বিশ্ববাণিজ্যের ধীরগতিও প্রভাব ফেলেনি চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রযাত্রায়। ১১ ধাপ এগিয়ে কর্মমুখর চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বসেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় ৭৬তম। এ কথা জানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো চলমান প্রকাশিত জার্নাল ‘লয়েড’স লিস্ট’। ২০১৫ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা হিসাব করে তারা এই অবস্থান নির্ধারণ করেছে। লয়েড’স লিস্ট বলছে, বিশ্ববাণিজ্যে ধীরগতি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

১৭৩৪ (মতান্তরে ১৬৯২) সালে লন্ডনের লয়েড’স কফি হাউজ থেকে সাপ্তাহিক হিসেবে আত্বপ্রকাশ ক’রে, মাঝে দ্বি-সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপান্তরিত হয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬০,৮৫০ তম সংখ্যা প্রকাশের পর ছাপানো সংস্করণ বন্ধ করে লয়েডস লিস্ট। এরপর থেকে তারা ডিজিটাল সংস্করণে প্রতিমুহুর্তে মেরিন ও শিপিং সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করে যাচ্ছে।  প্রায় একই সময়ে ১৭৬০ সালে লয়েড’স রেজিস্টার নামে যাত্রা শুরু করা লয়েড’স এর আরও একটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর গবেষণা ও শিক্ষাখাতে বিশ্বব্যাপি ৭৪টি দেশে সক্রিয় আছে।

জানা যায়, বিশ্ববাণিজ্যে ধীরগতির কারণে ২০১৫ সালে অনেক বন্দরই কনটেইনার পরিবহনে পিছিয়ে ছিল। সেরার তালিকায় স্থান পাওয়া ১০০টি বন্দরের মধ্যে ৩৬টি বন্দরেই কনটেইনার পরিবহন কমেছে যার মধ্যে ব্যতিক্রম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়তে থাকায় বন্দর এই স্থান অর্জন করে নিয়েছে। যেভাবে কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে তাতে বন্দরের অবকাঠামো দ্রুত সম্প্রসারণে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এ জন্য ব্যাপক আকারে সম্প্রসারণের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে।

হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে এই বন্দর দিয়ে কনটেইনার ওঠা-নামা হয় ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭ টিইইউস। আগের বছরের চেয়ে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টিইইউস কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। বছর শেষে তা ২৩-২৪ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও মেগা প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আনার কারণে কনটেইনার পরিবহনের হার দ্রুত বাড়ছে।

আনন্দের কথা এই, কনটেইনার পরিবহনের এই হার বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্দেশ করছে। কারণ, রফতানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই পরিবহন হয় কনটেইনারে করে। আবার কনটেইনারে আমদানি পণ্যের সিংহভাগই শিল্পের কাঁচামাল। পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার কারণে বন্দরে কনটেইনার পরিবহনে অগ্রগতি হচ্ছে। কনটেইনার আমদানি-রপ্তানির বড় অংশই পোশাকশিল্পের কাঁচামাল এবং তৈরি পোশাক। এ ছাড়া ওষুধশিল্প, ইস্পাত কারখানাসহ অসংখ্য কারখানার কাঁচামাল আনা-নেওয়া হয় এই কনটেইনারে করেই।

গত ৭ অক্টোবর অগ্রগতির সনদ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, এমপি’র উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালিদ ইকবালের হাতে তুলে দেন লয়েড’স লিস্টের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল খালিদ ইকবাল বলেন, ‘সাত বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানামা দ্বিগুণ হয়ে ২০ লাখ এককে উন্নীত হয়েছে। এ বছর শেষে এই ওঠানামা ২২ লাখ একক ছাড়িয়ে যাবে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

ওয়ার্ল্ড পোর্ট সোর্স ওয়েব পোর্টাল অনুযায়ী, বিশ্বে আনুমানিক ৪ হাজার সক্রিয় বন্দর রয়েছে। তবে নিয়মিত কনটেইনার ওঠানো নামানো হয় এমন বন্দর আছে ৫০০টি।

সেরা তালিকার এক নম্বরে চীনের সাংহাই। ২০১৫ সালে এই বন্দর দিয়ে পরিবহন হয় ৩ কোটি ৬৫ লাখ একক কনটেইনার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর। সেরা ১০টি বন্দরের মধ্যে চীনের রয়েছে সাতটি বন্দর।

আরও আনন্দের যে, সেরা ১০০ বন্দরের তালিকার পাশাপাশি লয়েড’স লিস্ট প্রকাশিত চীন ব্যতীত অন্যান্য এশিয়ান বন্দর সমূহের মধ্যে দ্রুতবর্ধনশীল বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। লয়েড’স লিস্ট এর সেই তালিকার একাংশ নিচে দেয়া হল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here