বাংলাদেশ-ইউরোপ সরাসরি পণ্যযাত্রা দেশের সমুদ্র পরিবহনে নবযুগ

৯৫২ একক কনটেইনার তৈরি পোশাক নিয়ে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইতালি গেছে এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজ। স্বল্প পরিসরে হলেও এই সেবা বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহন খাতে নতুন যুগের সূচনা করল। এর মাধ্যমে সমুদ্র বাণিজ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে একধাপ এগিয়ে গেল দেশের শিপিং খাত।

স্বাধীনতার পাঁচ দশকের মাথায় অনন্য এক ঘটনার সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। কনটেইনার বাণিজ্যে সরাসরি ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হলো অর্থনৈতিক উত্তরণের ট্রানজিশনাল সময় অতিক্রমকারী এই দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পর বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে যখন সবাই উদ্বিগ্ন, তখন এই ঐতিহাসিক যাত্রা নিশ্চিতভাবেই কিছুটা হলেও প্রশান্তির বাতাস বয়ে এনেছে।

ইউরোপ বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত এক রপ্তানি বাজার। সেখানে আমাদের অর্জনের পাল্লা বেশি ভারী। সুতরাং এই বাজারে আমরা নিজেদের অবস্থান যত বেশি সুসংহত করতে পারব, আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি তত বেশি মজবুত হবে।

পরমুখাপেক্ষী পরিবহন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রার জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। সমুদ্র বাণিজ্যেও একই কথা প্রযোজ্য। ট্রান্সশিপমেন্ট সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কমিয়ে দেয় বটে। তবে কখনো কখনো তা তাৎক্ষণিক বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না-ও হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় পণ্য পরিবহন মাঝেমধ্যে ভোক্তাচাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়। আবার কখনো কখনো খরচও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা।

এসব প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ইউরোপে সরাসরি কনটেইনার পাঠানোর ঘটনা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ইতিহাসের পাতায় বিশেষ এক অধ্যায় যোগ করল। আপাতত একটি দেশ দিয়ে শুরু হলো। শিগগির এই সেবা ইউরোপের অন্যান্য দেশ, এমনকি ইউরোপের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য বাজারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে-এমন আশা করাই যায়।

কনটেইনারের সরাসরি ইউরোপ যাত্রা

সুলভ শ্রমের সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে হলে বিদেশি ক্রেতাদের হাতে দ্রুততম সময়ে পণ্য তুলে দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন লম্বা দূরত্বে সরাসরি জাহাজ সেবা। করোনার সময়ে ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া এবং ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোয় জটের কারণে পণ্য পরিবহনে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা স্বল্প পরিসরে হলেও সেই সুযোগ করে দিয়েছে। সম্প্রতি ৯৫২ টিইইউ কনটেইনার দিয়ে সরাসরি পরিবহনসেবা চালু হয়েছে। এর ফলে ইউরোপীয় ক্রেতাদের হাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে পণ্য তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ইতালি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়। প্রথম যাত্রায় ইতালি থেকে খালি কনটেইনার আনা হয়। পরীক্ষামূলক চলাচল সফল হওয়ায় এরপর শুরু হয় রপ্তানি পণ্য পরিবহন। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম থেকে ইতালির পথে রওনা দেয় এমভি সোঙ্গা চিতা নামের জাহাজ।

১৯৭৭ সালে কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর এটাই কোনো কনটেইনারবাহী জাহাজের প্রথম ইউরোপের পথে সরাসরি যাত্রা। সে হিসেবে কনটেইনার পরিবহন শুরুর ৪৫ বছর পর ইউরোপের কোনো বন্দরে সরাসরি গেছে এই জাহাজটি। সোঙ্গা চিতায় করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পাঠানো হয় ১২ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার দূরের দেশ ইতালিতে। এমভি সোঙ্গা চিতা কর্ণফুলী ছেড়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরের সামনে দিয়ে গেছে। এরপর আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, এডেন উপসাগর, লোহিত সাগর, সুয়েজ খাল ও ভূমধ্যসাগর হয়ে পৌঁছেছে ইতালির রেভেনা বন্দরে।

কেন এই উদ্যোগ

ছোট জাহাজে দীর্ঘ পথে কনটেইনার পণ্য পরিবহনের এই যাত্রা অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঝুঁকি নিয়েছে ইতালির পোশাক ক্রেতারা। বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে হলে প্রথমে তাদের চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরে নিতে হতো। চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলংকার বন্দর ঘুরে ইতালিতে যেতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪ থেকে ২৮ দিন। সিঙ্গাপুর বা শ্রীলংকায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি। তবে চট্টগ্রাম-ইতালি সরাসরি জাহাজসেবা বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পণ্য রপ্তানির এই সময় কমিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে ইতালিতে পণ্য পাঠাতে ভিয়েতনামের চেয়ে অন্তত এক-দুই সপ্তাহ কম সময় লাগবে।

করোনা মহামারির সময়ে এই সেবাটি চালুর গুরুত্ব আরও বেশি অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের জটের সময়ে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে কয়েকদিন পড়ে থাকতে হয়েছে ইউরোপগামী তৈরি পোশাকভর্তি কনটেইনারগুলোকে। বড় জাহাজে কখন কনটেইনার তোলা যাবে, তার নিশ্চয়তাও ছিল না। কারণ ভিয়েতনাম ও চীন থেকে ছেড়ে আসা জাহাজে কনটেইনার পরিবহনের জন্য ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। ভাড়াও বেড়ে দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি।

বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাররা বাংলাদেশে বেসরকারি ডিপোগুলোয় পণ্য বুঝে নেয়। এরপর ক্রেতাদের খরচেই নেওয়া হয় তাদের দেশে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে ইতালি পণ্য নিতে ক্রেতাদের খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছিল।

ইতালির ক্রেতারা যেহেতু চট্টগ্রাম থেকে নিজেদের খরচে পণ্য নিচ্ছেন, তাই মাথাব্যথাও ছিল তাদের বেশি। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এমন দুর্ভোগের পর ইতালির পোশাক ক্রেতাদের আহ্বানে এগিয়ে আসে তাদের দেশেরই ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানি রিফ লাইন। তারা কনটেইনারবাহী পণ্য সরাসরি নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অনুমোদন ও সহায়তা চায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রক্রিয়াটি শুরুর অনুমোদন দেন এবং জাহাজটিকে সব ধরনের বন্দর সুবিধায় অগ্রাধিকার প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপরই রিফ লাইনের সহযোগী কোম্পানি ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন সরাসরি এই জাহাজ সেবা চালু করে।

কেবল একবারের যাত্রাতেই যে এই সেবা থেমে যাবে, তা নয়। রিফ লাইনের বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা বলছেন, জাহাজটি ইতালির রেভেনা বন্দরে কনটেইনার নামিয়ে আবার রপ্তানি পণ্য নিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশে রপ্তানি খাতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেবে। কারণ ইতালির ক্রেতারা এখন ৩০ শতাংশ কম খরচ ও এক-দুই সপ্তাহ কম সময়ে পণ্য হাতে পাবেন।

বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো হয়ে ইউরোপে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া লাগছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলার। নতুন চালু হওয়া সরাসরি জাহাজসেবায় খরচ হচ্ছে ১০ হাজার ডলার।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

একটা সময় ছিল, যখন ছোট জাহাজে করে অল্প সংখ্যক পণ্য নিয়ে বেশি দূরত্বের পথ পাড়ি দেওয়ার চেয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানোই বেশি লাভজনক ছিল। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিই অনুসরণ করা হতো। তবে জাহাজ-সংকট, ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর পণ্যজটের কারণে এখন ছোট জাহাজে সরাসরি ইতালিতে কনটেইনার পণ্য পরিবহনকে লাভজনক বিবেচনা করা হচ্ছে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া কমে আগের মতো কনটেইনারপ্রতি (৪০ ফুট) আড়াই থেকে তিন হাজার ডলারে নেমে এলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। তবে সমুদ্রপথের ভাড়া সহসাই স্বাভাবিক হচ্ছে না, সে সম্পর্কে আভাস দিয়েছে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

কিন্তু ফ্রেইট রেটের এই চাঙ্গাভাব তো আর সবসময় থাকবে না। একসময়ে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে। তখন কি ইউরোপ ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল থাকবে না? খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি ধরে রাখতে হলে জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং আরও বড় জাহাজ নামাতে হবে। নতুন রুট জনপ্রিয়তা পেলে অনেক শীর্ষস্থানীয় শিপিং লাইনই এগিয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে সরাসরি বড় জাহাজে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হবে। সেজন্য আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে ফিডার জাহাজে সরাসরি কনটেইনার পরিবহনসেবা চালু রাখা গেলে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

ইতালি দিয়ে শুরু, লক্ষ্য পুরো ইউরোপ

বাংলাদেশের সপ্তম শীর্ষ রপ্তানির গন্তব্য ইতালি। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয় মোট ১৩০ কোটি ডলারের পণ্য, যার ৯৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। একই সময়ে ইতালি থেকে আমদানি হয় ৪৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের পণ্য। এর অর্ধেক মূলধনি যন্ত্রপাতি।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করা হয় ইউরোপের বাজারে। আর এই রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে তৈরি পোশাক (মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ)। এর বাইরে চামড়া, পাট ও চা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানি হয় ইউরোপে। গত অর্থবছরে ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি। এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া মোট ৭ লাখ ২৯ হাজার একক কনটেইনারের মধ্যে ৩ লাখ একক কনটেইনার নেওয়া হয়েছে ইউরোপে।

ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেখানে বাংলাদেশের বড় অংকের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ২৪৪ কোটি ডলার। এ সময়ে ১ হাজার ৪৮৪ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ ইইউ থেকে আমদানি করেছে মাত্র ২৪০ কোটি ডলার। এই যে পার্থক্য, সেটি বাংলাদেশের জন্যই কল্যাণকর। এই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমান যুগে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যই পরিবহন হয় কনটেইনারে করে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য পরিবহনেরও প্রধান মাধ্যম এটি। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে ইউরোপে কনটেইনার পরিবহন সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি কনটেইনার শিপিং সার্ভিস চালু করা গেলে বাণিজ্যে বড় অগ্রগতি অর্জন করবে বাংলাদেশ। ইতালি দিয়ে সেই যাত্রার সূচনা হলো। এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সরাসরি কনটেইনার পরিবহনসেবা চালু করা সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে।

ইতিহাস কথা কয়

ইউরোপের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলার বাণিজ্যিক সংযোগের ইতিহাস বেশ পুরনো। বহু আগে থেকেই এই দুই অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য বাণিজ্য হয়ে আসছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইউরোপ ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে কয়েকটি রুট ব্যবহার করা হতো। এর একটি হলো ইতালির ভেনিস থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে লোহিত সাগর হয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলের বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) পর্যন্ত। উল্লেখ্য, সে সময় সুয়েজ খাল না থাকায় এ পথে সরাসরি জাহাজ চলাচল করতে পারত না।

আরেকটি পথ ছিল ইতালির জেনোয়া বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে কনস্ট্যান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) এবং সেখান থেকে কৃষ্ণসাগর, তাইগ্রিস-ইউফ্রেতিস (দজলা-ফোরাত) নদী ও পারস্য উপসাগর হয়ে ভারতীয় উপকূল পর্যন্ত। কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে আরেকটি পথে ভারতে আসা যেত। সেটি হলো কৃষ্ণসাগর-কাস্পিয়ান সাগর-আমু দরিয়া নদী-সিন্ধু নদী রুট।

১৪৫৩ সালে তুর্কিরা কনস্ট্যান্টিনোপল পূর্ব-ভূমধ্যসাগর উপকূল দখল করে নিলে প্রাচীন বাণিজ্যপথগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন ইউরোপের সঙ্গে ভারতীয় মহাদেশের সংযোগ ধরে রাখার জন্য বিকল্প পথ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যার ফল হলো ভাস্কো দা গামার আবিষ্কৃত পথ। পর্তুগালের লিসবন বন্দর থেকে এই পথটি আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে দক্ষিণ ভারতের কালিকাট বন্দরে এসে ঠেকেছে। কিন্তু এই রুটে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ জলপথ পাড়ি দিতে হতো জাহাজগুলোকে। পরে এই ঘুরাপথের সমাধান এনে দেয় আজ থেকে দেড়শ বছর আগে খননকৃত সুয়েজ খাল।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে যখন ইউরোপ ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল করেছে, তখন আধুনিক যুগে এটি কঠিন ও অসম্ভব কোনো কাজ নয়। শুধু এর জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা ও এটি অধিক লাভজনক হবে কিনা, সেই সম্ভাব্যতা যাচাই। এক্ষেত্রে লাভের বিষয়টি কেবল তাৎক্ষণিক সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে চলবে না। বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই বাজার নিশ্চিত করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এখনই

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে। বর্তমানে দেশের ৯৭ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভরিথিং বাট আর্মস স্কিমের (ইবিএ) আওতায় অগ্রাধিকারমূলক জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে কিনা, না থাকলে বাংলাদেশকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে, তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশ সরকার ইইউর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সাময়িক সমাধান নিশ্চিত করেছে। উত্তরণের পরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা অব্যাহত রাখতে এরই মধ্যে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় জোটটি।

এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা সুখবর। দেশের উত্তরণ-পরবর্তী বাণিজ্যকে মসৃণ রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এই মেয়াদও শেষ হয়ে গেলে তখন কী হবে? তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।

ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের ঘাটতি শিল্পোৎপাদনমুখী বাণিজ্যের জন্য বড় এক প্রতিবন্ধকতা। এর কারণে প্রতিযোগিতামূলক বৈদেশিক বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়তে হয়। আশার কথা হলো, বাংলাদেশ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের এই সংকট থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। এই খাতে বৈশি^ক সরবরাহকারীর তালিকায় বাংলাদেশ বর্তমানে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে নিজেদের অবস্থান আরও উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই।

শুধু পণ্য উৎপাদন করলেই তো আর চলবে না, সেগুলো ক্রেতাদের হাতে সময়মতো পৌঁছে দিতে না পারলেও প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে হবে। যখন অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা থাকবে না, তখন এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে ইউরোপীয় ক্রেতারা সোর্সিংয়ের জন্য অন্য দেশকে বেছে নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

প্রতিযোগীর প্রসঙ্গে বলতে হয়, তৈরি পোশাক খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশকে যে দেশটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, সেটি হলো ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ এখন যেমন জিএসপির আওতায় ইইউতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে, তেমনই ভিয়েতনাম ২০২০ সালের গোড়ার দিকে স্বাক্ষরিত ইভিএফটিএ চুক্তির আওতায় একই ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। ভিয়েতনাম-ইইউ চুক্তির মেয়াদ ১০ বছরের। অর্থাৎ ২০২৯ সালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা যখন শেষ হবে, তারপরও এক বছর ইইউতে পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা পাবে ভিয়েতনাম।

ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকশিল্পের ইতিহাস আজকের নয়। ১৯৫৮ সালের দিকে উত্তর ভিয়েতনামে এ শিল্পের উত্থান ঘটে। দক্ষিণ ভিয়েতনামে এটি বিকাশ লাভ করে ১৯৭০ সালে। বর্তমানে তৈরি পোশাকে বিশে^র পাঁচ বৃহত্তম রপ্তানিকারকের একটি ভিয়েতনাম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ-২০১৯’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গড় হিসাবে এক দশক ধরে রপ্তানি আয়ে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে যেসব দেশের, তার মধ্যে প্রথমে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের অবস্থান এর পর।

করোনা মহামারি ভয়াল থাবা বসানোর আগে ২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়েছে ভিয়েতনাম। এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ সেই নয় মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম ৩২০ কোটি ডলারের পোশাক বেশি রপ্তানি করেছে।

তৈরি পোশাক খাতে ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা অনুধাবনের জন্য একটু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দিকে নজর দেওয়া যাক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই বড় একটি বাজার। তবে সেখানে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছি আমরা। মার্কিন বাজারের দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় একটি বাজার হয়ে উঠতে পারে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের (ইইইউ) সদস্যভুক্ত পাঁচ দেশ

নজর দিতে হবে অন্যান্য বাজারেও

বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। এরই অংশ হিসেবে ইউরেশিয়ার বাজারের দিকে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের (ইইসি) সঙ্গে বাংলাদেশ একটি সহযোগিতা চুক্তি করেছে।

পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তানের সমন্বয়ে গঠিত ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইইইউ)। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আদলে গড়া এই ইইইউর সদস্য দেশগুলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। ইইইউভুক্ত এই পাঁচ দেশ একই সঙ্গে কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটসের (সিআইএস) সদস্য। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যে ১১টি দেশ হয়, এগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় সিআইএস।

ইইইউর আওতায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কোনো কাস্টমস সীমান্ত নেই। ফলে বাধাহীনভাবে শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহন করা যায়। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ইইইউর সব সদস্য দেশ একই শুল্কহার ও অভিন্ন বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করে থাকে।

ইইইউ বাংলাদেশের জন্য উদীয়মান এক বাজারে পরিণত হতে পারে। মোট ২ কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকার এই পাঁচ দেশে ১৮ কোটি ২৭ লাখ মানুষ বাস করে। এ অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫ লাখ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ২৭ হাজার মার্কিন ডলার। বিশে^র চাষযোগ্য জমির ১৪ শতাংশ এ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। গম, তুলা ও ভুট্টা চাষ এবং ইউরিয়া সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ও রাসায়নিক পণ্য রপ্তানি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তির অন্যতম উৎস।

ইইইউ দেশগুলোয়, বিশেষ করে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, আলু ও সবজি রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ায় তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ি, আলু রপ্তানি হলেও বাজার সম্ভাবনা অনুযায়ী এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।

রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশ পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা চেয়ে আসছে বহু বছর। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় এবং রাশিয়া ইইইউর আওতায় গঠিত কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এককভাবে বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিতে পারছিল না। তবে সম্প্রতি ইইসির সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির ফলে শুধু রাশিয়া নয়, ইইইউর সব সদস্য দেশেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই চুক্তি বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ক্রেতা দেশগুলোর কাছে স্বল্পমূল্যে এবং কম সময়ে জাহাজযোগে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আরও বিকশিত হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কৌশল হতে পারে এটি

ইউরেশিয়ার এই বাজারটি বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় একটি রপ্তানি বাজার। সেখানে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা অবশ্যই উন্নত করা দরকার। এই অঞ্চলে সরাসরি কনটেইনার শিপিং চালু করা যায় কিনা, সেই সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য উদীয়মান নয়, বরং প্রতিষ্ঠিত একটি বাজার। কিন্তু দেশটির সঙ্গে আমাদের সমুদ্রপথে সরাসরি সংযোগ নেই। এমনিতেই মার্কিন বাজারে রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাবাজার এখন বেশ চাঙ্গা। করোনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দেশের খুচরা বাজারে এখন বিক্রি আকাশচুম্বী। ভোক্তাচাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রিটেইলাররা আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছে। লকডাউনও তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতে হঠাৎ করেই পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র পণ্যসংকটে ভুগছে। তৈরি পোশাক ক্রেতারা প্রচুর ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। বাংলাদেশ এই সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারে।

কনটেইনার ও জাহাজ-সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কনটেইনার পাঠাতে এখন অতিরিক্ত সময় ও বাড়তি ভাড়া লেগে যাচ্ছে। সরাসরি কনটেইনার সার্ভিস এক্ষেত্রে উত্তম বিকল্প হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপাইন এই গুরুত্ব অনুধাবন করে যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের জাহাজ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে এমন উদ্যোগ নিতে পারে।

ক্রেতা দেশগুলোর কাছে স্বল্পমূল্যে এবং কম সময়ে জাহাজযোগে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আরও বিকশিত হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কৌশল হতে পারে এটি

উপসংহার

মাত্রই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করলাম আমরা। এমনই এক আনন্দময় মুহূর্তে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল দেশের সমুদ্র পরিবহন খাত। দেশের সার্বভৌমত্বের মুকুটে যোগ হলো নতুন এক পালক। পরমুখাপেক্ষী সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হওয়া তো সার্বভৌমত্ব ও স্বনির্ভরতারই আরেক রূপ।

একাত্তরের যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোলমডেল। সেই উন্নয়নে আরও গতি আনতে এমন একটি উদ্যোগ খুব জরুরি ছিল। ভবিষ্যতে এই সেবা অব্যাহত রাখা এবং অন্য অঞ্চলগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই চিন্তা করতে হবে। কারণ উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জন্য টেকসই পরিকল্পনা সাজানোর এখনই সেরা সময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here