দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে শিগগিরই পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) নিজস্ব তহবিল থেকে এর জন্য অর্থায়ন করা হবে। মোট ১১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫১ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ‘কী-গ্যান্ট্রি’ ক্রেন ছাড়াও রয়েছে রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রিচ স্ট্র্যাকার, কনটেইনার মুভার, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন, যার সবগুলোই কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যন্ত্রপাতি।

দীর্ঘ এক যুগ পর চট্টগ্রাম বন্দরে এসব সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধান সমুদ্র বন্দরের গত ১৫ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বার্ষিক ১২ থেকে ১৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। এমন অবস্থায় যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি কেনা সম্পন্ন হলে যন্ত্রপাতির ঘাটতি নিরসনসহ বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে বলে আশাবাদ পোর্ট-শিপিং-কাস্টমস খাতের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা তথা বন্দর ব্যবহারকারীদের। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য মো. জাফর আলম জানান, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরে বার্ষিক অন্ততপক্ষে ২৯ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে যান্ত্রিক সরঞ্জামের ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংযোজিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা, সক্ষমতা ও সার্বিক উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

জানা গেছে, বর্তমানে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। কারিগরি হিসাবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি বিরাজ করছে। গত বছরের অক্টোবরে এক কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি জেটি-বার্থ সমন্বিত বহুল আলোচিত ও সর্ববৃহৎ কনটেইনার স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পুরোদমে চালু হওয়ায় বন্দরে ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের আরও বেশি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পুরনো জেটি-বার্থ, ইয়ার্ড, শেডগুলোতে কনটেইনারজাত এবং খোলা সাধারণ (ব্রেক বাল্ক) কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের প্রাপ্যতা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম রয়েছে। প্রতিবেশী বন্দরগুলোর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগী করে তুলতে এমনকি সমান্তরালে দাঁড় করাতে হলে বন্দরের যান্ত্রিক সরঞ্জামের সংকট ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।

আগামী ১০ বছরে দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধির যে ধারা বজায় রয়েছে তা অনায়াসে সামাল দেয়ার জন্য কাছাকাছি সক্ষমতা রয়েছে প্রধান এ সমুদ্রবন্দরের। তবে এক্ষেত্রে বড় সমস্যা ভারী যন্ত্রপাতির। চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, সিসিটি, জেসিবি মিলিয়ে রয়েছে ১৯টি জেটি-বার্থ। এর মধ্যে ১১টিতে আছে শ্যোর হ্যান্ডলিং ক্রেন। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির (৫০ টনী) শিপ টু শ্যোর কী-গ্যানট্রি ক্রেন (এসএসজি) রয়েছে চারটি। ৪০ টনী রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন (আরটিজি) রয়েছে ১১টি। রেললাইনের সংযোগ আছে পাঁচটি জেটির সঙ্গে। বন্দরে ১০টি ট্রানজিট শেড রয়েছে। ভারী, মাঝারি ও ছোট আকৃতি ও অনুরূপ শক্তিসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক উপকরণের ঘাটতির কারণে কনটেইনারসহ দৈনন্দিন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সময়ক্ষেপণ, আর্থিক অপচয় ও বন্দর-ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস, ওঠানামা, স্থানান্তর, মজুদের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি পুরণে তিনধাপে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে, ৬টি কী গ্যানট্রি ক্রেন, ১১টি রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন, ১টি রেল মাউন্ডেন্টড গ্যানট্রি ক্রেন, সার্বক্ষণিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অপরিহার্য ৪টি (ফোর হাইটের ৪০ টনী) স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, ৪টি সাত টন থেকে ৪৫ টনী রীচ স্টেকার, ৫টি কনটেইনার মুভার ও ১টি মোবাইল হারবার ক্রেন কেনার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে, ৪টি কী গ্যানট্রি ক্রেন, ৬টি রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন, ৬টি (ফোর হাইটের ৪০ টনী) স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার কেনার কথা রয়েছে। তৃতীয় ধাপে ৩টি রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন কেনার মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপাত ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here