নয়নের ধারায় লয়েড’স লিস্টের সেরা কনটেইনার বন্দরের তালিকায় এ বছর ৫৮তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

প্রিয় পাঠক, আমাদের মেরিটাইম চর্চা সমৃদ্ধ হোক আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে। নতুন বছরে বন্দরবার্তার পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা পাঁচ বছরের পথপরিক্রমায় সাথে থাকার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here