গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে নতুন কর্মকৌশল আইএমওর

শিপিং খাতে নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সংশোধিত কর্মকৌশল ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের নিট-জিরো স্ট্যাটাস অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)। সম্প্রতি (৩-৭ জুলাই) লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইএমওর মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন কমিটির (এমইপিসি) ৮০তম অধিবেশনে এই ঐকমত্য তৈরি হয়। প্রায় ১ হাজার ৮০০ প্রতিনিধি অধিবেশনে যোগ দেন।

অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই অধিবেশনের ফলাফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, অধিবেশনে যেসব প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে, সেগুলো খুবই দুর্বল। পরিবেশবাদীরা এমইপিসির এই অধিবেশনকে ব্যর্থ মনে করছেন। অন্যদিকে শিপিং খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈঠকে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে। তারা এমইপিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এছাড়া খাতসংশ্লিষ্ট কিছু সংস্থা এই অগ্রগতি অব্যাহত রেখে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

অধিবেশন শেষে আইএমও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ বন্ধের আরও বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রা ও তা অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা সমৃদ্ধ কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মকৌশলে একটি অভিন্ন উচ্চাকাংক্ষার কথা বলা হয়েছে। নিঃসরণমুক্ত ও কম নিঃসরণকারী জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে এতে। অবশ্য এই কর্মকৌশল কোনো চূড়ান্ত সমাধান নয় বলে স্বীকার করেছে আইএমও।

নতুন কর্মকৌশলের নাম ২০২৩ আইএমও স্ট্র্যাটেজি অন রিডাকশন অব গ্রিনহাউস গ্যাস এমিশন ফ্রম শিপস (২০২৩ আইএমও গ্রিনহাউস গ্যাস স্ট্র্যাটেজি)। এতে মোটা দাগে যেসব উচ্চাকাংক্ষা বা লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো:

  • নতুন যেসব জাহাজ নির্মাণ করা হবে, সেগুলোয় জ্বালানি কার্যদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাহাজের কার্বন নিঃসরণ কমানো।
  • ২০৩০ সাল নাগাদ শিপিং খাতে পণ্য পরিবহন কার্যক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৮ সালের তুলনায় অন্তত ৪০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতে কার্বন তীব্রতা কমানো।
  • ২০৩০ সাল নাগাদ নিঃসরণমুক্ত অথবা স্বল্প নিঃসরণকারী জ্বালানি, প্রযুক্তি ও শক্তির ব্যবহার অন্তত ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা এবং সম্ভব হলে ১০ শতাংশে উন্নীত করা।
  • বিভিন্ন দেশের জাতীয় পরিস্থিতির ভিন্নতা যেমনই হোক না কেন, ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের নিট জিরো পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

আইএমওর কর্মকৌশলে দুটি নির্দেশক চেকপয়েন্টের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-

  • ২০৩০ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতে মোট বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৮ সালের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ কমানো এবং সম্ভব হলে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করা।
  • ২০৪০ সাল নাগাদ বার্ষিক নিঃসরণের মোট পরিমাণ অন্তত ৭০ শতাংশ এবং সম্ভব হলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা এখনো অধিবেশনের চূড়ান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখছেন। তবে তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক কিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, যে ধারণা করা হয়েছিল, আইএমওর নতুন কর্মকৌশল তার চেয়ে খানিকটা শক্তিশালী। তবে তা সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।

আইএমওর মহাসচিব কিটাক লিম বলেছেন, ‘নতুন এই কর্মকৌশল গ্রহণ করা আইএমওর জন্য অনেক বড় একটি অগ্রগতি। সমুদ্র শিল্পে নিঃসরণ বন্ধের প্রচেষ্টায় এটি নতুন একটি অধ্যায় যোগ করবে। তবে একই সঙ্গে এটি চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা নয়। বরং এটি অনেকাংশে শুরু মাত্র। আগামী বছর ও দশকগুলোয় আমাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here