মেরিন স্যান্ডগ্লাস

মেরিন স্যান্ডগ্লাস হলো খুবই সাধারণ নকশার সময় পরিমাপক যন্ত্র। সাধারণ আওয়ারগ্লাস হিসেবে আমরা যাকে চিনি, তারই একটি সংস্করণ এটি। চতুর্দশ শতাব্দী থেকে সমুদ্র যাত্রায় এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়। তবে ইতিহাসবিদদের অনেকের দাবি, সাধারণ আওয়ারগ্লাসের মতো মেরিন স্যান্ডগ্লাসেরও জন্ম আরও প্রাচীনকালে।

স্যান্ডগ্লাস ব্যবহার হতো সমুদ্রে সময় পরিমাপের কাজে। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট পথে একাধিক যাত্রায় সময়ের সামান্য পার্থক্য (যেমন ৩০ মিনিট) পরিমাপের কাজেও এর ব্যবহার ছিল। সমুদ্রযাত্রায় জাহাজের গতিবেগ পরিমাপের কাজে চিপ লগের পাশাপাশি ছোট আকারের মেরিন স্যান্ডগ্লাসও ব্যবহার হতো।

শুরুর দিকে দুটি গ্লাস বোতল নিয়ে তৈরি হতো একটি মেরিন স্যান্ডগ্লাস। এই বোতল দুটি একটি অপরটির ওপর উল্টানোভাবে বসানো থাকত। একটি ছোট টিউব দিয়ে বোতল দুটি পরস্পর সংযুক্ত থাকত। পরবর্তী সময়ে গ্লাসব্লোয়িং প্রযুক্তি আবিষ্কারের পর একটি কাচের বোতলের মাঝবরাবর সরু করে দুটি চেম্বার তৈরি করা হতো। মেরিন স্যান্ডগ্লাসের ওপরের চেম্বারটি বালি অথবা উপযুক্ত অন্য কোনো উপাদান দিয়ে পূর্ণ করা হতো। খেয়াল রাখা হতো আর্দ্রতা যেন এসব উপাদানের স্বাভাবিক পতনে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে।

ওপরের চেম্বারে ভর্তি করা এই বালি বা অন্য উপাদান মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ধীর ও সুষম গতিতে নিচের চেম্বারে নেমে আসত। এভাবে ওপরের চেম্বার খালি হতে একটি নির্দিষ্ট সময় লাগত। ওপরের চেম্বার খালি হয়ে গেলে স্যান্ডগ্লাসটি উল্টিয়ে পুনরায় সময় গণনা শুরু হতো।

চতুর্দশ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে মেরিন নেভিগেশনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হলেও মেরিন স্যান্ডগ্লাস কিন্তু নির্ভুল সময় পরিমাপক যন্ত্র ছিল না। নকশা ও আবহাওয়াগত বিভিন্ন প্রভাবকের কারণে কখনো কখনো এই যন্ত্রের বালি বা অন্য উপাদান নিচের চেম্বারে নেমে আসার ক্ষেত্রে সময়ের তারতম্য দেখা দিত। ফলে রেকর্ড করা সময়েও সামান্য হেরফের দেখা যেত।

ত্রুটি যা-ই থাকুক না কেন, মেরিন স্যান্ডগ্লাসের প্রচলন ছিল কয়েকশ বছর ধরে। উনিশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত মেরিন নেভিগেশনে এর বহুল ব্যবহার দেখা গেছে। এরপর যান্ত্রিক ঘড়ি ও নেভিগেশনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির আবির্ভাবের পর মেরিন স্যান্ডগ্লাসের কদর ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here