‘দ্রুততম সময়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতে আসতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর’

চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান গতিশীলতা ধরে রাখতে চাইলে সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং বন্দর ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সহযোগী এবং অংশীদার পক্ষের এই লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে সর্বাত্মক সহযোগিতা। বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর একসাথে পথ চলার এই প্রশংসনীয় মনোভাব নিয়ে কর্মতৎপর হয়েছেন রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্দরের সম্প্রসারণ এক অনিবার্য বাস্তবতা। কেননা, জাতীয় প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে গতিশীল বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে এর সম্প্রসারণ, ক্ষমতায়ন আর বেড়ে ওঠার বিকল্প নেই কোনো।

এসব প্রসঙ্গ ছাড়াও সরকারের রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ত্রিশ বছরের কৌশলগত মহাপরিকল্পনার আলোকে বন্দরের আধুনিকায়নে নানাবিধ কর্মকা- ও পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে উঠে এসেছে বন্দরবার্তার সঙ্গে তার এই একান্ত সাক্ষাতকারে-   

বন্দরবার্তা: বড় ধরনের পরিবর্তনের কাল পার হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। সর্বস্তরে ডিজিটাইজেশন এবং কনটেইনার ওঠানামার সাম্প্রতিক সাফল্যে প্রতিফলিত রয়েছে তার গতিশীলতা। আগামীতে একে কোথায় নিয়ে যেতে চান? আরও নির্দিষ্ট করে, বিশেষতঃ আগামী পাঁচ বছরের জন্য বন্দর ঘিরে কী ধরনের নতুন সংযোজন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?

চেয়ারম্যান: একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে কিন্তু সারাক্ষণই অবস্থান করছে চট্টগ্রাম বন্দর। একদিকে প্রতিদিনের আমদানি-রফতানির চাপ সামাল দিচ্ছে দেশের ভিতর। প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখছে। অন্যদিকে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল অন্যান্য বন্দরের সঙ্গে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মুখ্য বন্দর। এর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সমুদ্রবাহিত আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে আবশ্যক অবকাঠামো সুবিধা ও দক্ষ সেবা প্রদান করা। গত শতকের আশির দশকে উদারীকরণ নীতির কারণে বৈশ্বিক বিনিময় এবং সেবাপ্রদানের পরিধি বেড়ে গেছে দারুণভাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের ম্যানুফ্যাকচারিং অবকাঠামো আরও বড় করতে চাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্লোবাল লিংকেজ বাড়ানোর মাধ্যমে চাইছে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলতে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ছে সর্বক্ষেত্রে। স্বভাবতই চট্টগ্রাম বন্দরও চাইছে দ্রুততম সময়ে প্রতিযোগিতার প্রথম কাতারে অবস্থান করে নিতে।

এ ধরনের একটি বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, এ মুহূর্তে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মূলত চার থেকে পাঁচটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হচ্ছে-

১. জেটির সংখ্যা বাড়ানো। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), কর্ণফুলি কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি), লালদিয়া মাল্টিপারপাজ টার্মিনাল এবং বে টার্মিনালে নতুন সার্ভিস জেটি নির্মাণ। পাশাপাশি বিদ্যমান জেটিগুলোরও সংস্কার করা হচ্ছে।          

২. ইয়ার্ড এলাকা সম্প্রসারণ। পিসিটিতে একটি ওভারফ্লো ইয়ার্ড এবং কর্ণফুলি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) একটি ইয়ার্ড নির্মাণ করছি আমরা। এছাড়া, আরও একটি অফডক ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে বে টার্মিনালে।

৩. বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন। যেমন, শিপ-টু-শোর (এসটিএস) গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার (এসসি), ফর্কলিফট ইত্যাদি। এছাড়া সার্ভিস ভেসেল, যেমন, হাইপাওয়ার টাগবোট, পাইলট বোট ইত্যাদি যুক্ত হচ্ছে বন্দরে।

৪. বন্দরে জলবায়ু ঝুঁকি নিরূপণে একটি গবেষণা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

৫. একটি গ্রিন পোর্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে করণীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ।  

বন্দরবার্তা: প্রতিবছরই চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর পরিবহন চাপ বাড়ছে। এটি সামাল দিতে বন্দর সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রথম ত্রিশ বছর মেয়াদী কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করা হয়েছে চবক-এর নিজেদের উদ্যোগে। কৌশলগত মহাপরিকল্পনা অনুসারে বন্দর কার্যক্রমের দক্ষতা ত্বরিৎ বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

চেয়ারম্যান: এতে কোনো সন্দেহ নেই দেশের বাণিজ্যলক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের মেরিটাইম গেটওয়ের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। আমদানিকারক, রফতানিকারক আর ক্যারিয়ারগুলোর চাহিদা মেটাতে আরও তৎপর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ক্রমশঃ বেড়ে চলা জাতীয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৩ সালে ত্রিশ বছরের জন্য একটি কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করে চট্টগ্রাম বন্দর। সারাবছর, দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা, বন্দর সচল রাখার লক্ষ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্ণিত করা হয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো অবিলম্বে নিরসন করতে হবে, সেগুলো হচ্ছে-

১. ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুসারে বন্দরের আধুনিকায়ন

২. দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং প্রণোদিত একটি কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা ৩. জেটি এবং বার্থিং সুবিধার সম্প্রসারণ এবং জাহাজের টার্ন-অ্যারাউন্ড-টাইম কমিয়ে আনা      

৪. নিরাপদ নৌচলাচলের জন্য চ্যানেলের সুগমতা বজায় রাখা

৫. কার্যকর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলির ড্রেনেজ সিস্টেম-এর উন্নয়ন। একই সাথে ৯.৫ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ যাতে সহজেই চ্যানেলে ঢুকতে পারে এবং জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারে তার জন্য বিদ্যমান সুবিধার প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন

৬. দেশের অভ্যন্তরীণ এলাকার সঙ্গে লিংকেজ বাড়ানো। রেল এবং সড়ক সংযোগের পাশাপাশি নৌযোগাযোগের সূচনা ঘটানো

৭. তথ্যপ্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে সকল স্তরে বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা

৮. পরিবেশবান্ধব বন্দর পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ

বন্দরবার্তা: চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং চাহিদা তার সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ বিন্দুতে উপনীত হয়েছে। এ মুহূর্তে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন? বিরাজমান সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও কী ভাবছেন?

চেয়ারম্যান: পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং চাহিদা। যাকে সামাল দিতে হলে নতুন একটি টার্মিনাল দরকার এবং সেটিও অপারেশনাল স্তরে আসতে হবে ২০২৩ সালের আগেই। কর্তৃপক্ষের হিসাবে চাহিদা এবং জোগানের ঘাটতি সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাবে ২০৩৩ থেকে ২০৩৭ সালের মধ্যে যখন চাহিদা পৌঁছাবে বার্ষিক ২.৮ মিলিয়ন টিইইউসে। নতুন টার্মিনাল এই গ্যাপটি পূরণের জন্যই অপরিহার্য।

এসব কারণেই পতেঙ্গার সমুদ্র উপকূলে ৯০০ একর জায়গা নিয়ে বে-কনটেইনার টার্মিনাল (বিসিটি)-এর মতো বিশালায়তন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন যেসব জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে না, লেংথ ও ড্রাফট লিমিটের কারণে, সেগুলো অনায়াসে ভিড়তে পারবে সর্বাধুনিক সুযোগসুবিধা সমৃদ্ধ এই টার্মিনালে। এটি চালু হলে পরিবহন ব্যয় কমে আসবে আশাতীত পরিমাণে। তার ওপর, ন্যাচারাল ব্রেকওয়াটার সিস্টেম, গুড চ্যানেল, উন্নত সড়ক এবং রেল সংযোগের সুবিধা থাকবে বে টার্মিনালে।    

বন্দরবার্তা: ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় যোগাযোগ শুরু হয়েছে। চীন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ আঞ্চলিক প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে উপকূলীয় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার আয়োজন চলছে। উপকূলীয় পরিবহন যোগাযোগ ঠিক কী ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে বাংলাদেশের জন্য?

চেয়ারম্যান: আগামী দিনগুলোয় সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, আগামীতে সত্যিই কী পরিমাণ উপকৃত হতে যাচ্ছে দেশ- সাম্প্রতিক চালু হওয়া এই উপকূলীয় যোগাযোগ থেকে। প্রতিবেশি দেশগুলোর বন্দরের সঙ্গে আমাদের গড় দূরত্ব সাড়ে তিন শথেকে পাঁচ শমাইলের মতো। অথচ সরাসরি যোগাযোগ না থাকার কারণে এতোকাল সিঙ্গাপুর হয়ে যাতায়ত করতো জাহাজ। পাড়ি দিতে হতো দুই হাজার মাইলের ওপর সাগরপথ। এতে সময় লাগতো ১৫ থেকে ২০ দিন। অথচ এখন এতে সময় লাগবে গড়ে পাঁচ দিনের মতো। স্বাভাবিকভাবেই খরচও বেঁচে যাবে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। এদিকে নৌপথে নারায়ণগঞ্জের পানগাঁওয়ে টার্মিনাল নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য সড়ক ও রেলপথের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সাশ্রয়ী ব্যয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের সুবিধা প্রদান করা। চট্ট্রগাম বন্দরের ওপর থেকেও চাপ কমবে এর কারণে। তখন আরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ পাবে এই বন্দর। অন্যদিকে, নৌপথে পণ্য পরিবহন সূচনার কারণে মহাসড়কে যানবাহনের যাতায়ত হ্রাস পাবে। ফলে কমে আসবে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর কার্বন দূষণের মাত্রা।      

বন্দরবার্তা: বন্দর হিসাবে বিগত সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে চট্টগ্রাম। ২৫ এপ্রিল বন্দরের ১২৯ তম বন্দর দিবস। ঐতিহাসিক এই সাফল্যে আপনার কী অনুভূতি?

চেয়ারম্যান: ২৫ এপ্রিল বন্দর দিবস, চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯ তম জন্মদিন, বিষয়টি আমাদের জন্য একপ্রকার গর্বমিশ্রিত আনন্দের। দীর্ঘ একটা পথ পেরিয়ে এসেছে বন্দর। আর ঠিক এই মুহূর্তে চলছে এই বন্দরের সম্প্রসারণ, উন্নয়ন আর অগ্রগতির স্বর্ণযুগ। এখানে আমি বন্দরের ইতিহাসটা একটু বলে নিতে চাই। ব্রিটিশ-ভারতে, তৎকালীন উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রধান গেটওয়ে হিসাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠা। ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের পোর্ট কমিশনারস অ্যাক্ট ঘোষণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় প্রথমে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। অধ্যাদেশটি বাস্তবে কার্যকর হয় ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল। সেই থেকে, প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল দিনটিকে, পোর্ট ডে বা, বন্দর দিবস হিসাবে উদযাপন করে এসেছি আমরা। ওই সময় বন্দরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ছিলেন একজন মোটে কর্মকর্তা। পোর্ট অফিসার এবং কাস্টমস কালেক্টর, একহাতে দুটি কাজই করতে হতো তাকে। কোনো জেটি ছিল না সেদিনের বন্দরে। নদীর মাঝেই জাহাজ নোঙ্গর করা হতো। নৌকা কিংবা বোটে তাতে কার্গো বোঝাই, কিংবা খালাস করা হতো। এগুলোর মধ্য দিয়েই ক্রমান্বয়ে সামান্য পোতাশ্রয় থেকে সম্ভাবনাময় একটি বন্দর হিসাবে বিকশিত হতে আরম্ভ করে চট্টগ্রাম।

অতীতে নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই সময়ে সারা দুনিয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন যেমন বদলেছে, পাশাপাশি পরিবহনের চাহিদাও বেড়েছে বন্দরের। এবং বরাবর, সকল বিপত্তি কাটিয়ে পরিবর্তনের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিনিয়ত নিজেকে যোগ্য আর সমর্থ প্রমাণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অত্যন্ত গর্বের বিষয়, ২০১৫ সালে, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই, দুই মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছি আমরা। পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বর ২০১৫ অবধি চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডল করেছে ২০,২৪,০০০ টিইইউস কনটেইনার। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ। সময়ের হাত ধরে ক্রমশঃ এভাবেই বড় হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর দিবস উদযাপনের এই তাৎপর্যপূর্ণ লগ্নে আমি নিশ্চিত বন্দরের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে আগামীতেও।

বন্দরবার্তা: আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সরকার, অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞসহ সকল মহলে জোরেশোরে ব্লু ইকোনমি, বা সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সম্প্রতি বিশাল সমুদ্র এলাকার ওপর সার্বভৌম মালিকানা অর্জনকারী, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্লু ইকোনমি, বা, সমুদ্র অর্থনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনার মূল্যায়ন করুন।

চেয়ারম্যান: সহজ ভাষায়, ব্লু ইকোনমি কথাটার অর্থ হলো সমুদ্র অর্থনীতি। বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় একটি দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বিষয়টি। দেশের অসীম সমুদ্র সম্পদ, যেমন, ফিশারিজ, আকুয়াকালচার, নবায়নযোগ্য ব্লু এনার্জি, তেল, গ্যাস, সমুদ্রতলদেশে খননকাজ এবং সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যের যথাযথ সদ্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিপুল অগ্রগতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো সুবিধার আরও উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির এই সম্ভাবনার সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব। এছাড়া, রিজিওনাল হাব হয়ে ওঠার পথে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের দক্ষতাবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। জাহাজের পাশাপাশি কার্গো আর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে অনন্য প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এখন সারা দুনিয়াতেই ব্রেকবাল্কের পরিবর্তে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কনটেইনারাইজেশনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অনবদ্য মাইলফলক অতিক্রম করলাম কিছুদিন আগেই। অব্যাহত রয়েছে এই ধারা। এক কথায়, সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ে অনিবার্য পরিপূরক শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রস্তুতির মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি আমরা, প্রতিমুহূর্তেই।

বন্দরবার্তা: আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

চেয়ারম্যান: চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে থাকার জন্য বন্দরবার্তার সকল পাঠকের প্রতিও আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন সবাই।

জীবনীসংক্ষেপ:

রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন ২৯ মার্চ, ২০১৬ তারিখে। ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালের ১ জুন কমিশন লাভ করেন। বন্দরে যোগদানের আগে তিনি নৌবাহিনীর কমান্ডার বিএন ফ্লিট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১-১৯৮৫ ইতালিয়ান নেভাল একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদী ক্যাডেট, মিডশিপম্যান ও সাব-লেফটেন্যান্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা ডিফেন্স কলেজ এবং ১৯৯৭ সালে ভারতের স্টাফ কলেজ থেকে ডিফেন্স সার্ভিসেস কোর্স কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিটাইম লএনফোর্সমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে ভারত থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ কোর্স (এনডিসি) শেষ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজ-এ মাস্টার্স এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস-এ মাস্টার্স এবং পরে একই বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

রিয়ার এডমিরাল খালেদ ইকবাল দীর্ঘ চাকুরিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, ঢাকায় প্রায় তিন বছর প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কমান্ড্যান্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সব ধরনের যুদ্ধজাহাজে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কমান্ড করেছেন তিনি। নৌ-পারদর্শিতা, সাহসিকতা এবং পেশাদারি দক্ষতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি)অর্জন করেন তিনি। নৌ-সদরে বিভিন্ন সময়ে ডাইরেক্টর নেভাল ট্রেনিং অ্যান্ড ডাইরেক্টর পারসোনেল সার্ভিসেস এর মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও ২০০৬ সালে আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন তিনি। মিলিটারি অবজারভার দলের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আবিদজানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here