বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করবে জাপান, হবে বন্দর উন্নয়নও

বাংলাদেশে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। প্রস্তাবিত এ শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করতে সমুদ্রবন্দর উন্নয়নসহ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় দেশটি। কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের পর এ প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এই শিল্পাঞ্চল ৩০ কোটি মানুষের আবাসস্থল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় উন্নয়ন জোরদার করবে বলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।

কিশিদার ভারত সফরের পর জাপান সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ১২৭ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। মূলত তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে এ বিনিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে আছে মাতারবাড়ী অঞ্চলে নতুন একটি বাণিজ্যিক বন্দর, যার সঙ্গে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত হবে। তবে এ বন্দরের আওতা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজার ধরাও হবে তার লক্ষ্য।

ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোশি সুজুকি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের মধ্যকার এক বৈঠকে এ–সংক্রান্ত যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, সে সম্পর্কে তিনি মঙ্গলবারে কথা বলেন। তাঁর মতে, এটা ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই লাভজনক হতে পারে।

হিরোশি সুজুকি আরও বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম সম্ভবত ২০২৭ সালের মধ্যে শুরু হবে। একটি শিল্পাঞ্চল নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যার মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চলের সংযোগ স্থাপিত হবে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি ওই বৈঠকে জাপানের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং জাপানসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ আসার পথ সুগম হবে।

নির্মীতব্য মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, যেখানে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ত্রিপুরায় দুই দিনের এ বৈঠক আয়োজন করেছিল গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স। প্রতিষ্ঠানের প্রধান সব্যসাচী দত্ত বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। ফলে মাতারবাড়ী বন্দর ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রপ্তানিকারকদের প্রবেশদ্বার হতে পারে।

চীন তার আলোচিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে, জাপান ও ভারত তার বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকা অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ করছে।

বৈঠকে সুজুকি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিন শতাধিক জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি হতে পারে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন বাড়বে এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে।

এক সরকারি বিবৃতির বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জাপান সফর করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here