দালিয়ান বন্দর

চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের লিয়াওডং উপদ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে দালিয়ান পোর্টের অবস্থান। চীনের উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ বরফমুক্ত বন্দর এটি। ১৮৯৯ সালে যাত্রা করা দালিয়ান পোর্ট চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বহুমুখী বন্দর, যেখান থেকে এশিয়ার উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও প্যাসিফিক রিমের দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে চীনের স্বর্ণদ্বার হিসেবে কাজ করে এই বন্দর।

চীনের মূল ভূখণ্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম কনটেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হলো এই দালিয়ান পোর্ট। বন্দরটিতে প্রথম কনটেইনারবাহী জাহাজ প্রবেশ করে ১৯৭২ সালে। এর মাধ্যমে চীনের প্রথম কনটেইনার রুটের যাত্রা হয়। ১৯৭৩ সালে ২ কোটি ১৫ লাখ টন কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল দালিয়ান পোর্ট।

দালিয়ান পোর্ট কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলো-দালিয়ানগ্যাং, দালিয়ানওয়ান, জিয়াংলুজিয়াও, নিয়ানইউয়ান, গানজিনজি, হেইজুইজি, সিয়েরগোউ ও দায়াওয়ান পোর্ট এরিয়া। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশ ও অঞ্চলের তিন শতাধিক বন্দরের সঙ্গে শিপিং লিংক রয়েছে দালিয়ানের। এই বন্দর দিয়ে ৬৮টি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে কনটেইনার পরিবহন করা হয়। প্রতি বছর অন্তত ১০ কোটি টন কার্গো হ্যান্ডলিং করে দালিয়ান পোর্ট।

২০১৬ সাল পর্যন্ত দালিয়ান বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। বন্দরের সাতটি কনটেইনার বার্থের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করত দালিয়ান কনটেইনার টার্মিনাল (ডিসিটি)। দালিয়ান পোর্ট কনটেইনার টার্মিনাল (ডিপিসিটি) নিয়ন্ত্রণ করত পাঁচটি কনটেইনার বার্থের। আর দুটি বার্থ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনাল। তবে ২০১৬ সালে চীন সরকার দালিয়ান বন্দরের কার্যক্রম সমন্বিত ব্যবস্থাপনার অধীনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৭ সালের আগস্টে দালিয়ানের বার্থগুলো পরিচালনাকারী তিনটি সংস্থাকে একীভূত করে ডিসিটির আওতায় নিয়ে আসা হয়। আগের তিনটি সংস্থায় জাপানের নিপ্পন ইউসেন, সিঙ্গাপুরের দালিয়ান পোর্ট ইনভেস্টমেন্ট, চীনের পিএসএসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ছিল। পরবর্তী সময়ে দালিয়ান বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান দালিয়ান পোর্ট করপোরেশন, যা পরে নাম পরিবর্তন করে হয় লিয়াওনিং পোর্ট কোম্পানি। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন চায়না মারচেন্টস গ্রুপ লিয়াওনিং পোর্ট কোম্পানির মূল মালিক।

দালিয়ান পোর্টের অধীনে থাকা মোট জলসীমা ৩৪৬ বর্গকিলোমিটার। স্থলসীমা প্রায় ১৫ বর্গকিলোমিটার। বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬০ কিলোমিটার বিশেষায়িত রেলওয়েল লাইন রয়েছে। ওয়্যারহাউস রয়েছে ৩০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে। ১ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে স্ট্যাকিং ইয়ার্ড। পণ্য লোডিং ও খালাসের জন্য রয়েছে এক হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। বর্তমানে দালিয়ান বন্দরে রয়েছে ৮০টি আধুনিক বার্থ। এর মধ্যে ৩৮টি গভীর পানির বার্থ, যেখানে ১০ হাজারের বেশি ডেডওয়েট টনের জাহাজ ভিড়তে সক্ষম।

১৯৯৫ সালে দালিয়ান বন্দরে ৬ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টন। ২০১৮ সালে ৯৭ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে দালিয়ান। সে বছর বিশ্বের বৃহৎ কনটেইনার বন্দরের তালিকায় ১৬তম স্থান দখল করে দালিয়ান।

কোভিড-১৯ মহামারি দালিয়ান বন্দরের কার্যক্রমে বেশ ভালোভাবেই আঘাত হানে। ২০২০ সালে চীনের যে কয়টি বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ধস নেমেছিল, দালিয়ান তার একটি। ২০১৯ সালের তুলনায় সে বছর বন্দরটির কার্গো হ্যান্ডেলিং কমেছিল ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ।

অবশ্য এই ধসের পেছনে চীনের কয়লা আমদানি সীমিত রাখার নীতিও দায়ী। দেশটির কয়লা আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দালিয়ান বন্দর। তবে আগের অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে চীন সরকার ২০১৯ সালে কয়লা আমদানি সীমিত করে দেয়। এর ফলে ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে দালিয়ান বন্দরে কয়লা আমদানি কমে যায়। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার মোট কয়লা রপ্তানির ১ দশমিক ৮ শতাংশ দালিয়ান বন্দর দিয়ে চীনে প্রবেশ করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here