নতুনের আবাহনে পুনরুজ্জীবিত হবে সমুদ্রশিল্প

মহামারির দুঃসময় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আরও একটি বছর কাটাল বৈশ্বিক সমুদ্র খাত। কখনো উত্তরণ, কখনো প্রতিবন্ধকতা-এমনটাই ছিল বিদায়ী বছরের চলার পথ। তবে এর মধ্যেও কিছু আশার আলো দেখা গেছে সমুদ্রশিল্পে। এই আলো অবলম্বন করে নতুন বছরে এগিয়ে যাবে মেরিটাইম খাত-এটাই প্রত্যাশা

আরও একটি বছরকে পেছনে ফেলেছি আমরা। অতিমারির এই সময়ে কোনো কিছুই তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। থেমে থেমে চলছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চাকা। বিশেষ করে নভেল করোনাভাইরাসের বারবার রূপ পরিবর্তনের কারণে কোনো পরিকল্পনাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

নতুন বছরের শুরুতেই একটি বিষয় সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে-কেমন যাবে বছরটা। মেরিটাইম খাতেও এই আগ্রহের কমতি নেই। তবে সমস্যা হলো, করোনার ধরন পরিবর্তনের কারণে কোনো কিছু সম্পর্কেই আগেভাগে হিসাব করা যাচ্ছে না। তাই ২০২২ সালের পূর্বাভাস দেওয়াটাও বিশ্লেষকদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবুও কিছু আইডিয়া তো পেতে হবে। এ কারণে বিদায়ী বছরের ট্রেন্ড দেখে নতুন বছরের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা খুঁজে নেওয়া হচ্ছে। এগুলোর সবই যে দৃশ্যমান হবে, তা নয়। তবে কোনো একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে অগ্রসর হওয়ায় দোষের কী?

ফিরে দেখা ২০২১

করোনা মহামারির কারণে গত বছর বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন খাতকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের রেশ ২০২২ সালেও থাকবে। নতুন বছরটা কেমন যাবে, সেই বিষয়ে ধারণা পেতে বিদায়ী বছরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনায় চোখ বুলানো দরকার।

অতিমারির দাপটে ভয়ানক দুঃস্বপ্নের একটা বছর কেটেছে ২০২০ সালে। ২০২১ সাল ছিল সেই দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। সেই পুনরুত্থানের গতিটা খুব একটা মসৃণ না হলেও কিছু ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা গেছে গত বছর। যেকোনো সংকটই অস্তিত্ব বিপন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার অভিযোজন সক্ষমতার চিরন্তন রীতি মেনে এই সংকটই সেখান থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেয়। সেই ধারায় গত বছর আমরা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বেশকিছু নতুন ইতিবাচক আইডিয়া ও পদক্ষেপ দেখতে পেয়েছি।

করোনা মহামারি আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। সমুদ্র পরিবহন ও গভীর সমুদ্র বায়ুবিদ্যুৎ খাতকে এখন আরও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে। নতুন যেসব জাহাজ নির্মাণ করা হবে, সেগুলোতে আধুনিক ব্যালাস্ট ওয়াটার ব্যবস্থাপনার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অবশ্য সব ক্ষেত্রে এই সবুজ রূপান্তর দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আঙ্কটাডের রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট অনুযায়ী ২০২১ সালে নতুন যেসব জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ এসেছে, সেগুলোয় আধুনিক ইকো-ইঞ্জিনের কার্যাদেশ রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। আর জ্বালানিসাশ্রয়ী ব্যবস্থার কার্যাদেশ রয়েছে ১৫ শতাংশেরও কম।

এই যে মেরিটাইম ও অফশোর এনার্জি খাত নতুন সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে, তার নেপথ্যে আর্থিক বিষয়টি বড় নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে। যেকোনো রূপান্তরেই ব্যয়ের অংকটি বেশ বড় হয়। সমুদ্রশিল্পে টেকসই পরিবর্তন আনতে হলে তাই আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

কেমন যাবে ২০২২

চলতি বছর মেরিটাইম খাতের জন্য কেমন যাবে, সেই বিষয়ে যেকোনো পূর্বাভাস দেওয়ার আগে জানতে হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের জন্য বছরটি কেমন যাবে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর সমুদ্র পরিবহন খাত বহুলাংশে নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক গতিশীলতা না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যও মুখ থুবড়ে পড়ে। আর বাণিজ্য না থাকলে পণ্য পরিবহনের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রাণভোমরা হলো ভোক্তাচাহিদা। অর্থনীতির অনেকগুলো সূচকের ইঙ্গিতবাহী এটি। যেমন ভোক্তাচাহিদা স্তিমিত থাকার অর্থ কয়েকটি হতে পারে। প্রথমত, কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। মানুষের আয়ের উৎস না থাকলে মৌলিক চাহিদা বাদে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যায়। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা। একটি দেশ বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি নিম্ন মুখী হলে নাগরিকরা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ব্যয় কমিয়ে দেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তাচাহিদায় ভাটা পড়ে। তৃতীয়ত, অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি। ভোগ্যপণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বাজারে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।

ভোক্তাচাহিদার সংকোচন তাই অর্থনৈতিক সংকোচনের বড় নির্দেশক। ২০২০ সালে বিশ্বের বড় প্রায় সব অর্থনীতিরই সংকোচন হয়। আর এই সংকোচনের প্রধান কারণ ছিল নভেল করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক এই মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে আরোপ করা হয় লকডাউনের বিধিনিষেধ। ভ্রমণ, আথিতেয়তা থেকে শুরু করে উৎপাদন-অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই নেমে আসে স্থবিরতা। মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় বাজারে চাহিদায় ব্যাপক ধস নামে। বছরের শেষের দিকে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হতে শুরু করায় পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে ভোক্তাচাহিদা। একই সঙ্গে গতি পায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। তবে বছরের প্রথমার্ধের ধাক্কা সামলে ওঠার জন্য যথেষ্ট ছিল না সেটি। ফলে পুরো বছরে মন্দার খড়্গ এড়াতে পারেনি অনেক দেশই।

সেই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০২১ সালে অনেক দেশই ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতি সেই গতি আবারও কিছুটা হারিয়ে ফেলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কিন্তু এই দুই পরাশক্তি কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার ২০২১ সালের ৫ দশমিক ৬ থেকে কমে দাঁড়াতে পারে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সালে বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একমাত্র দেশ হিসেবে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা চীনের প্রবৃদ্ধিও গতি হারাতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের ৮ দশমিক ১ থেকে কমে দেশটির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া বড় দেশগুলোর মধ্যে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৯ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, পরের অর্থবছরে তা দাঁড়াতে পারে ৭ শতাংশে।

কেন প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে-এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে আইএমএফ। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো নাছোড়বান্দা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের আবির্ভাব। এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে অনেক দেশ এরই মধ্যে বিধিনিষেধ জারি করেছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট চলছেই। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি তো রয়েছেই। এ সবকিছু বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আইএমএফ ধারণা করছে, এ বছর চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমে আসার মধ্য দিয়ে উচ্চমূল্যস্ফীতির ধারা কিছুটা প্রশমিত হবে।

সাপ্লাই চেইনের সংকট অব্যাহত থাকতে পারে

২০২১ সাল ছিল বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য বিস্মরণযোগ্য একটি বছর। জাহাজজট, কনটেইনার-সংকটের কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। আর সাপ্লাই চেইনের এই স্থবিরতায় গতি হারায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। এই সংকট চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পণ্য সরবরাহে বিলম্ব চাপ তৈরি করে ভোক্তাবাজারে। বন্দরে জাহাজ আটকে থাকায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া যায় বেড়ে। আর এই বাড়তি ভাড়ার বোঝা শেষ পর্যন্ত টানতে হয়েছে ভোক্তাদের। লজিস্টিকস সার্ভিস প্রোভাইডার প্রজেক্ট ফরটি ফোরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থবিরতার কারণে ২০২১ সালে রিটেইলারদের পরিবহন খরচ তো বেড়েছেই, এর পাশাপাশি পণ্যজটের কারণে ইন্টারেস্ট এক্সপেন্স হিসেবে বাড়তি প্রায় ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার গুনতে হয়েছে তাদের।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বলছে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে বেশ ভালোভাবেই ফিরে এসেছিল বিশ্ববাণিজ্য। কিন্তু সাপ্লাই চেইনের স্থবিরতার কারণে বাণিজ্যের সেই গতি ফের শ্লথ হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে ডব্লিউটিওর গুডস ট্রেড ব্যারোমিটার ১০০ পয়েন্টের বেজলাইনের নিচে নেমে যায়। এই পতনের কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, আমদানি চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বছরের প্রথমার্ধে বন্দরগুলোর ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল। এর ফলে বন্দরে তৈরি হওয়া জট বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সমুদ্র পরিবহনে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া

২০২১ সালে সমুদ্র পরিবহন ব্যয় ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এই প্রবণতা ২০২২ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ব্যয় বৃদ্ধির দুটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে-সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থবিরতা। দ্বিতীয় কারণটি হলো সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের ব্যয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে, তার কিছু খরচ রয়েছে। জ্বালানি রূপান্তরের ব্যয় সামাল দিতে জাহাজ কোম্পানি, নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর বাড়তি ব্যয়ের চাপ গিয়ে পড়ছে জাহাজ ভাড়ায়। ফলে পণ্য পরিবহনের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০৫০ সাল নাগাদ নিঃসরণের মাত্রা ২০০৮ সালের মাত্রার অর্ধেকে নামিয়ে আনা। তবে গত নভেম্বরে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ২০৫০ সাল নাগাদ শিপিং খাতে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রও এই আহ্বানকারী দেশের তালিকায় রয়েছে।

এই যে নতুন লক্ষ্যমাত্রা, সেটি অর্জনের পথ খুব একটা সহজ হবে না। কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য জ¦ালানি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নতুন অবকাঠামো ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সরবরাহ ব্যবস্থা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কাজে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ লাগবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি ডলার লাগবে ২০৩০ সাল নাগাদ। এই বিপুল অর্থের সংস্থানের জন্য পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড। বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল ছোট দেশগুলো এর কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।

বন্দরে পণ্য ফেলে রাখার প্রবণতা কমবে

লজিস্টিকস কোম্পানিগুলো এতদিন বন্দরগুলোকে সাশ্রয়ী স্টোরেজ এরিয়া হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ভোক্তাচাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশে দেশে পণ্য আমদানির হিড়িক পড়ে গেছে। এতে বন্দরগুলোর ওপরও চাপ তৈরি হয়েছে। আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরগুলোর রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার জোগাড়। বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় অনেক বন্দরেই পণ্যের পাহাড় জমে গেছে।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জোয়ারে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ব্যাপকতা হঠাৎ করেই বেড়েছে। ফলে পণ্য পরিবহনে কনটেইনারের চাহিদা এখন আকাশচুম্বী। এ অবস্থায় বন্দরে কনটেইনার ফেলে রাখাটা রীতিমতো বিলাসিতার শামিল। অনেক বন্দর কর্তৃপক্ষ আবার স্থান সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে ফেলে রাখা কনটেইনারের ওপর বাড়তি ফি আরোপের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

বন্দরে জট, কনটেইনার সংকটসহ আরও কিছু প্রভাবকের কারণে লজিস্টিকস কোম্পানিগুলো হয়তো আর বন্দরগুলোকে গুদাম হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। আর এই বিষয়টি তদারকির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শরণাপন্ন হতে পারে।

লজিস্টিকস কোম্পানিগুলো এতদিন বন্দরগুলোকে সাশ্রয়ী স্টোরেজ এরিয়া হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। তবে ২০২২ সালের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই প্রবণতা কমবে

কোভিড টিকার সনদ নয়, গুরুত্ব পাবে পোর্ট কল অপটিমাইজেশন

গত দুই বছরে শিডিউল রিলায়েবিলিটি শিপিং খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য বড় এক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাহাজগুলোর শিডিউল মেনে চলার প্রবণতা ছিল ৮০ শতাংশের আশপাশে। তার পর থেকেই শিডিউল রিলায়েবিলিটির গ্রাফ নিম্ন মুখী। বর্তমানে এটি কমতে কমতে ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে।

এই অবস্থায় বন্দর এলাকায় জাহাজজট নিরসনে পোর্ট কল অপটিমাইজেশনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। জাহাজগুলোকে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কখন পৌঁছালে সেটি বন্দরে ভিড়তে পারবে। জাহাজগুলোও সে অনুযায়ী যাত্রার সময়সূচি নির্ধারণ করে নিতে পারছে।

এর কিছু উপকারও রয়েছে। যেমন স্বাভাবিক সময়ে জাহাজগুলোর প্রবণতা থাকে যত দ্রুত সম্ভব এক বন্দরে পৌঁছে পণ্য খালাস করে অন্য বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করা। এর জন্য জাহাজগুলোর চলার গতি অনেক বেশি রাখা হয়, যার ফলে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। আর বেশি জ্বালানি পোড়ানোর অর্থ হলো পরিবেশের বেশি ক্ষতি হওয়া। পোর্ট কল অপটিমাইজেশনের ফলে বন্দরগুলো আগে থেকেই সময়সূচি জানিয়ে দেওয়ার ফলে জাহাজগুলোও সেই অনুযায়ী গতি নির্ধারণ করে নিতে পারে। গতি কিছুটা কম রাখার ফলে জ্বালানি সাশ্রয় হয় তাদের। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণও কিছুটা কম হয়।

ডিজিটালাইজেশন আইওটির ব্যবহার বাড়বে

বর্তমান যুগে কর্মপদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)। কনটেইনার পরিবহনেও আইওটির ব্যবহার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন ভ্যাকসিনের মতো কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা জরুরি। কনটেইনারে করে এসব পণ্য পরিবহনের সময় প্রতিনিয়ত তামপাত্রা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে, যা আইওটির মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব। মায়েরস্ক হোনাম, ইয়ানতিয়ান এক্সপ্রেসের মতো দানবাকার কনটেইনার জাহাজে এরই মধ্যে আইওটির ব্যবহার দেখা গেছে। ২০২২ সালে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়তে পারে। রাসায়নিক ও জ্বালানি তেল নিঃসরণ, অগ্নিকা-রে সূত্রপাত ইত্যাদি প্রতিরোধের মাধ্যমে জাহাজগুলোর চলাচল আরও নিরাপদ করে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে আইওটি।

চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচলের উদ্বোধন করছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান

গভীর সাগরে তেলগ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে

বর্তমান যুগে সুনীল অর্থনীতির ওপর বেশ জোর দেওয়া হচ্ছে। আর সুনীল অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ। এই সম্পদের মধ্যে তেল ও গ্যাস অন্যতম। আধুনিক বিশ্বে স্থলভাগে তেল-গ্যাস উত্তোলনের চেয়ে গভীর সমুদ্রে উত্তোলনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ২০২২ সালে উত্তোলন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাস পরিচালিত এক জরিপে কর্মকর্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৯ শতাংশ নির্বাহী বলেছেন, ২০২২ সালে উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ১৫ শতাংশ বলেছেন, এ মুহূর্তে তাদের লক্ষ্য হলো উত্তোলনের বর্তমান মাত্রা ধরে রাখা।

যুক্তরাষ্ট্র যে গভীর সমুদ্র তেল ও গ্যাস উত্তোলন বাড়াবে, তা সাম্প্রতিক এক নিলামেই স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি মেক্সিকো উপসাগরে বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা নিলামের আয়োজন করা হয়। এই নিলাম থেকে ১৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৪ সালের পর একক কোনো নিলামে তেল ও গ্যাসক্ষেত্র ইজারাবাবদ সরকারের রাজস্ব আয় এটাই সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো তেল-গ্যাস উত্তোলনের তৎপরতা দেখা যেতে পারে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে এই কর্মকা-।

চলতি বছর গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর এই প্রচেষ্টা দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে

পরিবেশবান্ধব সমুদ্রশিল্প নতুন প্রযুক্তি

২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পরিবেশবান্ধব সমুদ্র পরিবহন খাতের জন্য নতুন প্রযুক্তি’। এর অর্থ হলো, মেরিটাইম খাতের সর্বাত্মক টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে বিশ্ববাসী।

গত বছরের ২৮ জুন-২ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) ১২৫তম সেশনে এই প্রতিপাদ্য গৃহীত হয়। এর প্রস্তাবনা আনেন আইএমও মহাসচিব কিটাক লিম। প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে টেকসই মেরিটাইম খাত ও মহামারি-উত্তর সময়ে পরিবেশবান্ধব বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা আরও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বিশেষ করে এসডিজি ১৩ ও ১৪-তে জলবায়ু পদক্ষেপ এবং সাগর ও সমুদ্রসম্পদের টেকসই ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। আইএমওর ২০২২ সালের প্রতিপাদ্যও এর সঙ্গে সংগতি রেখেই নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমতে পারে জাহাজ নির্মাণ কার্যাদেশ

গত বছর জাহাজ নির্মাণ কার্যাদেশে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। তবে চলতি বছর এতে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে জাহাজ নির্মাণের নতুন কার্যাদেশ কমতে পারে ১৫-২৩ শতাংশ। ব্যাংকের ওভারসিজ ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সমুদ্র পরিবহন খাতে জাহাজ ভাড়া তিন-চার গুণ বেড়েছিল, যা জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ বেড়ে যাওয়ায় বড় ভূমিকা রেখেছে।

পরিবর্তন আসতে পারে ক্রু সিস্টেমে

গত বছর ক্রু পরিবর্তন ও শোর লিভের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নাবিকদের। বিষয়টি নাবিকদের প্রসন্নতার সূচকে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মিশন টু সিফেরারের একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার কারণে ক্রুদের ভ্রমণ-সংক্রান্ত জটিলতা, জাহাজ ত্যাগ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও শোর লিভের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নাবিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারির কারণে জাহাজে জীবনযাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক পরিস্থিতি বাড়ছে। শিগগির গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে না পারলে নাবিকদের মানসিক অবসাদ দূর করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়।

জাহাজের ক্রুরা সাধারণত ওয়ার্ক টাইম-ভিত্তিক শিডিউল অনুযায়ী কাজ করেন। যেমন মাসিক চুক্তি, ছয় মাস জাহাজে অবস্থান, এক অথবা দুই মাস শোর লিভে থাকা ইত্যাদি। মহামারির মধ্যে বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্রু পরিবর্তনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তোলে। এই সংকট নিরসনে ২০২২ সালে ক্রু পরিবর্তন নিয়ে নতুন উদ্ভাবনী কিছু ভাবতে হবে খাতসংশ্লিষ্টদের। অন-বোর্ড শিপ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মডিউল তৈরি হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব মডিউল একেকটি স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় ক্রু সিস্টেমে পরিবর্তন আসবে, সেটি এখনই বলে দেওয়া যায়।

এলএনজি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হতে পারে

উষ্ণায়ন প্রতিরোধে কয়লানির্ভরতা থেকে সরে আসার কারণে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার। স্বাভাবিকভাবে পণ্যটির বৈশি^ক বাণিজ্যও ক্রমাগত বাড়ছে। এই প্রবণতা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ ২০২২ সালেও এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্য বাড়বে। তবে প্রবৃদ্ধির এই গতি ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা শ্লথ হতে পারে বলে ধারণা করছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত বছর এশিয়ায় শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলে এলএনজির বাণিজ্যে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর প্রবৃদ্ধির হার কমে ৪ শতাংশে নামতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে এশিয়ায় এলএনজির চাহিদা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে চলতি বছর চাহিদায় কিছুটা মন্দা যাবে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় পণ্যটির আমদানি কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ।

২০২০ সালে এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ৬০ লাখ টন। আইইএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। তবে চলতি বছর প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে এলএনজি বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৯ কোটি ২০ লাখ টন।

জলদস্যুতা প্রতিরোধের গতিপথ জানা যাবে

সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর কাছে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হলো জলদস্যুতা। অবশ্য ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রে জলদস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা ১৯৯৪ সালের পর সর্বনিম্নে নেমেছে। আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতির মোট ১৩২টি ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯৫টি। ২০১৯ সালে ছিল ১৬২টি।

গত কয়েক বছর জলদস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ ছিল গিনি উপসাগরে দুষ্কৃতিকারীদের উৎপাত বৃদ্ধি। এছাড়া সিঙ্গাপুর প্রণালিতে জলদস্যুতা বেড়ে যাওয়াও অন্যতম কারণ ছিল। তবে গিনি উপসাগরে দুষ্কৃতিকারীদের উৎপাত কমে যাওয়ায় গত বছর সার্বিকভাবে জলদস্যুতা পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়েছে।

জলদস্যুতা প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে নাইজেরিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচি ও অন্তত দুটি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ফোর্সের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কারণে গত বছর গিনি উপসাগরে জলদস্যুদের আক্রমণের প্রবণতা কিছুটা কম ছিল। জলদস্যুতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত মে মাসে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলের (বিমকো) উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় গালফ অব গিনি ডিক্লারেশন অন সাপ্রেশন অব পাইরেসি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী অংশীজনের সংখ্যা বাড়ছে।

এই যে এত প্রচেষ্টা, তার সুফল কতটা টেকসই হবে, সেই গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে ২০২২ সাল। বিমকো তো বলেই দিয়েছে, সমুদ্রে জলদস্যুতা প্রতিরোধ নিশ্চিত করার জন্য এই সময়টা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে গিনি উপসাগরে সাফল্য দেখা গেলেও গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর প্রণালি। রিক্যাপ ইনফরমেশন শেয়ারিং সেন্টারের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর প্রণালিতে এখনো জলদস্যুদের আক্রমণের ঝুঁকি রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এখানকার হামলাগুলো প্রায় সময়ই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। এ কারণে সিঙ্গাপুর প্রণালি পার হওয়ার সময় জাহাজগুলোকে সঙ্গে গার্ড রাখতে বলেছে রিক্যাপ। এছাড়া সেখানে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এগিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের

গত বছর কনটেইনার-সংকট ও জাহাজজটের কারণে বিশ্বের শীর্ষ বন্দরগুলো টালমাটাল অবস্থায় থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ব্যতিক্রম। বন্দর কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কনটেইনার ও জাহাজজট পরিস্থিতিতে অনেকটাই উন্নতি হয়। গত আগস্টে রটারডাম, অ্যান্টওয়ার্প, সিঙ্গাপুর ও পোর্ট ক্ল্যাংয়ের মতো বন্দরগুলো যেখানে জাহাজজটের কারণে বার্থিংয়ে ১০ দিন পর্যন্ত সময় নিয়েছিল, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ একদিনের মধ্যেই বার্থিংয়ের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া তিনটি শিফটে পুরোদমে হ্যান্ডলিং চালু থাকায় জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড সময়ও কমে এসেছে, যাকে করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও সন্তোষজনক পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

করোনা মহামারির মধ্যে চীনের শীর্ষ বন্দরগুলোর কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য আংশিক অথবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের অন্য আরও অনেক বন্দর। তবে মহামারির পুরোটা সময়ে এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ থাকেনি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সচল ছিল বন্দর। দেশের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক মন্দার আঁচ থেকে সুরক্ষা দিতে বন্দরের এই আত্মনিবেদন অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এই গৌরব ২০২২ সালেও অটুট থাকবে বলে আশা করা যায়।

যোগাযোগ রক্ষা, নেভিগেশন, পোর্ট কল অপ্টিমাইজেশনের মতো কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে

সমুদ্র পরিবহন খাতে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ৯৫২ টিইইউ কনটেইনার তৈরি পোশাক নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৪ জেটি ছেড়ে যায় লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি সোঙ্গা চিতা। এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল।

পোশাক রপ্তানি খাতে এই ঘটনা নতুন দিগ উন্মোচন করেছে। এই পথে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ইউরোপ পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র দুই সপ্তাহ, খরচ কমবে ৩০ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘এই ধরনের সেবা দেশের পোশাকশিল্পের জন্য যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করল। আমরা এরই মধ্যে জাহাজটিকে বার্থিংয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেব। অন্য শিপিং লাইন এই ধরনের সরাসরি সার্ভিস চালু করলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে সোঙ্গা চিতার জাহাজীকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইতালির রাষ্ট্রদূত। এ সময় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এই ঘটনাকে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোয় পণ্য পাঠানো হয় অন্য দেশের বন্দর ঘুরে। সেখানে বড় জাহাজের বুকিং পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে ইতালি পৌঁছাতে ৩০ দিনের কাছাকাছি সময় প্রয়োজন হয়। ফলে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, খরচও বাড়ে। প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার এটি বড় কারণ। সরাসরি ইউরোপযাত্রা শুরু হলে সেই বাধা কমে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এমভি সোঙ্গা চিতার ইতালি যাত্রার মাধ্যমে যে সম্ভাবনার সূচনা হলো, চলতি বছর তা আরও বিকশিত হবে এবং আরও বেশি সংখ্যক পণ্য বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউরোপে পাঠানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের জুনে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে পদ্মা সেতুর। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের স্বপ্নের এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে প্রাচীনতম ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দর। দক্ষিণের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় রয়েছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। আর সুন্দরবনঘেঁষা দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার অবস্থান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে। এই তিন সমুদ্রবন্দরের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে সমুদ্রবন্দরগুলোর সরাসরি সংযোগ স্থাপনে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।

আধুনিক যুগে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি ছাড়া কোনো বন্দরই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের বিকাশেও প্রয়োজন বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্টেশনে পদ্মা সেতু হয়ে উঠবে দেশের মেরুদ-। এশিয়ান হাইওয়ে ও ইউরো-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হবে এই সেতু।

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বা কমপক্ষে তিন কোটি মানুষ সরাসরি পদ্মা সেতুর মাধ্যমে উপকৃত হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, এই সেতু চালু হলে পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে। এডিবির হিসাব বলছে, পদ্মা সেতুর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ ও আঞ্চলিক জিডিপি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

অপর যে মেগা প্রকল্প দেশের হিন্টারল্যান্ড কানেক্টিভিটিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে, সেটি হলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাশের শিল্পাঞ্চল এবং পশ্চিম পাশে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও মূল নগরীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই টানেলের নির্মাণকাজ চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা।

মোট ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই টিউবের এই টানেল চালুর বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি এবং কক্সবাজারের গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চালুর পর ২০৩০ সাল থেকে বছরে ১ কোটি ৩৯ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে বলে প্রাথমিক সমীক্ষায় ধারণা করা হয়েছে। এই ট্রাফিকের ৫০ শতাংশই হবে পণ্যবাহী গাড়ি।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটিকে আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে এই বন্দর। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগ স্থাপনের জন্য চাই নির্বিঘ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। কর্ণফুলী টানেল এই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হাইওয়ে নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

করোনা মহামারিকালে বিশ্ববাণিজ্যে যে মন্দা নেমে আসে, তার কারণে জাহাজের দাম ১০-১২ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৫-৬ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। জাহাজের এই দাম কমে যাওয়া বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে হাজির হয়েছে। মহামারির মধ্যেও গত দুই বছরে দেশীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের বহরে যুক্ত হয়েছে ৩২টি জাহাজ।

জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্রযুক্তি বা আইওটি

২০১৯ সালে দেশে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। সেখান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০টিতে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্র পরিবহন খাতে ৬ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অতিরিক্ত ৪০০ কোটি ডলার আয়ের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চলতি বছরও বাংলাদেশে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।

সদ্যবিদায়ী ২০২১ সালে প্রতিবেশী ভারতের জলসীমায় পাঁচটি জলদস্যুতাসহ এশিয়া মহাদেশে সাগরে মোট ৮১টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। তবে স্বস্তির খবর হলো, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় গত বছর এমন কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

২০২১ সালে কোনো দস্যুতার ঘটনা না ঘটায় চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য বন্দর হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিদেশে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি আরও বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশমুখী জাহাজ পাঠাতে বিদেশিরা আরও আগ্রহী হবে।

২০১৯ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর দস্যুতামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর দ্বিতীবারের মতো বন্দরের ৫০ নটিক্যাল মাইলের বিশাল বহির্নোঙর এলাকা দস্যুমুক্ত থাকল।

চট্টগ্রাম বন্দরের এই সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে রিক্যাপ। নজরদারি জোরদারও সাগরে টহল বাড়ানোর কারণে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

দেশের জলসীমার উপকূল থেকে সাগরের দিকে ১২ নটিক্যাল মাইল এলাকা পর্যন্ত নজরদারি করে কোস্ট গার্ড। আর ১২ নটিক্যাল মাইলের পর থেকে দেশের সমুদ্রসীমানা পর্যন্ত নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বাহিনী দুটি সর্বদা বাংলাদেশের সমুদ্র সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য সদাজাগ্রত রয়েছে। তাদের এই তৎপরতার কারণে ২০২২ সালেও চট্টগ্রাম বন্দরসীমা জলদস্যুতামুক্ত থাকার পূর্বাভাস দেওয়াই যায়।

উপসংহার

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালটা বিশ্ব অর্থনীতি ও বৈশ্বিক মেরিটাইম খাতের জন্য বিষাদময় একটি বছর ছিল। ২০২১ সালে সেই দুঃসময় কাটিয়ে ফিরে আসার প্রয়াস দেখা গিয়েছিল। তবে বছরের করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার গতি আবার থমকে যায়। সেই দুর্যোগ শেষে বিশ্ব যখন পুনরায় প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে, তখনই ফের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আঘাত। এমনই এক অনিশ্চয়তাকে সঙ্গে করে ২০২২ সালের সূচনা।

মহামারির কারণে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ক্রুজ লাইনারগুলোকেও গুনতে হয় মোটা অংকের লোকসান। তাই ২০২২ সালে করোনার কারণে আর স্থবিরতা চায় না মেরিটাইম খাত। তবে এর জন্য ভাইরাসটির সংক্রমণ ও ধরন পরিবর্তন প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে আগের দুই বছরের চেয়ে পরিস্থিতির খুব বেশি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন দেখা যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here