করোনা অভিঘাতের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো বিশ্ব অর্থনীতি চলতি বছর আবারও নিম্নমুখী হতে পারে

করোনা অতিমারির কারণে গত বছর বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন খাতকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। অতিমারির দাপটে ভয়ানক দুঃস্বপ্নের একটা বছর কেটেছে ২০২০ সালে। ২০২১ সালে চেষ্টা ছিল সেই দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর। নানামুখী সংকট থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা গেছে গত বছর জুড়ে। আবার অভিযোজন সক্ষমতার চিরন্তন রীতি মেনে যেকোনো সংকটই সেখান থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেয়। সেই ধারায় গত বছর আমরা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বেশকিছু নতুন ইতিবাচক আইডিয়া ও পদক্ষেপ দেখতে পেয়েছি।

২০২২ সাল মেরিটাইম খাতের জন্য কেমন যাবে, সেই বিষয়ে যেকোনো পূর্বাভাস দেওয়ার আগে জানতে হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের হালহকিকত। ২০২০ সালের সংকট কাটিয়ে ২০২১ সালে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো বিশ্ব অর্থনীতি চলতি বছর আবারও নিম্ন মুখী হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। কেন প্রবৃদ্ধির এই নিম্ন গতি-এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে আইএমএফ। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো নাছোড়বান্দা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের আবির্ভাব। এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে অনেক দেশই নানা বিধিনিষেধ জারি করেছিল। সেই সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এ সবকিছু বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সমুদ্র পরিবহন খাতে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ৯৫২ টিইইউ কনটেইনার তৈরি পোশাক নিয়ে ইতালির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৪ জেটি ছেড়ে যায় লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি সোঙ্গা চিতা। এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল। পোশাক রপ্তানি খাতে এই ঘটনা নতুন দিগ উন্মোচন করেছে। এই পথে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ইউরোপ পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র দুই সপ্তাহ, খরচ কমবে ৩০ শতাংশ।

জোর কদমে এগিয়ে চলেছে দেশের মেগা প্রজেক্টগুলোও। চলতি বছরের জুনে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে পদ্মা সেতুর। মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্টেশনে পদ্মা সেতু হয়ে উঠবে দেশের মেরুদ-। অন্যদিকে দেশের হিন্টারল্যান্ড কানেক্টিভিটিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাশের শিল্পাঞ্চল এবং পশ্চিম পাশে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও মূল নগরীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই টানেলের নির্মাণকাজ চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালে কেমন হবে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক মেরিটাইম খাতের গতিপ্রকৃতি, তার পূর্বাভাস নিয়েই সাজানো হয়েছে এবারের প্রধান রচনা।

ডিজিটাল দেশে পরিণত হওয়ার প্রত্যয়ে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই অগ্রগতির গর্বিত অংশীদার  চট্টগ্রাম বন্দর। শতভাগ অটোমেশনের উদ্দেশ্যে ৫০টি মডিউল বাস্তবায়ন কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ই-জিপির মাধ্যমে বন্দরের ঠিকাদাররা তাদের টেন্ডার জমা দিচ্ছেন ও বন্দরের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছেন। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের বন্দর ব্যবহারকারীরা একই জায়গায় সকল সেবা পাচ্ছেন ও সকল সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। গত ১ ডিসেম্বর থেকে স্বয়ংক্রিয় ডেলিভারি পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যছাড়ে অনলাইন ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) পদ্ধতি চালু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি শিপিং লাইন এই পদ্ধতিতে কাজ করছে, সফলতা শেষে পরবর্তীতে সব শিপিং লাইনের জন্য এই পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হবে। অন্যান্য সার্ভিসগুলো নিয়ে সম্পূর্ণ অটোমেশন চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ডিজিটাল সেবা নিয়ে রয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here