উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণের দুর্নাম ঘোচাতে চলেছে ভারত উপমহাসাগর

আফ্রিকার পূর্ব উপকূলসহ সমগ্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে জলদস্যুতার প্রকোপ থেকে রক্ষার দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় দেশসমূহ, বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট ও নিরাপত্তা সংস্থা। প্রায় দেড় দশক ধরে চলে আসা এই সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করেছে।

গিনি উপসাগরে দুষ্কৃতিকারীদের উৎপাত অনেকটাই কমে এসেছে, যার ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিকভাবেও তিন দশকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে জলদস্যুতা। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরও একটি অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল। বৈশ্বিক শিপিং খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এই অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল’-এর তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং (আইসিএস), বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিমকো), ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারট্যাংকো, ইন্টারকার্গো ও অয়েল কোম্পানিজ ইন্টারন্যাশনাল মেরিন ফোরাম। গত ২২ আগস্ট তারা এই পরিকল্পনার একটি অফিশিয়াল নোটিফিকেশন ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) কাছে পাঠিয়েছে। আইএমওর মেরিটাইম সেফটি কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

ভারত উপমহাসাগরীয় অঞ্চলে গত প্রায় চার বছরে জাহাজে জলদস্যুদের আরোহনের ঘটনা ঘটেনি। এই ধরনের ঘটনার খবর সর্বশেষ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৯ সালে। সে সময় হর্ন অব আফ্রিকায় একটি জাহাজ দুষ্কৃতিকারীদের হামলার শিকার হয়। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) টহল বাহিনীর অভিযানে জাহাজটিকে দস্যুমুক্ত করা হয়।

২০১০ সালে হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলে যখন জলদস্যুতার প্রকোপ চরম পর্যায়ে ছিল, তখন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর দুই বছরের মাথায় জাতিসংঘের রেজোলিউশনের ওপর ভিত্তি করে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। উদ্দেশ্য ছিল সোমালিয়ার জলসীমাকে দস্যুতামুক্ত করার জন্য ইইউর এক্সিকিউটিভ মিলিটারি মেরিটাইম অপারেশন চালু করা, যেটি অপারেশন আটলান্টা নামে পরিচিত।

সোমালিয়ায় সবচেয়ে বেশি জলদস্যু হামলার রেকর্ড করা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় ৭৩৬ জন ক্রুর জিম্মি ও ৩২টি জাহাজ দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রে জলদস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা ১৯৯৪ সালের পর সর্বনিম্নে নেমেছে। গত বছর জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতির মোট ১৩২টি ঘটনার খবর পেয়েছে আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯৫টি আর ২০১৯ সালে ছিল ১৬২টি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here