গ্রেট পোর্ট অব সেন্ট পিটার্সবার্গ

রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অবস্থিত এই বন্দর রাশিয়ার অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর। এর জলসীমা ১৬৪ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার। ম্যুরিং লাইন ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ। বন্দরের গভীরতম অ্যাংকরেজে পানির গভীরতা ২৫ মিটার।

২০১১ সাল থেকে বন্দরটি পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পোর্ট অথরিটি অব দ্য গ্রেট পোর্ট অব সেন্ট পিটার্সবার্গ। কেন্দ্র সরকার নিয়ন্ত্রিত এই সংস্থা বন্দর এলাকা এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল তদারকি করে।

সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দরের গোড়াপত্তন হয় প্রায় দেড়শ বছর আগে। ১৮৬৯ সালে রুশ নৌ-কর্মকর্তা, গণিতবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা নিকোলায় পুতিলোভ বন্দরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজের ব্যবসার প্রসার। ওবুখোভ ফ্যাক্টরির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পুতিলোভ ফ্যাক্টরির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য অন্যত্র পরিবহনের সুবিধার্থে বন্দর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন পুতিলোভ।

১৮৭৪ সালের ১৩ জুন জার সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ‘অন দ্য টেম্পোরারি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য সেন্ট পিটার্সবার্গ সি’ প্রভিশন অনুমোদন করেন। সেই বছরের ২১ আগস্ট বন্দর চ্যানেলের জেনারেল ডিরেকশনের অনুমোদন দেন তিনি। ১৮৮৫ সালের ১৫ মে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে নতুন এক মেরিটাইম ট্রেড পোর্টের যাত্রা হয়।

সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দরের সেন্ট্রাল ইউনিটের অবস্থান নেভা রিভার ডেল্টার দ্বীপগুলোয় ও এর আশপাশে। এই ডেল্টার অবস্থান ফিনল্যান্ড উপসাগরের পূর্ব উপকূলে, যেটি আবার বাল্টিক সাগরের অংশ। এই পোর্ট কমপ্লেক্সে রয়েছে বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য বার্থ, বন্য ও মৎস্যসম্পদ পরিবহনের জন্য বন্দর, নৌপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর, একটি জ্বালানি টার্মিনাল, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ সংস্কারের জন্য ইয়ার্ড, একটি সি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, একটি রিভার প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ইত্যাদি। এই সার্বিক বন্দর ব্যবস্থা বিভিন্ন চ্যানেল ও ফেয়ারওয়ের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত।

সমুদ্রবাণিজ্যের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বন্দরটিতে রয়েছে প্রায় ২০০ বার্থ, যেগুলোর সর্বোচ্চ গভীরতা ১১ দশমিক ৯ মিটার। এর মধ্যে কনটেইনার টার্মিনালের জন্য রয়েছে ছয়টি বার্থ। এই টার্মিনালে কনটেইনার জাহাজের পাশাপাশি রো-রো ভেসেলগুলোকেও সেবা দেওয়া হয়।

সেন্ট পিটার্সবার্গ পোর্ট কমপ্লেক্সকে চারটি ডিস্ট্রিক্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয়টিতে সেবা দেয় নিউ পোর্ট রেলওয়ে স্টেশন। আর তৃতীয় ও চতুর্থ পোর্ট ডিস্ট্রিক্টকে সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে আভতোভো রেলওয়ে স্টেশন।

সেন্ট পিটার্সবার্গের পোর্ট ফ্লিটে রয়েছে সার্ভিস ও সাপোর্ট ভেসেল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাহাজকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সক্ষমতার ২০টির বেশি টাগবোট, বরফ ভেঙে চ্যানেল সচল রাখার জন্য আইসব্রেকার, পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়লে তা সংগ্রহের জন্য অয়েল হারভেস্টার, অগ্নিনির্বাপণসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য ওয়াটার ক্যানন, পাইলট বোট, রেইড বোট, ফায়ার বোট, বার্জ ইত্যাদি।

হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ও পরিমাণের বিচারে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল হলো সেন্ট পিটার্সবার্গের ফার্স্ট কনটেইনার টার্মিনাল (এফসিটি)। এর মালিকানা রয়েছে গ্লোবাল পোর্টসের কাছে। টার্মিনালটির হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১২ লাখ ৫০ হাজার টিইইউ। ২০২০ সালে এফসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ লাখ টিইইউ।

এফসিটি ছাড়াও পেট্রলস্পোর্ট টার্মিনালের পুরো মালিকানা রয়েছে গ্লোবাল পোর্টসের কাছে। এছাড়া উস্ত-লুগা কনটেইনার টার্মিনালের ৮০ শতাংশ ও মোবি ডিক টার্মিনালের ৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে তাদের হাতে। ইউসিএল হোল্ডিং পরিচালনা করে কনটেইনার টার্মিনাল সেন্ট পিটার্সবার্গ নামের টার্মিনালটি।

Facebook Notice for EU! You need to login to view and post FB Comments!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here