হতাশা পেছনে ফেলে আরও টেকসই হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে মেরিটাইম খাতে

প্রিয় পাঠক, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বন্দরবার্তা অতিক্রম করল সাফল্যমণ্ডিত ছয় বছর। এই পথচলায় বাংলা ভাষায় মেরিটাইমচর্চায় একক ও অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছে বন্দরবার্তা। ছয় বছর ধরে নিয়মিত বন্দরবার্তার প্রকাশ এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমই বটে। মেরিটাইম সেক্টর ও বন্দরের অংশীজনদের সার্বিক কর্মকা-, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব উদ্ভাবনী কৌশল-পরিকল্পনা ও উত্তম চর্চাগুলো বস্তুনিষ্ঠতার সাথে তুলে আনছে বন্দরবার্তা। দেশের মেরিটাইম খাতকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রকাশনার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা নিঃসন্দেহে গর্বের। এই শুভক্ষণে বন্দরবার্তা পরিবারের সকলকে জানাই অভিনন্দন।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আরও একটি নতুন বছরে পা দিল বিশ্ব। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল নতুন উদ্যমে। কিন্তু এই অতিমারির তা-ব যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না, যার ফলে অর্থনৈতিক উত্তরণ নিয়ে একেবারে শঙ্কামুক্ত হওয়া যাচ্ছে না এখন পর্যন্ত। সমুদ্রশিল্পেও করোনা ক্রান্তির প্রভাব প্রকট। তবে প্রতিকূলতার মাঝেও এক মুহূর্ত থেমে থাকেনি বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরসমূহ বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দর সচল রেখেছেন এর নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। একই সাথে থেমে থাকেনি বন্দরবার্তাও। এই কঠিন সময়েও আমাদের চেষ্টা ছিল বন্দর ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে মেরিটাইম-সংশ্লিষ্ট সবাইকে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবগত করা। আগামীতেও বন্দরবার্তা এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেÑসপ্তম বছরে পদার্পণের শুভক্ষণে এটাই আমাদের ব্রত।

ঠিক এই সময়ে বিরাট এক রূপান্তরের মুখে দাঁড়িয়ে বৈশ্বিক নৌপরিবহন শিল্প। বছরজুড়েই করোনাভাইরাস নিয়ে অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক ছিল নৌপরিবহন শিল্পে। যদিও নৌপরিবহন শিল্পে নানা পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। বেশকিছু বিধি এবং নীতিমালাতেও পরিবর্তন আসে বছরটিতে। করোনা অতিমারি ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূরাজনীতি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধিগ্রহণ-একীভূতকরণের মতো আরও বেশকিছু কারণেও ২০২১ সালে বদলে গেছে বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি। তারপরও থেমে থাকেনি, হতাশা পেছনে ফেলে আরও টেকসই শিল্প খাতে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেই প্রচেষ্টার ফলেই করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে ওঠার লক্ষণ দেখা গেছে মেরিটাইম-সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে। তবে বছরের শেষ দিকে এসে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন চোখ রাঙাচ্ছে সারা বিশ^কে।

২০২১ সালে সমুদ্র পরিবহনে কনটেইনার চাহিদায় যে লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, তা আগে কখনো দেখেনি বিশ্ব। এই চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, দেশে দেশে কনটেইনারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কনটেইনারের বুকিং পেতে সরবরাহকারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই বাড়তি চাহিদার কারণে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে গেছে বহুগুণ। গত বছরটা উপমহাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য সময়টা বেশ ভালোই গেছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এ শিল্প বেশ ভালোভাবেই প্রত্যাবর্তন করেছে। টানা তৃতীয়বারের মতো এ শিল্পে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে বিশে^ যত জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশে হিস্যা রয়েছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান।

এই প্রতিকূল সময়েও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে দীর্ঘমেয়াদের বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্রতী রয়েছে সরকার। বন্দর ও এর হিন্টারল্যান্ড-কেন্দ্রিক অবকাঠামো এবং পতেঙ্গা টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে গেছে দ্রুতগতিতে।

প্রিয় পাঠক, আমাদের মেরিটাইমচর্চা সমৃদ্ধ হোক আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে। নতুন বছরে বন্দরবার্তার পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ছয় বছরের পথপরিক্রমায় সাথে থাকার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here