“বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার অন্যতম নিয়ামক সমুদ্র পরিবহন খাত”

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী ২০১৯ সালের জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের অধীনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এর এক বছর পরই কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। সমুদ্রবন্দর চালু রাখাসহ সঠিক সুদূরপ্রসারী দিকনির্দেশনায় সেই পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের নৌবাণিজ্য তথা অর্থনীতিকে সচল রাখতে যথাযথ ভূমিকা রেখেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী তার কাজের অভিজ্ঞতা এবং নৌপরিবহন খাতের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা অর্জন নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন বন্দরবার্তার সাথে।

মন্ত্রণালয় হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা আমাদের দেশে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও স্বাধীনতার পর কিছুদিন মন্ত্রণালয়টি তাঁর হাতে রেখেছিলেন। খাতের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ছিল সুদূরপ্রসারী চিন্তা, নৌপরিবহন খাত ঘিরে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-পরিকল্পনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো করে নদীমাতৃক এই বাংলাদেশকে আর কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি। কাজের মধ্য দিয়েও তিনি তাঁর প্রমাণ রেখে গেছেন। স্বাধীনতার পর কিছুদিনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে তিনি নিজের হাতে রেখেছিলেন। এই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্ম ও আদর্শে তাঁর ছোঁয়া রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন মেরিটাইম ভিশনের স্থপতি। ১৯৭৪ সালেই তিনি ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রবর্তনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ মেরিটাইম বাংলাদেশের ভিত রচনা করে গেছেন। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথে ও ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের ৮১ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার জলরাশির জলস্তম্ভ, সমুদ্রতল ও অন্তমৃত্তিকায় সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অর্জন সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। সুনীল অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্র আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সম্ভাবনার বাকি ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো কাজে লাগানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯টি জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর উল্টোপথে চলে ২০১০ সালে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় ২টিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর ছিল না। ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। পায়রা বন্দর আজ দৃশ্যমান। মোংলা বন্দরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাহাজ আসছে। এসবের ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের শিপিং নীতিটি দুই দশক পুরনো। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন একটি শিপিং নীতি প্রণয়ণের সময় এসেছে বলে মনে করেন কি?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: নদীমাতৃক ও সমুদ্র উপকূলীয় দেশ হিসেবে আমাদের একটা আধুনিক ও যুগোপযোগী শিপিং নীতি থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য ও যাত্রী পরিবহন, মেরিটাইম ট্যুরিজম এবং আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যের জন্যই তা দরকার। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রাজস্ব আহরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে দেশের শিপিং খাত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়নের অন্যতম নিয়ামক সমুদ্র পরিবহন খাত। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় শিপিং নীতি যুগোপযোগী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি টিম করে শিপিং নীতি যুগোপযোগী করা হবে, যাতে করে আমাদের ওপর নতুন যেসব দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে পালন করতে পারি।

মেরিটাইম খাতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) সদস্য হিসেবে দুই ডজনের বেশি কনভেনশনে অনুসমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব কনভেনশন পরিপালনের সাথে সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত। ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতি কী?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: মেরিটাইম খাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পরিপালনের ব্যাপারে বাংলাদেশ অত্যন্ত আন্তরিক। আইএমওর ২৫টি কনভেনশন ইতিমধ্যেই আমরা অনুসর্থন করেছি। যেমন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অব স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিংয়ের (এসটিসিডব্লিউ) কথাই ধরুন। এই কনভেনশন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো নাবিক প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা গ্রহণ এবং সনদ প্রদানের কাজটি করে থাকে। কনভেনশন অনুযায়ী এসব কাজ পরিচালিত হচ্ছে কিনা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট সময় পরপর আইএমওর কাছে তা পাঠানো হচ্ছে। আইএমও কর্তৃক প্রণীত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সনদ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কনভেনশন। ৯৭তম দেশ হিসেবে কনভেনশনটিতে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কোনো জাহাজ বিপদগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদিও আগে থেকেই আমরা কাজটি করে আসছিলাম, তবে কনভেনশনে স্বাক্ষরের ফলে এটির আন্তর্জাতিক একটা স্বীকৃতি পাওয়া গেছে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে বিদেশি জাহাজ আগমন আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আমরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য কন্ট্রোল অব হার্মফুল অ্যান্টি-ফাউলিং সিস্টেমস অন শিপস, ২০০১ (এএফএস ২০০১) এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য কন্ট্রোল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব শিপস ব্যালাস্ট ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্টস, ২০০৪ (বিডব্লিউএম ২০০৪) অনুমোদন করেছি। এসব কনভেনশনও নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিপালনে সচেষ্ট রয়েছি আমরা।

আইএমও কাউন্সিল হচ্ছে সংস্থাটির কার্যনির্বাহী অঙ্গ, যারা অ্যাসেম্বলির অধীনে সংস্থার কার্যক্রম দেখভাল করে থাকে। বাংলাদেশ এবার আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে ক্যাটেগরি-সিতে অংশ নিচ্ছে। আগামীতে অনুষ্ঠেয় সেক্রেটারি জেনারেল পদে নির্বাচনেও প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: ২০২২-২৩ মেয়াদি আইএমও কাউন্সিলের ক্যাটেগরি ‘সি’তে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। আপনারা সেটা জানেন। ৬-১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠেয় আইএমও অ্যাসেম্বলির ৩৭তম অধিবেশনে কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। সেক্রেটারি জেনারেল পদে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী আমরা খুঁজে পেয়েছি এবং এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে। সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

আমাদের শিল্প-কারখানাগুলোর সিংহভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক। তাছাড়া বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি যে হারে বাড়ছে তা সামাল দিতে কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) ধারণক্ষমতা যথেষ্ট নয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকায় আরও আইসিডি নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে যোগ দেওয়া। সেই অভীষ্টে পৌঁছানোর জন্য আমদানি-রপ্তানি হবে প্রধান নিয়ামক। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ অনুযায়ী সে নাগাদ ৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এই প্রবৃদ্ধি আসবে আমদানিতে ১০ ও রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে। শিল্প-কারখানার সিংহভাগ ঢাকা ও এর আশপাশে হওয়ায় ঢাকায় শুধু কমলাপুর আইসিডি দিয়ে এ চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরের ধীরাশ্রমে ১৬০ একর জায়গায় নতুন একটি আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এটি বাস্তবায়ন করবে এবং এর মধ্য দিয়ে বন্দরের চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডর দিয়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের পরিবর্তে রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়বে, যা ব্যয়সাশ্রয়ী যেমন হবে, একইভাবে নিরাপদও। সেই সাথে পরিবেশবান্ধবও। পণ্য পরিবহন সহজ করতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার আইসিডির সাথে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেল সংযোগও নির্মিত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ঢাকায় আইসিডির খুবই প্রয়োজন এবং বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ধীরাশ্রম ছাড়াও ঢাকায় আরও আইসিডির প্রয়োজনীয়তা যদি সমীক্ষায় উঠে আসে, তাহলে রেলওয়ের বাইরেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তবে আইসিডি পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা কমলাপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। রেলওয়ের জায়গায় গড়ে তোলা কমলাপুর আইসিডি রেলওয়ে ও চট্টগ্রাম বন্দর যৌথভাবে পরিচালনা করে আসছে।

বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন খুব বেশি সড়কপথনির্ভর। যদিও অভ্যন্তরীণ নৌপথকে কাজে লাগিয়ে সড়কের ওপর চাপ কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নাব্যসংকট একটি বড় বাধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্যতা বৃদ্ধিতে আমরা বিশেষ জোর দিচ্ছি। এর অংশ হিসেবে সরকারের এই মেয়াদেই আমরা ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং ইতিমধ্যেই প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির কিছু নৌপথ আমরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে, তৃতীয় শ্রেণির নৌপথ দ্বিতীয় শ্রেণিতে, আবার চতুর্থ শ্রেণির কিছু নৌপথকে তৃতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করতে চাই, যাতে করে নৌপথে পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন হয়।

২০১৩ সাল থেকে আমরা অভ্যন্তরীণ নৌপথে কনটেইনার পরিবহন শুরু করেছি। প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ না দেখালেও ট্যারিফ কমানোর ফলে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালসহ বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক আইসিটি নির্মাণের ফলে অভ্যন্তরীণ নৌপথে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

অভ্যন্তরীণ নৌপথে কনটেইনার পরিবহন এখন পর্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক। ছোট ছোট ভেসেলে করে আশুগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও কনটেইনার পরিবহনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: দেশের সব স্থানে অভ্যন্তরীণ নৌপথে কনটেইনার পরিবহন করা গেলে সড়কপথের ওপর যে চাপ তা অনেকটাই কমে আসবে। এজন্য প্রথমেই দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা যেতে পারে। আশুগঞ্জ শুধু নয়; পাশাপাশি রাজশাহী, ঢালার চর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রামের মতো দেশের অন্যান্য স্থানেও অভ্যন্তরীণ নৌ-টার্মিনাল স্থাপনের সুযোগ রয়েছে এবং কনটেইনার পরিবহনের উপযোগী করে পর্যায়ক্রমে তা করা হবে।

ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি চাহিদা সামাল দিতে ২০১৬-২০২০ মেয়াদি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতিশীলতা আনতে জোর দেওয়া হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ওপর। বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় চ্যানেলের নাব্যতা উন্নয়নের ওপর। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর এসব পরিকল্পনার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কালে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকা-ে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছি। বর্ধিত চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ১৫০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেনও রয়েছে। কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৩৭ হাজার থেকে বর্ধিত করে ৫০ হাজার টিইইউ করা হয়েছে। দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালে (আইসিডি) বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর ফলে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কালে নতুন দুটি বেসরকারি আইসিডি নির্মিত হয়েছে, যা নিয়ে বেসরকারি আইসিডির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি টাগ বোট, একটি হারবার টাগ বোট ও দুটি মুরিং লঞ্চও কেনা হয়েছে এই সময়ে। বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে গতি আনতে একটি সিএফএস (কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন) শেড, একটি কার পার্কিং শেড ও একটি কাস্টম অকশন শেডের নির্মাণ সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্যতা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়সীমার মধ্যে ড্রাফট ৯ দশমিক ১৪ মিটার থেকে ৯ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত করা হয়েছে।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন করতে গিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক সরকারি কর্তৃপক্ষ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এ সময়কালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ সূচারুভাবে পূরণ করেছে। কোথাও কোথাও লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি নজির সৃষ্টি করেছে। 

বে-টার্মিনাল নির্মাণ শেষে কবে নাগাদ এর কার্যক্রম শুরু করতে চান?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: বে-টার্মিনাল আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বে-টার্মিনাল হবে এবং ২০২৪ সালেই এর কার্যক্রম আমরা শুরু করতে চাই। বে-টার্মিনালে তিনটি টার্মিনাল থাকবে। এর একটি চট্টগাম বন্দর করবে, বাকি দুটি টার্মিনাল বৈদেশিক বিনিয়োগে হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে যাদের সাথে সমঝোতা হয়, তাদেরকে বাকি দুটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দেওয়া হবে। বে-টার্মিনালকে বৈরী আবহাওয়া এবং সাগরের বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ব্রেক ওয়াটার’ নির্মিত হবে। এর পরিধি হবে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় পাঁচ গুণ এবং ১২ মিটার ড্রাফটের ও ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ এখানে ভেড়ানো সম্ভব হবে। দেশে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যে প্রবৃদ্ধি, বে-টার্মিনালের মাধ্যমে তা সামাল দেওয়া যাবে।

নির্ধারিত সময়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কোভিড মহামারির কারণে মাতাবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা সেই সংশয় অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল। তবে আশার কথা,নিপ্পন কোয়ির ওই অঞ্চলে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এ অভিজ্ঞতা তাদের জন্য সহায়ক হবে এবং কাজের ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব হয়তো পড়বে না। তাছাড়া কোভিডের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজগুলো করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চালু হয়ে যাবে।

বন্দরটি হবে এ অঞ্চলের কমার্শিয়াল হাব। ১৮ মিটার ড্রাফটের এই বন্দরে ১০ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ অনেক কমে যাবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে যে পরিমাণ কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজন পড়বে, তা সামাল দিতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।  

মোংলা পায়রা বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে কী ভাবছেন?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: ১৯৫০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে মোংলা বন্দর। টার্ন-অ্যারাউন্ট টাইমের বিবেচনায় বন্দরটি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও এর সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। বিপুল সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে ও চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে জাহাজের চাপ কমাতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনা আগেই নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পশুর নদের আউটার বারে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বাড়িয়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করা হয়েছে। সেই সাথে বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন কার্যক্রমেও গতি আনা হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে বাড়ছে বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি। এছাড়া ইনার বারের ড্রেজিংও শুরু হয়েছে। এটি শেষ হলে ও পদ্মা সেতু খুলে গেলে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি চাহিদা মেটাতে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে পটুয়াখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। এ বন্দরটি নিয়েও সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই পায়রা বন্দরকে আমরা বিশ্ব মানের একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাবনাবাদ চ্যানেল দেড় বছরের মধ্যে খনন করা হবে। এর মাধ্যমে ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থের ইনার ও আউটার চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখা হবে। এসব কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে পায়রা বন্দর একটি বিশ^মানের বন্দরে পরিণত হবে। তখন পায়রা বন্দর ঘিরে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকা- বেগবান হবে।

মেরিটাইম খাতে বর্তমানে দক্ষ জনশক্তির বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। আগামীতে চাহিদা আরও বাড়বে। চাহিদা পূরণে দরকার আধুনিক, যুগোপযোগী উচ্চতর মেরিটাইম শিক্ষা। ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা কী?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: সমুদ্রগামী জাহাজে দেশের নাবিকদের চাকরির বিশাল সুযোগকে কাজে লাগাতে মেরিটাইম খাতে দক্ষ জনবল তৈরির বিকল্প নেই। মেরিটাইম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি একে আরও ছড়িয়ে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে নতুন চার মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে। গত ৬ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত মেরিন একাডেমিগুলো উদ্বোধনও করেছেন। এসব একাডেমিতে বছরে ৪০০ ক্যাডেটের পাশাপাশি মেরিনাররা বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও মেরিন একাডেমি গড়ে উঠেছে। এছাড়া উচ্চতর মেরিটাইম শিক্ষার মাধ্যমে এ খাতে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে সরকার স্থাপন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ^বিদ্যালয়।

জ্বালানি, সার, খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে সেই ভূমিকা আর ধরে রাখতে পারেনি। বিএসসিকে শক্তিশালী করতে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিএসসি প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯টি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০১০ সালে এসে জাহাজ ছিল মাত্র দুটি। অথচ জাহাজ হওয়ার কথা ছিল কয়েকশ। বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী সরকারগুলো জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ না নেওয়ায় উল্টোপথে চলেছে বিএসসি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বহরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। চীন সরকারের অর্থায়নে ছয়টি জাহাজ ইতিমধ্যেই বিএসসির বহরে যুক্ত হয়েছে এবং এগুলো সমুদ্রপথে চলাচল করছে। আরও ৬টি জাহাজ সংগ্রহের কাজ চলমান আছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম নৌপরিবহন অধিদপ্তর। সংস্থাটি যেসব সেবা দিয়ে থাকে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেগুলো ডিজিটাল হওয়া জরুরি। ব্যাপারে আপনাদের উদ্যোগ কী?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সেবাসমূহের অধিকাংশই ইতিমধ্যেই ডিজিটাইজ করা হয়েছে। সমুদ্রগামী ও অভ্যন্তরীণ জাহাজের নাবিকদের সার্টিফিকেট অব কম্পিট্যান্সি (সিওসি) এবং সার্টিফিকেট অব প্রোফিসিয়েন্সির (সিওপি) মতো সনদের আবেদন এখন অনলাইনেই গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সাথে সনদ প্রণয়ন ও সনদ প্রস্তুতের তথ্য মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে আবেদনকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নাবিকদের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন, সেফ ম্যানিং সনদ, শিপ সার্ভেয়ার সনদ ও অন্যান্য বিষয়ে এনওসির জন্য অনলাইনে আবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাবিকদের সাইন অন, সাইন অফ কার্যক্রমও অনলাইনে সম্পাদনের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সিডিসি জালিয়াতি বন্ধের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জালিয়াত রোধে বিশেষ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন আল্ট্রা ভায়োলেট, মাইক্রো সিকিউরিটি লাইন, অ্যান্টি-ফটোকপি ও কুইক রেসপন্স কোডযুক্ত কাগজে হাতে লেখার পরিবর্তে মেশিন প্রিন্টেড সিডিসি প্রবর্তন করা হয়েছে।

সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সামনে সুনীল অর্থনীতির অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে সম্পদ কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির ফলে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ তার মূল ভূখ-ের প্রায় ৮১ শতাংশ পরিমাণ রাষ্ট্রীয় জলসীমা অর্জন করেছে। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। এই সুনীল সমুদ্রসম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এবং সে লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ব্লু-ইকোনমি সেল এ নিয়ে কাজ করছে। সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটও। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রয়াসে সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ ব্যবহারে আমরা সমর্থ হব বলে আশা করছি। এ সম্পদের টেকসই ব্যবহার ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পথে এগিয়ে দেবে।

গত বছর থেকেই অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে সারা বিশ্বকে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিরুদ্ধ এই সময়ের মধ্যেও স্বাভাবিক কর্মকা-কে অব্যাহত রাখতে হয়েছে সমুদ্রবন্দরগুলো বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরকে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখা সম্ভব হলো কীভাবে?

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ দেখা দেওয়ার আগেই অর্থাৎ গত বছরের শুরুতেই পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে করোনাভাইরাস যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য গত বছরের জানুয়ারিতেই বন্দরে করোনা সতর্কতা জারি করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নাবিকের পরিচর্যায় বন্দর হাসপাতালে বিশেষ দলও প্রস্তুত রাখা হয়। পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার ও কর্মক্ষেত্র জীবাণুমুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে বন্দরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হই।

তবে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস কমে যায়। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য জমে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৬ এপ্রির বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, ব্যবহারকারী, পুলিশ, বেসরকারি আইসিডিসহ অংশীজনদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কনটেইনারজট সামলাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় টাস্কফোর্সকে। বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার খালাস নিলে ভাড়ায় ছাড়ের ঘোষণাও দেওয়া হয়। এতে করে মে মাস থেকে পণ্য খালাসের গতি বেড়ে যায়। এছাড়া বন্দর সচল রাখতে কর্মীরাও সাধারণ ছুটির মধ্যে পালা করে কাজ চালিয়ে গেছেন। সময়োপযোগী এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিকূলতার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকা- অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখা সম্ভব হয়। মহামারির মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here