‘সম্ভাবনার নতুন দরোজা খুলে দিয়েছে সমুদ্র অর্থনীতি’

সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে, ত্রিশ বছরের কৌশলগত মহাপরিকল্পনা নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিগত সময়ে বন্দরের ওপর থেকে নিচ সর্বস্তরের কার্যক্রম ডিজিটাইজ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে শতভাগ নিরাপদ হয়েছে বন্দর। পুরোপুরি কনটেইনার বন্দর হয়ে ওঠার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ নতুন নতুন টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হবার পাশাপাশি রিজিওনাল হাব হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। বন্দরে চ্যানেলের দৈর্ঘ্য আর ড্রাফটের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে বে টার্মিনালের মতো বৃহদাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আঞ্চলিক প্রতিবেশি অনেকগুলো দেশের সঙ্গে উপকূলীয় যোগাযোগ শুরু হবার ফলে অসীম সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। বঙ্গোপসাগরে নতুন সমুদ্রএলাকা অর্জনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চট্টগ্রাম বন্দরকেই ব্যাপক আয়োজন সহযোগে প্রস্তুতি নিতে হবে, এখনই।

এবম্বিধ পরিমার্জন আর পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে সিঙ্গাপুর, সাংহাই কিংবা রট্যারড্যামের মতো বিশ্বমানের বন্দর হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এসব বিষয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে আজ এবং আগামী দিনের নীতি ও পরিকল্পনা নিয়ে বন্দরবার্তা সম্পাদক জাফর আলম-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব অশোক মাধব রায়ের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতকার।   

বন্দরবার্তা:

বাংলাদেশের নৌপরিবহন খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন, যেমন, নৌবন্দরের আধুনিকায়ন, কিংবা চ্যানেলের নাব্যতা ধরে রাখা, ইত্যাদি চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন। এগুলো বাস্তবায়নের ফলে কী ধরনের উপকার পেতে যাচ্ছি আমরা?

সচিব:

নদীবাহিত বাংলাদেশে নৌ-পরিবহন খাত মানুষের যাতায়ত ও ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পণ্যপরিবহনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। নদীর উন্নয়নের ওপরই নির্ভরশীল নৌপরিবহনের সামগ্রিক উন্নয়ন। একারণে নদী রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি আমরা। তিন শর ওপর নদী রয়েছে আমাদের। এগুলো শতভাগ নৌ-চলাচল উপযোগী। কিন্তু এগুলো ছাড়া আরও অনেক নদী নাব্যতা হারিয়েছে বিগত সময়ে। সেগুলো পুনরায় বাঁচিয়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারের উৎসাহ এবং মাননীয় নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর নির্দেশনায় নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি আমরা। নদী বিষয়ক টাস্ক ফোর্স গঠন করেছি। অবৈধ নদীদখল আর দূষণ প্রতিরোধে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে তারা। ৫৩ টি নৌপথ খননের মাধ্যমে সেগুলো চলাচল উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে পঞ্চাশ কোটি ডলারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আমাদের নদীগুলোর পানিধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে ৯০ লক্ষ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং পদ্ধতি অনুসরণ করছি। এখানে কেবল একবার ড্রেজিং করেই কোম্পানির দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নদীর নাব্যতা যথাযথ বজায় আছে কিনা, পলি জমে নদীর তলদেশ আবারও ভরাট হয়ে পড়ছে কিনা, সেদিকে নজরদারি করাটাও একই কোম্পানির দায়িত্ব। শিল্প কলকারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেকে ইটিপি করেছেন কিন্তু এগুলো চালু রাখেন না। এসব অভিযোগে অনেকগুলো কারখানায় শতাধিক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসব কারণে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। ইটিপি না থাকলে, কিংবা তা থাকার পরও চালু না রাখলে ওইসকল কলকারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।          

বন্দরবার্তা:

নিজেদের উদ্যোগে এই প্রথম ত্রিশ বছরের কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বন্দরের এ মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন কী ধরনের ইতিবাচক অভিঘাত তৈরি করবে?

সচিব:

১৯৬৬ সালের এবারই প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরের ত্রিশ বছরের জন্য ব্যাপকভিত্তিক মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হলো। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে এই কৌশলগত মহাপরিকল্পনা বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্টস (এইচপিসি) স্থানীয় কেএস কনসালট্যান্টের সাথে যৌথভাবে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। গত বছর ২০ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডল করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১২ সালে বন্দরের মোট হ্যান্ডলিং পরিমাণ ছিল ৪২ মিলিয়ন টন। ২০৪৩ সাল নাগাদ এ চাহিদা উন্নীত হবে ১২৪ মিলিয়ন টনে। শুধু কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের হিসাব বিবেচনায় নিলেও দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে আমাদের হ্যান্ডল করতে হবে প্রায় তিন মিলিয়ন কনটেইনার। ২০৩৬ সালে চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ৫.৬ মিলিয়নে। এদিকে সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্র বন্দরটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করলে ২০৪৩ সালে গিয়ে দেশের কনটেইনার বাণিজ্যের ৫০ শতাংশই হ্যান্ডল করা হবে এখানে। মহাপরিকল্পনা অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দরের বিরাজমান অবকাঠামোর সাথে বে কনটেইনার টার্মিনাল এবং কর্ণফুলি কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণ করা হলে পরবর্তী ত্রিশ বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রবৃদ্ধি চাহিদা অনুযায়ী কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকবে না। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত কেসেটির নির্মাণকাজ শেষ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বে-টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ করে অপারেশনে আনতে হবে।   

বন্দরবার্তা:

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে মূল প্রতিবন্ধক কী বলে মনে করছেন? সেগুলো উত্তরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন?

সচিব: 

চট্টগ্রাম বন্দরের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বন্দরের অনেকগুলো সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে ১৯০ মিটারের বড় এবং ৯.৫ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। একটি ফিডার জাহাজে সর্বোচ্চ ১৫০০ কনটেইনার ধারণ করা সম্ভব। তাছাড়া কর্ণফুলিতে ট্রাফিক বেশি। চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় তিন হাজার নৌযান চলাচল করে এখানে। রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার সরাসরি জাহাজে লোড করা হয়। ফলে একটি জাহাজকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। আমার উদ্যোগ নিচ্ছি রফতানি পণ্য নতুন চালু হওয়া কনটেইনার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) এর আওতায় আনা হলে এই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।  

বন্দরবার্তা:

প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে আমাদের উপকূলীয় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শিগগির অন্যদের সাথেও সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে তা। উপকূলীয় যোগাযোগ থেকে কী জাতীয় সুবিধাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে?

সচিব:

প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে আমাদের উপকূলীয় জাহাজ চলাচল আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে গত ২২ মার্চ। ওইদিন ১৭৬ টিইইউস ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এমভি হারবার-১ জাহাজটি কৃষ্ণপাটনাম বন্দরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। এর আগে গত বছরের ৬ জুন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি হয়। পরবর্তীতে চুক্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে একই বছর ১৫ নভেম্বর নয়াদিল্লীতে দুই দেশের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়। দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক এক ধাপ এগিয়ে নিতে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে এই কার্যক্রম। অনেক কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে যেগুলো রয়েছে আশু নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায়। আপাতত চুক্তির আওতায় জাহাজগুলো এক ট্রিপে ছয় হাজার টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারবে না। আমাদের সমুদ্র বন্দরের মধ্যে স্থানিক দূরত্ব তিন শথেকে পাঁচ শমাইলের মতো। অথচ এতোকাল পণ্য পরিবহনে আমাদেও জাহাজগুলোকে সিঙ্গাপুর হয়ে প্রায় দুই হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসতে হতো। সময় লাগত পনের থেকে বিশ দিন। এখন তা নেমে এসেছে মাত্র তিন দিনে। বর্তমান ব্যবস্থায় উপকূলীয় নৌযোগাযোগ শুরু হবার কারণে ব্যবসায়ীদের পণ্য আদানপ্রদানে প্রায় খরচ ও সময় দুটোই দুই-তৃতীয়াংশ বেঁচে যাবে।     

বন্দরবার্তা:

রিজিওনাল হাবহয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদের এ বন্দরের কী ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে? এ লক্ষ্যে কী ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই?

সচিব:

উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভূটান উপ-আঞ্চলিক জোটের ধারণা রূপ পেতে যাচ্ছে। ফেণী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভূটানে পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। ফলত আঞ্চলিক প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোতে এখনই সাজাতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। স্থলবেষ্টিত নেপাল, ভূটান কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা- কিংবা চীনের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চীয় মায়ানমার- এই সমগ্র অঞ্চলের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, সংরক্ষণ ও পরিবহনের মাধ্যমে কমপক্ষে দশ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। বন্দরের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত ত্রিশ বছরের কৌশলগত মহাপরিকল্পনায় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বিষয়গুলো। বন্দরের অবকাঠামো আধুনিকায়ন করা হয়েছে প্রতিটি স্তরে। চ্যানেলের নাব্যতা ধরে রাখতে ড্রেজিং কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। কনটেইনার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।     

বন্দরবার্তা:

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্লু-ইকোনমি কী ধরনের সম্ভাবনা ধারণ করে আছে? এক্ষেত্রে আগামীতে কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর?

সচিব:

বর্তমান বিশ্বে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে ব্লু-ইকোনমি ধারণাটি অত্যন্ত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি ধারণা। বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি অতীব তাৎপর্য বহন করে। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মায়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর প্রায় এক লাখ আঠারো হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রএলাকার ওপর নিজেদের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সকল প্রকার প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের ওপর আমাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কেবল এরই কারণে আগামী দিনে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে আমাদের সামনে। প্রতিবছর প্রায় ৮০০ মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয় বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জেলেরা পায় মাত্র ৭০ মিলিয়ন টন। এতোকাল এই বাকি মাছ নিয়ে যেত থাইল্যান্ড, মায়ানমার আর ভারতীয় জেলেরা। প্রায় সাড়ে চার শপ্রজাতির মূল্যবান ও পুষ্টিকর মাছ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বিদেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে এর। সমুদ্র থেকে আহরিত খনিজ লবণ নানা ধরনের রসায়নশিল্পে প্রয়োজন হয়ে থাকে। নানা প্রকার জীবনরক্ষাকারী অষুধের উৎস আমাদেও সমুদ্রভা-ার। ১২৫ কিলোমিটারের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে এখানে। পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার আর প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে আকর্ষণীয়রূপে গড়ে তুলতে পারলে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামবে এখানে। আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ইউরোপের উপকূলীয় দেশগুলো সমুদ্র অর্থনীতি থেকে প্রতিবছর ৫০০ বিলিয়ন ইউরো আয় করছে। সম্ভাবনাগুলো যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে আমাদের পক্ষেও অনুরূপ সাফল্য অর্জন সম্ভব।      

বন্দরবার্তা:

সাগরলালিত নদীবিধৌত বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের মধ্যে নৌচেতনা ছড়িয়ে দিতে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের চলমান কার্যক্রম ও আগামী পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের?

সচিব: 

আগামী দিনের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে মেরিটাইম খাত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৌচেতনা গড়ে তুলতে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট আইএসও ৯০০১ : ২০০৮ স্বীকৃতি পেয়েছে দুই বছর আগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ৫০ তম ব্যাচের স্নাতক সম্পন্ন হলো এ বছর। এখান থেকে ইতোমধ্যেই উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়ে দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করছে চার হাজারের ওপর মেধাবী তরুণ। নৌখাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার আকাঙ্খায় আরও চারটি মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে। সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়টিকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

বন্দরবার্তা:

অনেক তথ্য জানা গেল। আমাদের মূল্যবান সময়টুকু দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

সচিব: 

আপনার মাধ্যমে বন্দরবার্তা এবং তার পাঠকদেরও আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

জীবনীসংক্ষেপ:

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জনাব অশোক মধাব রায় বিসিএস (প্রশাসন) ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। ১৯৫৭ সালে হবিগঞ্জে জন্ম, ১৯৭৩ সালে শায়েস্তাগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৫ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। টাঙ্গাইল জেলায় সহকারী কমিশনার হিসাবে চাকুরিজীবন শুরু করেন। ২০০৯ সালে যুগ্মসচিব এবং ২০১২ সালে সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) পদে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন সরকারি সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সফর করেছেন। তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র সন্তানের জনক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here