বিপুলা জলরাশির জোয়ারভাটা থেকে জ্বালানিশক্তি উৎপাদনের জাদু আয়ত্ত্ব করতে পারলে আমরা প্রতিদিন প্রাকৃতিক আবর্তনের সূত্র ধরেই অন্তত দুই দফা জ্বালানি আহরণের সুযোগ পাব। এতে আমাদের পুনর্বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। মহাকালের  বিধানে স্বয়ংক্রিয় চালু থাকবে এই উৎপাদন প্রক্রিয়া। এবং সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদী, এটাই হয়ে উঠতে পারে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি আহরণের অন্যতম সম্ভাবনাময় মাধ্যম।

প্রতিদিন দুইবার, নদী কিংবা সাগরের, জোয়ার-ভাটার প্রবল শক্তির টানাপড়েন কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু আহরণ করতে পারি। তার জন্য প্রথমে একটা বিশেষায়িত বাঁধ বসাতে হবে নদী অথবা সাগরের মুখে। এই পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় পানি এসে ঢুকবে বাঁধের এপারের রিজারভয়েরে। ভাটার সময় তা বেরিয়ে যাবে পুনরায়- ওই একই পথে। চাষাবাদ এবং আরও নানাবিধ কাজে জোয়ারভাটা চক্রের একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্লুইচ গেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়ে থাকে। আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে, একটা করে শক্তি উৎপাদনক্ষম টারবাইন বসাতে হবে এই স্লুইচ গেটগুলোয়- যাতে তা দিয়ে আমরা একত্রে বিপুল জলরাশির অবিরাম আসা-যাওয়ায় কারণে উৎপন্ন হওয়া শক্তি থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু আহরণ করে নিতে পারি।   

৭১০ কিলোমিটার আমাদের উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য। পৃথিবীর খুব অল্প দেশের রয়েছে সমুদ্রের সাথে এই বিপুল নৈকট্য। মহাস্রোত কাজে লাগিয়ে অমিত জ্বালানিশক্তি উৎপাদনের সৌভাগ্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যদি, আরইটি বা রিনিউয়েবল এনার্জি টেকনোলজি, বাংলায় বললে, নবায়নযোগ্য শক্তি আহরণ প্রযুক্তি একটি সম্ভাব্য বাস্তবতা হয়ে উঠতে পারে তাহলে সমুদ্রখাতে যেসব বিষয় আমাদের প্রধান মনোযোগ কেড়ে নেবে তা হচ্ছে:

  •      জোয়ার
  •      তরঙ্গ
  •      সমুদ্রের তাপশক্তির রূপান্তর

জোয়ার-ভাটার কাব্য

চাঁদের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক বহুদিনের পুরনো। যে গল্প প্রায় ভুলেই বসে আছি আমরা। কিন্তু প্রতিদিন দুই দফা সেকথা মনে করিয়ে দিতেই বুঝি তিনভাগের দখল নিয়ে বসে থাকা মহাসমুদ্রগুলোর বুকে লাগে অভিকর্ষের টান, পালে বাতাস লেগে ফুলে ওঠে তার প্রবাহ তখন যেন তারা ছুটে যেতে চায় চাঁদের পানে। আমরা একে বলি জোয়ার। কিছু সময় পর আবার যখন নেমে যায় এই জল তখন বলি ভাটা। চাঁদসূর্যপৃথিবীর এই সম্পর্কজনিত রসায়নে সাগরের বুকে প্রতিদিন দুইদফা উৎপন্ন জোয়ার ভাটার শক্তির গলায় শেকল পরিয়ে তার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করতে পারি আমরা।

সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণিরত পৃথিবীর বিরতিহীন আবর্তনও ঢেউ-তরঙ্গ-জোয়ার সৃষ্টির একটি কারণ।

জোয়ারে নিহিত শক্তি থেকে উৎপাদিত শক্তি হবে দূষণমুক্ত নবায়নক্ষম। এর জন্য আমাদের স্লুইচ গেট বা নিষ্কাশন ফটকগুলোয় স্বল্প ব্যয়ে টাইডাল হুইলবা জোয়ারচক্র বানাতে হবে যেখান থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় ধেয়ে আসা জোয়ারের ঢেউয়ের উচ্চতা সাধারণত ২ থেকে ৮ মিটারের মধ্যে সীমিত থাকে। গড়ে ৭ মিটারের জোয়ারেই বাণিজ্যিক লাভজনক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বাংলাদেশের সন্দ্বীপে এ ধরনের একটি প্রকল্প নিয়ে ভাবছে অস্ট্রেলিয়ার মারডক ইউনিভার্সিটির আইএসটিপি। টাইডাল ইলেকট্রিক ইনক নামে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আছে একটা যারা কাজ করছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে জোয়ারভাটার শক্তি রূপান্তরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মিশন নিয়ে। বঙ্গোপসাগরে আমাদের দুই প্রতিবেশি ভারত আর মায়ানমারেও তারা বেশ সক্রিয়। ভারতের গুজরাটে ১,০০০ মেগাওয়াটের টাইডাল পাওয়ার প্ল্যান্টগড়ে উঠছে দ্রুতগতিতে।

এছাড়াও সমুদ্রে সতত বহমান তরঙ্গ হতে পারে  নবায়নক্ষম শক্তির উৎস। বায়ুপ্রবাহের দরুণ সাগরপৃষ্ঠে দোলা লাগে অবিরাম। তৈরি হয় ঢেউ। সঞ্চিত শক্তি নিয়ে এসব ঢেউ বয়ে যায় হাজার হাজার মাইল। যাত্রাপথে শক্তিক্ষয় ঘটেও অতি কম। সাধারণত বিষুব অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে ঢেউয়ের মধ্যে সঞ্চিত থাকে বেশি শক্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here