প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই নৌপরিবহন-নির্ভর হলেও সকল দেশে বন্দর সুবিধা যথাযথ নয়-কোনো দেশ হয়তো স্থলবেষ্টিত আবার কোনো দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না, অন্যদিকে কখনো আবার অবস্থানগত কারণে কিংবা সময় এবং খরচ সাশ্রয়ের জন্যও নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এসব ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখতে অন্য দেশের বন্দর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করা অর্থাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট আবশ্যিক হয়ে পড়ে। গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিও ট্রান্সশিপমেন্ট-নির্ভর। বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং ও তানজং পেলেপাসকে ব্যবহার করে থাকে। আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যবাহী জাহাজ প্রথমে এসব বন্দরে পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে ফিডার ভেসেলে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। একইভাবে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন পড়ে রপ্তানির ক্ষেত্রেও।

তবে অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশও প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তিতেই বাংলাদেশের মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতকে তার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা আছে। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আলোকে অন্য দুই প্রতিবেশী দেশকেও ট্রানজিট দিতে পারে বাংলাদেশ। ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের আদ্যোপান্ত রয়েছে এবারের প্রধান রচনায়।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নৌপরিবহন শিল্পের ওপর। এতে জাহাজ চলাচল যে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে হয়েছে, তেমন নয়। তবে সমস্যায় পড়তে হয়েছে বন্দরগুলোর জাহাজ ভিড়তে দেওয়ায় অস্বীকৃতি ও কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত বিধানের কারণে। ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষেও জাহাজিরা জাহাজ ছাড়তে পারেননি। এর মধ্যেই জাহাজে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বেড়েছে। ক্রুজ জাহাজগুলোয় সংক্রমণ তো ছিল রীতিমতো উদ্বেগজনক! অস্ট্রেলিয়ায় রুবি প্রিন্সেস ও জাপানে ডায়মন্ড প্রিন্সেসের কয়েকশ যাত্রী ও ক্রু কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন। এ থেকে বুঝতে বাকি থাকে না যে, মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কতটা ঘাটতি ছিল এই শিল্পের। বিভিন্ন দেশ ক্রুজ জাহাজকে তাদের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ায় সংক্রমণের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। মহামারির মধ্যেও জাহাজ চলাচল যাতে সচল থাকে, সেজন্য অনেক বেশি নমনীয় হতে হয়েছে জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সবচেয়ে লক্ষণীয় যে বিষয়, তা হলো তাদেরকে শক্তিশালী ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির নেতৃত্বের ভূমিকায় নামতে হয়েছে। করোনা মহামারি নৌপরিবহন শিল্পের জন্য শুধু চ্যালেঞ্জই ছিল না, এমন অভূতপূর্ব অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নতুন শিক্ষাও দিয়েছে। বিস্তারিত রয়েছে বিশেষ রচনায়।

আইএমও ২০২০ অনুযায়ী স্বল্পমাত্রার সালফারযুক্ত জ্বালানি তেলের (ভিএলএসএফও) পথে অভিগমনের পথটা নিষ্কণ্টক নয় মোটেও। উপাদানগত দিক দিয়ে কম ঘনত্বের ভিএলএসএফওগুলোর মধ্যে লক্ষণীয় মাত্রায় ভিন্নতা রয়েছে। আইএসও ৮২১৭ মানদ-ের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে এসব জ্বালানিতে। ভিএলএসএফও সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে, তা হলো উচ্চ মাত্রায় টোটাল সেডিমেন্ট পোটেনশিয়াল বা টিএসপি (জ্বালানি তেলের বিশুদ্ধতা ও স্থায়িত্বের পরিমাপ) ও সামান্য হলেও বেশি মাত্রায় সালফারের উপস্থিতি। একই ফলাফল পাওয়া গেছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিমকো), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং (আইসিএস), ইন্টারকার্গো ও ইন্টারট্যাংকোর যৌথ সমীক্ষায়ও। অর্থাৎ বলাই যাচ্ছে, আইএমও ২০২০ অর্জনে ভিএলএসএফও ব্যবহার বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে যাচ্ছে।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এদেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরো সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here