পৃথিবীর অন্যান্য সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরকে আলাদা করেছে এর তলদেশের পুরু পলির স্তর এবং মিঠা পানির প্রাচুর্য। একই কারণে এখানে বিশ্বের বৃহত্তম ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানী ভান্ডার থাকার সম্ভাবনা দেখেন বিশেষজ্ঞরা। আর জানেন তো ইলিশের বৈশ্বিক চাহিদার ৫০-৬০ শতাংশ মেটায় এ সাগরের বাংলাদেশ অংশ।

প্রথম প্রাণের বিকাশ, মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো!

পানির ভুবন প্রাণবৈচিত্র্যময়। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কিংবা জুপ্ল্যাঙ্কটনের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এমন অনেক প্রাণ রয়েছে এখানে যেগুলো খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। আবার সেখানেই রয়েছে বিশালাকৃতির সেটাসিয়ান প্রজাতির সদস্য, যেমন, তিমি। কখনও ৩০ মিটারের অধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে যাদের দৈর্ঘ্য।

সামুদ্রিক প্রতিবেশ আমাদের স্থলজ পৃথিবীর বিবিধ কাজে লাগে। এ কথা বলা যায় সন্দেহাতীতভাবে যে, তার অবদান বিনা বস্তুত এমন অনায়াস হতো না আমাদের আজকের জীবন। সমুদ্র আমাদের খাদ্য আর খনিজের জোগানদার। পৃথিবীর নৈমিত্তিক জলবায়ু ব্যবস্থাপনাতেও সমুদ্রের অবদান অপরিমেয়। আমাদের উদগীরিত কার্বনের বড় অংশটাই শেষ পর্যন্ত গিয়ে বিলীন হয় এই পানির পৃথিবীতে।

একুশ শতকের প্রেক্ষিতে বিশ^ব্যাপী সমুদ্র অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনা আবিষ্কার ও তার যথাযথ বিকাশে প্রথমেই আবশ্যক সমুদ্রের সঙ্গে আমাদের অর্থপূর্ণ পরিচিতি। তাকে যথাযথ জানার মধ্য দিয়ে সম্ভব নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্র আবিষ্কার ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন। এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কাজটি শুরু হতে পারে বাড়ির আঙ্গিনাবর্তী বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের চিরায়ত  অধিবাসীদের সঙ্গে সম্যক পরিচিতি ঘটার মধ্য দিয়েই।

ভূস্তরবর্তী অবস্থান ও তজ্জনিত প্রাণপুঞ্জ

ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শাখা বা উপসাগরটির নাম বঙ্গোপসাগর। আন্দামান সাগর এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে হিসেবের বাইরে রেখে মানচিত্রে এর বিস্তার উত্তরে ৬ ডিগ্রি অক্ষাংশ থেকে পূর্বে ৯৫ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত। ভারত মহাসাগরের বর্ধিত শাখা হিসেবে তার অনুরূপ মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ এবং ঘূর্ণিঝড়সহ বহুবিধ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে এই উপসাগর। পাশাপাশি, এটি আন্দামান সাগর, মালাক্কা প্রণালী ও পক প্রণালীর সঙ্গে প্রত্যক্ষরূপে সংযুক্ত। ১১শ শতাব্দীতে এর নাম ছিল চোলা লেক।

পৃথিবীর অন্যান্য সাগর, যেমন, ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, কিংবা চীন সাগরের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে কতিপয় অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আমাদের বঙ্গোপসাগর। গড়পড়তায় এটি উল্লিখিত সাগরগুলোর তুলনায় এক থেকে দুই কিলোমিটার অগভীর। ফলত এখানকার সমুদ্র তলদেশে যে কোনো ধরনের খনন কিংবা স্থাপনা প্রকল্প কিংবা উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া অন্যান্য সাগরের চেয়ে তুলনামূলক সহজ এবং সাশ্রয়ী। উপরন্তু এখানে সন্নিবেশ ঘটেছে গোটা বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বেশি পুরু স্তরের (সর্বোচ্চ পুরুত্ব ২১-২২ কিমি এবং গড় পুরুত্ব ১৬.৫ কিমি) পলল জমিনের। ফলত বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন এখানেই গড়ে ওঠা সম্ভব বিশ্বের বৃহত্তম ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার।

মিষ্টি পানির অমিত প্রাচুর্য্য বঙ্গোপসাগরের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য। এর বুকে বছরে ১.৬ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার মিষ্টি পানির প্রবাহ উগরে দিচ্ছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনাসহ বিশ্বের বৃহত্তম কয়েকটি নদী। ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য সাগরে গড় লবণাক্ততার পরিমাণ যেখানে ৩৫ পিপিটি, সেখানে আমাদের প্রাচীন প্রতিবেশি এ উপসাগরে তার মাত্রা উপকূলীয় এলাকায় শূন্যথেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ ৩০ পিপিটি মাত্র।

সাগরের অনন্য এ বৈশিষ্ট্যের প্রভাব স্বভাবতই প্রতিফলিত হয়েছে এখানকার জীববৈচিত্র্যের মাঝে। যেমন, সাগরের নিচের দিককার লবণাক্ত এবং ভারি পানির তুলনায় ওপরের স্তরের পানি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার এবং হালকা, যার ফলে প্রাথমিক প্রাণকণা গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ নিচের পানি ওপরে উঠে আসতে পারে না সহজে।

পাশাপাশি, হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীখাতসমূহ প্রায় খাড়া ঢাল বেয়ে আসার ফলে এসব নদীস্রোতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পলিভাণ্ডার। এর পরিমাণ বছরে প্রায় ৬৬৫ মিলিয়ন টন। ফলত সারাবছর তুলনামূলক ঘোলা থাকছে এখানকার পানি যা বস্তুত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিশেষ প্রজাতির মাছ (যেমন, ইলিশ) বা প্রাণকোষের জন্য। পানিস্তরের এ বৈশিষ্ট্যের দরুণ সূর্যের আলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির গভীরে যাবার পথে, যে কারণে পানির তলদেশের উদ্ভিজভুবনে সালোক- সংশ্লেষণ ঘটতে পারছে কম এবং বাধাগ্রস্থ হচ্ছে জলজ উদ্ভিদের বিকাশ। 

পৃথিবীর অন্যান্য সাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরের ¯্রােতধারার রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মের মৌসুমে এর গতিমুখ থাকে ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে এবং শীতকালে তা আবর্তিত ঘড়ির কাঁটার বিপরীত মুখে। বঙ্গোপসাগরের অগভীর এলাকায় (১০০-২০০ মিটার) প্রায় পুরোটাই অক্সিজেন সমৃদ্ধ যা এই পরিবেশ উপযোগী জীববৈচিত্র্যের অনুকূল। পক্ষান্তরে এর চেয়ে গভীরে গেলেই তৈরি হচ্ছে অক্সিজেনের স্বল্পতা যে কারণে অক্সিজেনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল বিশেষ জাতীয় প্রাণীর পক্ষে সেখানে বসবাস কিংবা টিকে থাকা অসম্ভব। তুলনামূলক বিবেচনায়, বিশেষত গ্রীষ্ম মৌসুমে আরব সাগরের চেয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রাণীজ উৎপাদনশীলতা কম, যে কথার অর্থ, বঙ্গোপসাগরে মাছ কিংবা অন্যান্য জীবকুল পরিমাণগতভাবে কম হলেও বৈচিত্র্যবিচারে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ।                       

বৈচিত্রময় প্রাণীকুল

বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ৬৪টি জীববৈচিত্র্য এলাকার অন্যতম বঙ্গোপসাগর। এখানে পাওয়া যায় কেরিলিয়া জারদোনি নামের এক বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ। আরও আছে ব্রাইডস হোয়েল নামে এক প্রকার তিমি ওজনের বিচারে যেটির অবস্থান সারা বিশ্বের মধ্যে দশম। পাশাপাশি রয়েছে মারলিন (হেমিংওয়ের বিখ্যাত ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি গল্পের সেই বুড়ো জেলে শিকার করেছিল যেই মাছ), ব্যারাকুডা এবং স্কিপজ্যাক টিউনা। এছাড়া আছে হলুদ ডানার টিউনা, কুঁজঅলা ডলফিন এবং ব্রাইডহোয়েল জাতের তিমি।

আমাদের উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে ৪৫৩ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী জীব, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ বা রেপটাইল এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী যার একটা বিরাট অংশই রয়েছে বিপন্ন হবার ঝুঁকির মাঝে। উপকূলীয় অঞ্চলে গবেষণা চালিয়ে মোহনায় পাওয়া গেছে ৩০১ প্রজাতির মোলাস্ক (অমেরুদণ্ডী শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস জাতীয়), বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ৫০ প্রজাতির চিংড়িজাতীয় প্রাণী এবং ৭৬ প্রজাতির মৎস। বিপন্ন হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাঁচ প্রকার স্তন্যপায়ী, ২৫ ধরনের পাখি, ১৪ প্রকার সরীসৃপ এবং দুই প্রজাতির ব্যাঙ। বিপন্নের তালিকায় আরো আছে অলিভ, রিডলি, কচ্ছপ।

আমাদের সমুদ্রভুবনে আরও আছে ৪৪২ প্রজাতির মাছ এবং ৩৬ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি জাতীয় প্রাণী। সনাক্ত করা হয়েছে ১৫১ গোত্রের ৩৩৬ প্রজাতির ঝিনুক-শঙ্খ জাতীয় জীব। আমাদের সমুদ্রসীমায় বসবাস করছে ৩ প্রকার লবস্টার এবং ৭ প্রজাতির কূর্ম ও কচ্ছপ, ১৬৮ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ৩ প্রকার স্পঞ্জ, ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ১০ প্রজাতির ব্যাঙ, ৩ প্রকার কুমির, ২৪ প্রজাতির সাপ, ৩ প্রজাতির ভোঁদড়, এক প্রকার সজারু, ৯ প্রজাতির ডলফিন এবং ৩ প্রজাতির তিমি। এছাড়া অভিবাসী শ্রেণীভুক্ত প্রাণীভুবনে বিপদাপন্ন হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৪ প্রজাতির মাছ, ৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির পাখি এবং ৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী জীব।

কেবল সেন্ট মার্টিন দ্বীপেই সনাক্ত করা হয়েছে ২৩৪ প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে প্রবালজাতীয় রয়েছে ৯৮টি প্রজাতি। এখানে ঝিনুক-শঙ্খ জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা ১৮৭। কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী রয়েছে সাত প্রকার। প্রবাল জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা ৬৬ যার মধ্যে ১৯ প্রজাতি হচ্ছে প্রবালের জীবাশ্ম। সামুদ্রিক শৈবাল রয়েছে ১৪ প্রকার।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

বঙ্গোপসাগরে উপকূলীয় অঞ্চলের একটা বড় অংশ জুড়ে গড়ে উঠেছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিশে^র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এসব বনাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন। বরিশাল, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের বনাঞ্চল এই হিসেবের মধ্যে নিলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের পরিমাণটি দাঁড়ায় দেশের মোট বনাঞ্চলের প্রায় অর্ধেক। সুন্দরবন তার আয়তনবিচারে আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৭৪ শতাংশ। এসব বনাঞ্চলে যেসব জীববৈচিত্র্য বিরাজমান তার মধ্যে রয়েছে স্তন্যপায়ী প্রাণীকুল, পাখি, উভচর, সরীসৃপ এবং চিংড়িজাতীয় প্রাণী। বিগত চার দশক কিংবা তারও বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষ বড় ধরনের অবদান রাখছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় লাখ মানুষ সরাসরি জড়িত রয়েছে এই শিল্পে।  

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের আলোচনায় ফেরা যাক। দেশের স্থলভাগের আয়তন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪ বর্গকিলোমিটার। পক্ষান্তরে আমাদের সমুদ্র এলাকার আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এর উত্তর, পশ্চিম আর উত্তর-পশ্চিমে ভারত, পূর্বে আর দক্ষিণপূর্বে মায়ানমার আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের মোট আয়তন ২১ লাখ ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং এর গড় গভীরতা ২৬০০ মিটার, বা কমবেশি আড়াই কিলোমিটার। উপসাগরের সঙ্গে আমাদের উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরের আমাদের সমুদ্রঅঞ্চলে গড়ে ৫০ মিটার গভীরতার কনটিনেন্টাল শেলফের আয়তন ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি বর্তমানে আমাদের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন, বা একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

সম্ভাবনার শীর্ষে ইলিশ আর চিংড়ি

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের হাতে ধরা পড়া মৎসসম্পদের পরিমাণ ২০১২-১৩ সালে ছিল ৫৮৮,৯৮৮ টন। এর বছর দশেক আগে পরিমাণটি ছিল ৩৭৯,৪৯৭ টন। এ মৎসসম্পদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত হিমায়িত আকারে রফতানি হয়ে যায় বিদেশে এবং বিশ্বের বড় বড় শহরে। অতি অল্পই গিয়ে বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে। এরও আবার একটা অংশ লবণে জারিত করে শুকানো হয় খাদ্যসামগ্রী হিসেবে সংরক্ষণের জন্য। দেশের মধ্যে মৎস এবং হাস-মুরগির খামার বৃদ্ধির দরুণ শুটকির ব্যবহারও বেড়ে চলেছে দিনে দিনে।

বঙ্গোপসাগরে আহরিত এসব মাছের মধ্যে সবচেয়ে অর্থকরী এবং জনপ্রিয় মাছের নাম ইলিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম টেনুয়ালোসা ইলিশা। প্রতিবছর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং উপার্জন ঘটছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের। প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে এ থেকে আয়ের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অত্যন্ত গর্বের বিষয়, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যতো ইলিশ আহরণ করা হয় তার ৫০-৬০ শতাংশই আসছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে। মায়ানমারে ধরা পড়ে ২০-২৫ শতাংশ, ভারতে ১৫-২০ শতাংশ এবং বাকি ৫-১০ শতাংশ আসে বিশ্বের বাদবাকি দেশসমূহ থেকে। বিশ্বে ৩১% জেলে এ অঞ্চলে বাস করে। বছরে গড়ে ৬০ লক্ষ টন মাছ ধরা হয় এ এলাকা থেকে।

এগুলোর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে রয়েছে বাগদা চিংড়ি আর গলদা চিংড়ির বিশাল সম্ভাবনা। ২০১২-১৩ সালে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা হয় ৪৬ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি (বৈজ্ঞানিক নাম পেনাউস মনোডন) যার শেষ গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর জাপানের বাজার। গত ১০-১৫ বছর যাবৎ পূর্ব এশীয় দেশগুলোয় রফতানি করা হচ্ছে বিশালকৃতির মেটে কাঁকড়া (স্কিলা সেরাটা) এবং মোহনা এলাকার ঈল মাছ (মরেনেসক্স বেজিও)। রফতানিকৃত এসব জ্যান্ত কাঁকড়ার ২০ শতাংশের কিছু কম পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে বস্তুত সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আর কক্সবাজারের কাঁকড়াচাষীদের কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ প্রকল্প থেকে।

পরিশেষে

বর্তমান সরকারের জোর প্রচেষ্টায় সমূদ্রসীমায় নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। আর্ন্তজাতিক আদালতের একাধিক রায় ইতিমধ্যে আমাদের পক্ষে এসেছে। যারই ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল সম্পদরাজি সংগ্রহের অপার সম্ভাবনা। কালবিলম্ব না করে এখনি এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নিতে হবে, করতে হবে অর্থ ও মেধার বিনিয়োগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here