বিচিত্র মৎস সম্পদের অফুরান ভাণ্ডার বঙ্গোপসাগর। সাগরের তলদেশে জমিনের নিচে খুঁড়লেও দেখা যাবে পাতালপুরিতে লুকিয়ে আছে অপরিমেয় খনিজ সম্পদের অশেষ পাহাড়। ভারত আর মায়ানমারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সমুদ্রসংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির সুবাদে, বলতে গেলে, অসীম সম্ভাবনার এক দরোজা খুলে গেছে আমাদের সামনে।

এই সমুদ্র আমার

আন্তর্জাতিক আদালতে নায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকায় মালিকানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা যুক্ত হয়েছে আমাদের সমুদ্রসীমার সঙ্গে। অতএব এসব এলাকায় মৎস শিকার অথবা খনিজ সম্পদ আহরণ, কিংবা নতুন স্থাপনা অথবা গবেষণা পরিচালনা কোনো কিছুতেই এখন আর বাধা নেই কোনো।

গ্যাস ও তেলের মজুত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা ইউএসজিএস-এর মতে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত গ্যাসব্লক থেকে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির আগে আমাদের সমুদ্রসীমায় থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশির বাধার মুখে এসব ব্লকে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। পরে ভারতের দাবিকৃত ১০ টির মধ্যে ৮ টি এবং মায়ানমারের দাবিকৃত ১৮ টির মধ্যে ১৩ টি গ্যাসব্লক ফিরে পেয়েছি আমরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে দেশে, ফলে চাহিদাও বাড়ছে জ্বালানির। এই হারে চাহিদা বাড়ার কারণে শিগগিরই দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেবে। সমুদ্রে অর্জিত নতুন গ্যাস ব্লক এ সংকট মোচনে তখন ভূমিকা রাখতে পারবে।

পাতালপুরির রাজ্যবাসী

সমুদ্রের সম্পদ থাকে দুই ধরনের। প্রাণিজ এবং অপ্রাণিজ। প্রাণিজ সম্পদের মধ্যে পড়ে সকল প্রকার সমুদ্রচারী প্রাণী এবং উদ্ভিদ, যথা, মৎস, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, কাঁকড়া, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, তিমি, প্রবালকীট এবং কেল্প বা সামুদ্রিক ঘাস ইত্যাদি। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ, যা খনন করে উত্তোলন করা হয়, যেমন, চুনাপাথর, তেল, গ্যাস ইত্যাদি।

এ কী রত্নভাণ্ডার

বঙ্গোপসাগরে আমরা পেয়েছি ১৭ ধরনের খনিজ বালু। এর মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট ইত্যাদি। অত্যন্ত মূল্যবান এসব খনিজ বালু বিশ্ববাজারে প্রচুর দামে বিক্রি হয়ে থাকে। আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ লাখ টন জাতীয় খনিজ বালু আহরণ করা সম্ভব। সাগরের তলায় ডিপোজিট থেকে আহরণ করা সম্ভব খনিজ আকরিক। সেগুলো নিষ্কাশন করলে পাওয়া সম্ভব লেড, জিংক, কপার, কোবাল্ট এবং মলিবডেনামের মতো দুষ্প্রাপ্য ধাতু। মহামূল্যবান এসব ধাতু উড়োজাহাজ নির্মাণ এবং নানাবিধ উচ্চতর রাসায়নিক গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়।

অফুরান শক্তির আধার

তেল-গ্যাস একদিন ফুরিয়ে যাবে, কারণ এরা অনবায়নযোগ্য। কিন্তু অনিঃশেষ রয়ে যাবে গ্রিন এনার্জি বা, নবায়নযোগ্য শক্তি, যেমন, বায়ুশক্তি, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্রস্রোত ইত্যাদি। সাগরের বাতাস কাজে লাগিয়ে উইন্ড এনার্জি এবং তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে ওয়েভ এনার্জি, জোয়ার-ভাটা কাজে লাগিয়ে টাইডাল এনার্জি তৈরি করা সম্ভব হবে। এই এনার্জি কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য নানাবিধ উৎপাদনমুখী কাজে লাগানো যাবে। প্রতিবেশি ভারত তাদেও উইন্ড এনার্জি কাজে লাগিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে যা তাদেও মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here