বার্ষিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

চট্টগ্রাম বন্দর যেমন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে তেমনি সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে পরিচালনা করে আসছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্দর পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাল ফলাফল ও সহ-পাঠ্য কার্যক্রম  চর্চার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলে অনুপ্রাণিত করতে রয়েছে পুরস্কার। আর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে শিক্ষার্থীদের নানান পরিবেশনা নিয়ে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ‘চেয়ারম্যানস্ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল ২২, ২৩ ও ২৪ মে। টানা তিনদিন তিনটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলেছে পুরো মাস জুড়ে। অনুষ্ঠান ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল উৎসাহ উদ্দীপনা আর বিদ্যালয়গুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরব উপস্থিতি এসব অনুষ্ঠানকে দিয়েছে বাড়তি মাত্রা।

সেরাদের জন্য চেয়ারম্যানস্ অ্যাওয়ার্ড

বন্দর পরিচালিত স্কুলসমূহের কৃতি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে ২০০৪ সালে ‘চেয়ারম্যানস্ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান চালু করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান একেএম শাহাদাত হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি, দাখিল ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের দেয়া হয়েছে এ পুরস্কার। গত ২৪ মে শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে বন্দর পরিচালিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৪৬ জন ছাত্রছাত্রীকে দেয়া হয় এ পুরস্কার। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাত্রছাত্রীদের হাতে সনদ ও প্রাইজমানি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) সাদেকা বেগমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য- কমডোর জুলফিকার আজিজ, জাফর আলম, কমডোর শাহীন রহমান এবং কামরুল আমিন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে ভাল ফলাফল করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পড়ালেখার বাইরে নিয়মিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে।’

এবারের চেয়ারম্যানস্ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত বন্দরের চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৪ জন, এবতেদায়ী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ জন, বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৮ জন, সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১৬ জন, এসএসসি পরীক্ষায় ২০১৫ ও ২০১৬ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৭ জন, সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২৩ জন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৫  সালের জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১৪ জন, সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩২ জন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১১ জন ও সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩১ জন এবং বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০১৫ সালের জেডিসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২ জন, সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫ জন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ জন ও সাধারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১৯ জনকে সনদ ও প্রাইজমানি প্রদান করা হয়। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেধা ও বুদ্ধিমত্তার বিচারে ৫ জন করে ১০ জন চৌকষ শিক্ষার্থীকে চেয়ারম্যানস্ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

শতাধিক ছাত্রীর অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রত্যেকটি শিশুরই একটি নিজস্ব জগৎ আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান, নাচ, খেলাধুলা ও নিজেদের ভালোলাগার বিষয়গুলো নিয়ে থাকতে চায় তারা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে উঠে না। অভিভাবকদের চাওয়া পাওয়ার ভীড়ে হারিয়ে যায় শিশুদের স্বকীয়তা। চলমান জীবনের এই বাস্তবচিত্র নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ‘লেখাপড়া’ শিরোনামের এই নাটকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিশুদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাদের স্বকীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততার উপর অভিভাবকদের গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত ২৩ মে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চমকপ্রদ এ উপস্থাপনা প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার।

নাটকের পর যাপিত জীবনের আরেক সমস্যা ‘মোবাইল ফোনের বিড়ম্বনা’ নিয়ে ব্যতিক্রমী মূকাভিনয় উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীরা। ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ গানের সাথে নৃত্যের তালে তালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর একে একে আধুনিক গান, যন্ত্রসংগীতের সুরে নৃত্য, জারিগান, ভাওয়াইয়া গান, আবৃত্তি, আধুনিক ও পাহাড়ী নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় শতাধিক ছাত্রীর এসকল পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাফিয়া খাতুন। এরপর একাডেমিক ফলাফলে মেধাস্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী, রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।

পুরস্কারে অনুপ্রাণিত হলো বালকেরাও

বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গত ২২ মে শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে উদ্যাপিত হয়েছে।

বিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রধান শিক্ষক মো. মোকতার হোসাইন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রেজাউল আবেদীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম এবং কামরুল আমিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বে নিজেকে একজন যুগোপযোগী ও চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শিক্ষা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য সনদ অর্জন নয়, মূল উদ্দেশ্য হতে হবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে একজন আত্মপ্রতিষ্ঠিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠা।’

দ্বিতীয় পর্বে অতিথিরা ৭ম-১০ম শ্রেণির বার্ষিক পরিক্ষায় শীর্ষ স্থানের ৩ জন, জেএসসি ও এসএসসি পরিক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার বিজয়ী ছাত্রদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া নৌস্কাউটে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ১০ম শ্রেণির ছাত্র আলজবি হোসেনকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। এরপর ছাত্রদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক গান, আঞ্চলিক গান, জারিগান, নাচ, আবৃত্তি এবং কৌতুক পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথি ও দর্শকদের মুগ্ধ করেন ছাত্ররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here